ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেচাকেনা ভাল হওয়ায় খুশি ব্যবসায়ীরা

ছুটির দিনে বাণিজ্য মেলায় উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

ছুটির দিনে বাণিজ্য মেলায় উপচেপড়া ভিড়

ওয়াজেদ হীরা ॥ ছুটির দিন মানে মনের আনন্দে বাধাহীনভাবে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ানো। তবে রাজধানীবাসীকে ছুটির দিনগুলো বার বার টেনে নিয়ে আসে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায়। যেখানে ক্রেতারা পাচ্ছেন পছন্দমতো পণ্য সেই সঙ্গে বিনোদন তো থাকছেই। এ কারণেই একটি ছুটির দিনও ‘মিস’ করতে চান না কেউ। মাসব্যাপী মেলা শুরু হওয়ার পর তৃতীয় শুক্রবার মানুষের ভিড় ছিল আরও বেশি। অতীতে ছুটির দিনগুলোর চেয়েও ভিড় বেশি লক্ষ্য করা গেছে। হিমেল হাওয়া আর মিষ্টি রোদে সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের আগমন শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। ছোট থেকে বৃদ্ধ সবাই মেলার দর্শনার্থী। পরিবার স্বজন বা বন্ধু নিয়ে সবাই মিলে আসেন বাণিজ্য মেলায়। ক্রেতাদের সামলাতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে অধিকাংশ স্টলের বিক্রয়কর্মীদের। বিপুল মানুষের সমাগমে বেচাকেনা ভাল হওয়ায় বেশ স্বস্তিও প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে মেলার শেষ সপ্তাহ প্রতিটি দিন ভাল বেচাকেনার প্রত্যাশাও করেন। বিশেষ করে পছন্দের কোন পণ্য নিয়ে দাম কষাকষি করতে দেখা যায়নি ক্রেতা বিক্রেতাদের। মিরপুর ১০ থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, অন্য দিন চাকরির ব্যস্ততায় আসা হয়, বাচ্চাদেরও স্কুল ছুটি নেই তাই আসা হয় না। ছুটির দিনে ভিড় বেড়ে যায় তাই সকালে বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় আসেন সামিউর রহমান। চার বন্ধুর একজন লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটেন। তিনি বলেন, সকালে এসেও টিকিটে লাইন ধরতে হয়েছে। সবাই ছুটির দিনে একটু ফ্রি থাকি তাই ভিড় হলেও আসি। এদিকে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকেট কাউন্টারগুলোতে মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। শুধু টিকেট কাটতেই নয়। প্রত্যেক গেটে মেলায় প্রবেশেও লম্বাই লাইন দেখা গেছে। অধিকাংশ সময় মানুষ যারা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র হয়ে আসেন তারা এদিন অনেকেই খেজুর বাগান থেকে হেঁটে এসেছেন। আর যারা ফায়ার সার্ভিস সংযুক্ত গেট ব্যবহার করেছেন তারাও হেঁটে এসেছেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে। ফিরতি পথেও সেই পায়ে হাঁটাই ভরসা। অতিরিক্ত মানুষ চাপ আর গাড়ির চাপে দীর্ঘ পথ হেঁটে গাড়িতে চড়তে হয়েছে। ইতোমধ্যেই মেলার অধিকাংশ দিন অতিবাহিত হওয়ার কারণে স্টলগুলোতে সুলভমূল্যে তাদের পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়াও দর্শনার্থী বেশি হওয়ার কারণে এদিন যে কোন পণ্য বিক্রেতারা এক দাম বলে দিচ্ছে ক্রেতার ভাল লাগলে নিয়েছে নয়ত অন্য স্টলের দিকে পা বাড়িয়েছে। আপন টেক্সটাইলের এক বিক্রয় প্রতিনিধি জনকণ্ঠকে জানান, অন্যান্য দিন কাস্টমার কম থাকে তাই কথা বলার সময়ও থাকে। ছুটির দিনে মানুষ বেশি কথা কম। ভাল লাগলে দামে পোষালে নেবে। এছাড়াও বেশির ভাগ পণ্যে মূল্য দেয়া আছে বলেও জানান তিনি। এদিন মেলার অধিকাংশ স্টলে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। এর মধ্যে নারীরা ঝুঁকেছেন গৃহস্থালি পণ্যের স্টলগুলোতে। তরুণীদের একাংশ জুয়েলারি স্টল ও শালের স্টলে তরুণরা ছুটেছেন পছন্দের ব্লেজার, জুতার স্টলে। মেলায় ভিড় ছিল গহনার দোকানগুলোতে। নানা মডেলের তৈরি গলার মালা, ঝুমকা, কানের দুল, ডায়মন্ড কাট, লকেট, চেন, চুড়ি, ব্রেসলেট ও দৃষ্টিনন্দন ফিঙ্গার রিংসহ রংবেরঙের জিনিসপত্র। যা দেখেতে ভিড় করছেন মেলায় আগতরা। অন্যদিকে ভিড়ের কারণে পছন্দের পণ্যগুলো কিনে দ্রুতই স্থান ত্যাগ করেছেন ক্রেতারা। এছাড়া অধিকাংশ দম্পতিকে দেখা যায় গৃহস্থালি পণ্য কিনতে। এসকল স্টলে নানা অফারে পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। ‘একটি কিনলে দশটি ফ্রি’ এই লেখাগুলো দেখে ক্রেতারাও বেশ আকৃষ্ট হয়েছে স্টলগুলোতে। মেলায় বিশেষ ভিড় ছিল সবজি কাটার স্টলগুলোর সামনে। মূলত কেনার চেয়ে দেখাই ছিল মূল আকর্ষণ। কিভাবে সুন্দরভাবে প্রতিটি পণ্য কাটছেন তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন দর্শনার্থীরা। বিদেশী প্যাভিলিয়নগুলোতে এসকল সবজি ও সালাত কাটার পণ্য নানা অফারের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। এদিন খাবারের দোকানগুলোতেও বেশ ভিড় দেখা গেছে। মেলায় আগতদের একটি অংশ উচ্চ দামের খাবার পরিহার করে হাল্কা জাতীয় খাবারের দোকানে ছুটছেন। বিশেষ করে নুডুলস ও সবজি রোলের দোকানে বেশ ভিড় ছিল। মোবাইল, ল্যাপটপ, মোটর-সাইকেলের প্যাভিলিয়নগুলো অন্যান্য দিন ফাঁকা ফাঁকা থাকলেও এদিন বেশ ভিড় ছিল। সবার উদ্দেশ্য শুধু দেখাই নয়, কেউ কেউ কিনেছেনও। এসকল প্যাভিলিয়নের সামনে সেলফির ছিল এক মহা উৎসব। দৃষ্টিনন্দিত সব প্যাভিলিয়নের সামনে এই সেলফি উৎসব দেখা যায়। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের দাম নিয়ে কোন অভিযোগ করতে দেখা যায়নি। পছন্দ হলেই কিনছেন সবাই। আর ক্রেতা আকৃষ্ট করতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন বিক্রেতারা। কেউ মিষ্টি কথা, আবার কেউ দিচ্ছেন মূল্যছাড়সহ নানা অফার। বাণিজ্যমেলার কন্ট্রোল রুম থেকে একটু পর পরই জানিয়ে দেয়া হচ্ছে কোন স্টলে কি ছাড় দেয়া হচ্ছে। যার যে পণ্য প্রয়োজন সে হিসেবে স্টলমুখী হয়েছেন সবাই। এদিকে, মেলায় ফার্নিচার দোকাগুলোতেও দর্শনার্থীদের বেশ ভিড়। ফানির্চারের বিকিকিনির খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শেষের দিকে এসে বেশ ভাল সাড়া পাচ্ছে। অনেকেই অর্ডারও করেছেন। তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় ইলেকট্রনিক্স, আসবাবপত্র কিনে বেশির ভাগ ক্রেতা দাম মেটাচ্ছেন ক্রেডিড কার্ডে। সাধারণত বিলাসবহুল পণ্য, যেমন ইলেকট্রনিক্স ও আসবাব ক্রয়ে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার হচ্ছে বেশি। কারণ হিসেবে ব্যবহারকারীরা বলছেন, এটি কম ঝুঁকিপূর্ণ। এদিকে, মেলা থেকে পণ্য কেনার উদ্দেশ্যে যারা এসেছিলেন তারা চেষ্টা করেছেন পছন্দের পণ্যটি কিনে নিতে। কেননা পরবর্তী সময়ে মেলায় যদি না আসা হয় এ কারণেই পছন্দ হলে ক্রেতা বিকল্প ভাবেনি। আর বিক্রেতারাও পণ্য বিক্রি করতে বেশ মুখিয়ে। এক দিকে মানুষের ভিড় আবার মেলাও শেষের সপ্তাহ চলে এসেছে তাই বিক্রেতারা তাদের পণ্য বিক্রি করতেও সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছেন। স্টলে ঝুলিয়েছেন নানা রকম অফার। এদিকে, একাধিক স্টল ঘুরে ক্লান্ত দর্শনার্থীদের অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন ফুলের পার্কের দুই পাড়ে বসে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। বিশ্রাম নিতে গিয়ে কথা বলেন বেসরকারী কর্মজীবী এমরান ইসলাম। তিনি উত্তরা থেকে এসেছেন জানিয়ে বলেন, পণ্য নিয়ে হাঁটা মুশকিল। এছাড়াও ভিড়ের মধ্যে আরও সমস্যা হয়। মেলা তো সব সময় আসে না। কষ্ট হলেও কিনলাম। ভালই লাগছে। কারও হাতে পণ্যের একাধিক বোঝা, কেউ অবার সন্তানের হাত ধরে ছুটছেন গন্তব্যে। সন্ধ্যায় কেউ বের হচ্ছে কেউবা প্রবেশ করছেন। সব মিলিয়ে কেনাকাটার পাশাপাশি বিনোদনও হচ্ছে দর্শনার্থীদের। উল্লেখ্য, ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। অগ্রযাত্রায় শরিক হোন ॥ শীর্ষ আইসিটি উদ্যোক্তাদের প্রধানমন্ত্রী বিডিনিউজ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্রযাত্রায় সঙ্গী হতে আইসিটির শীর্ষ উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় বৃহস্পতিবার বিকেলে জ্যাকবশর্ন এলাকায় শেরাটন হোটেলে এক আলোচনায় এ আহ্বান জানান তিনি। ‘ডিজিটাল লিডারস পলিসি মিটিং অন জবস’ শিরোনামের ওই আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে প্যানেল আলোচক ছিলেন শেখ হাসিনা। তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগতিতে পরিবর্তিত বিশ্ব বাস্তবতায় ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে অনেক উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’র লক্ষ্য নির্ধারণের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের লাখ লাখ তরুণকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও জ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে আইসিটিতে দক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করার কথা জানান তিনি। “আমাদের সমাজের বিভিন্ন স্তরের পাশাপাশি বহির্বিশ্বের সঙ্গে জ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবধান ঘোচানোর লক্ষ্য ছিল আমাদের।” শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ ১০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। আগামী অন্তত তিন দশক বাংলাদেশের তরুণ জনশক্তি থাকবে। “আমাদের জনগণ যে কোন কিছু সহজে গ্রহণ করে এবং আইসিটিসহ যে কোন প্রযুক্তিকে খুব ভালভাবে মানিয়ে নেয়। আজকে বিশ্বের দশম সর্বাধিক মোবাইল গ্রাহক বাংলাদেশের। ছয় কোটির বেশি মানুষ অনলাইনে, যাদের অধিকাংশই স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটে যুক্ত।” মানবসম্পদ উন্নয়ন, কার্যকরভাবে জটিল সেবা প্রদান এবং জ্ঞান-দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের মধ্যে যথাযথ সেতুবন্ধ তৈরির কৌশল নিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে কাজ করছে সরকার। ‘আইসিটি ফর এডুকেশন’-এর উপর গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষায় তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে জাতীয় রূপরেখা প্রণয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল লার্নিং কনটেন্টের মধ্য দিয়ে শিশুদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ হচ্ছে। এর দৃষ্টান্ত হিসেবে মাধ্যমিকে ২৩ হাজারের বেশি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম থাকার কথা জানান তিনি। প্রাথমিকেও ১৪ হাজারের মতো মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ‘টিচার্স পোর্টাল’ নামে অনন্য একটি সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের দেড় লাখের মতো শিক্ষকের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে নয় লাখ শিক্ষকের সবাইকে এখানে আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এর মধ্য দিয়ে তারা কনটেন্ট, সমস্যার সমাধানে নিজেদের ‘আইডিয়া’ বিনিময় করতে পারবে। ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘মুক্তপথ’ গড়ে তুলতে কাজ চলার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এখন কাজের ধরনের পরিবর্তন ও বাজার বিশ্লেষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নে জোর দেয়া হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সেবা খাতকে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
×