ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বিকার কর্তৃপক্ষ

ইউএসটিসিতে আন্দোলন অব্যাহত

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

ইউএসটিসিতে আন্দোলন অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধনের দাবিতে ইউএসটিসির (ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং) শিক্ষার্থীদের কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। বুধবারও সড়ক অবরোধ করে নিবন্ধনের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কে যানজটজনিত ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ নিয়ে কোন আশ্বাস এখনও মেলেনি। দিনের পর দিন এ কর্মসূচীতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বেসরকারী খাতে গড়ে উঠা দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিএমডিসির নিবন্ধন ছাড়াই চলছে ইউএসটিসির শিক্ষা কার্যক্রম। ফলে বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে এমবিবিএস পাসের পর প্র্যাকটিস করতে পারবেন না এ প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া চিকিৎসকরা। এ অবস্থায় ক্ষোভ ও চরম হতাশা শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক মহলে। প্রতিদিনই চলছে বিক্ষোভ, মিছিল ও সমাবেশ। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে ঝুলিয়েছে তালা। চট্টগ্রামের এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা ও চিকিৎসা কার্যক্রম দুটোই মুখ থুবড়ে পড়েছে। নগরীর খুলশী এলাকায় নামমাত্র মূল্যে রেলওয়ে থেকে নেয়া জমিতে গড়ে উঠে ইউএসটিটি নামের বিশাল এ প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ নুরুল ইসলাম। তার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা হয়েছে আরও করুণ। শুধু তাই নয়, বিএমডিসির নিবন্ধন ছাড়াই এ প্রতিষ্ঠান ভর্তি করিয়েছে শিক্ষার্থী, যেখানে ভর্তি ফি ১৪ লাখ টাকা। প্রতিমাসে ৬ হাজার টাকা মাসিক ফি এবং ৩০ হাজার টাকা বার্ষিক ফি। বিদেশী শিক্ষার্থীদের ফি আরও বেশি। বেসরকারী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যয় বেশি হলেও অনেক অভিভাবক সন্তানকে চিকিৎসক বানাবার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি করিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের চোখে মুখেও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিতে নিবন্ধন নিশ্চিত না হওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখছেন শিক্ষার্থীরা। মাসের পর মাস দাবি দাওয়া এবং নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচীতে কাজ না হওয়ায় তারা বাধ্য হয়েছেন মাঠে নামতে। প্রায় প্রতিদিনই খুলশীর জাকির হোসেন সড়কে চলছে অবরোধ কর্মসূচী। এতে ভোগান্তির শিকার যাত্রী সাধারণ। ইউএসটিসির ২৫ থেকে ২৭ নম্বর ব্যাচের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী নিবন্ধনহীন। এরমধ্যে একটি ব্যাচের ফাইনাল পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে আগামী ২৩ জানুয়ারি। কিন্তু কী হবে পরীক্ষা দিয়ে? কী হবে এই সনদ দিয়ে? নিবন্ধন না থাকায় প্র্যাকটিস করতে পারবেন না পাস করা শিক্ষার্থীরা। ইউএসটিসিতে প্রতিদিনই চলছে আন্দোলন কর্মসূচী। এতে সমর্থন রয়েছে শিক্ষকদের একটি বড় অংশেরও। গত সোমবার থেকে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায়ও অচলাবস্থা দেখা দেয়। বন্ধ হয়ে গেছে সেবা কার্যক্রম। অনেক রোগী বাধ্য হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। শুধু তাই নয়, রোগীদের হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে বের করে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ইউএসটিসির শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনের দাবির প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ বলছে মন্ত্রণালয়ের কাছে এ দাবি তুলে ধরতে। শিক্ষার্থীরাও নেমেছে আন্দোলনে। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করে চলেছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা আশ্বস্ত হতে পারছে না। এদিকে, বিএমডিসির নিবন্ধন ছাড়াই এতগুলো শিক্ষার্থী কিভাবে ভর্তি করানো হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টিকে পুরোপুরি প্রতারণা হিসেবে দেখছেন অভিভাবকরা। কর্তৃপক্ষ যদি কোন অপরাধ করে থাকে তার জন্য আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবন এবং ভবিষ্যতে প্র্যাকটিসের সুযোগ করে দেয়া হোক, এমনই দাবি তাদের। সরকারী সংস্থা রেলওয়ে থেকে অনেকটা বিনামূল্যে পাওয়া ভূমিতে গড়ে উঠা ইউএসটিসি যেভাবে প্রতারণা করেছে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অভিভাবকরা। প্রয়োজনে এই প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জোর দাবি উঠেছে।
×