ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা ও তালিকাভুক্তি দাবিতে কুষ্টিয়ায় গণঅনশন

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা ও তালিকাভুক্তি দাবিতে কুষ্টিয়ায় গণঅনশন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া, ১২ জানুয়ারি ॥ ভারতের বীরভূম জেলার রামপুরহাট সেনানিবাসে উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ নেয়া বৃহত্তর কুষ্টিয়াসহ ৮ নং সেক্টরের কয়েক শ’ মুক্তিযোদ্ধা বৃহস্পতিবার সকালে কুষ্টিয়া পৌরসভার বিজয় উল্লাস চত্বরে প্রতীকী গণ-অনশন কর্মসূচী পালন করে। এসব মুক্তিযোদ্ধা একাত্তরে বীরভূম জেলা থেকে উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশের অভ্যন্তরে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও ৪৬ বছর পরও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট তাদের ‘উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত’ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত না করার প্রতিবাদে এবং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনায় এ গণ-অনশন কর্মসূচী পালন করা হয়। এতে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা নেতারা বলেন, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর, ফরিদপুর ও খুলনা জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ নং সেক্টরের অন্তত ৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ভারতের বীরভূম জেলার রামপুরহাট সেনানিবাস থেকে উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট কমান্ডার নাছিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ভারতের চাকুলিয়াসহ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করে। এতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে সংরক্ষিত তালিকা থেকে মাত্র ৫১ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে ‘উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত’ মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা এবং তাদের তালিকাভুক্তি করা হয়। কিন্তু ভারতের রামপুরহাট সেনানিবাস থেকে উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ নেয়া ৮ নং সেক্টরের তালিকাভুক্ত অন্তত ৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে ‘উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত’ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত ও মর্যাদা দেয়া হয়নি। কমান্ডার নাছিম বলেন, ভারতের রামপুরহাট সেনানিবাস থেকে উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও মুজিব বাহিনীসহ সকল উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রকাশের দাবিতে ইতোপূর্বে মানববন্ধন কর্মসূচী এবং কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় প্রতীকী এ গণ-অনশন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। তিনি জানান, সেনা সদর দফতর থেকে একই সঙ্গে চাকুলিয়া ও বীরভূমের রামপুরহাটে ট্রেনিং নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা আনা হলেও শুধুমাত্র চাকুলিয়াকে ‘উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত’ বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে রামপুরহাট সেনানিবাসে প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধারা ‘উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত’ মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও তারা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে ৮ নং সেক্টর জিবি ভলিউমটিকে উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হিসেবে ঘোষণা দেয়ার দাবি জানান। আরও বক্তব্য রাখেন রামপুরহাট থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট কমান্ডার নাছিম উদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা হাজী রফিকুল আলম টুকু, হাজী নজরুল ইসলাম, শফিউল ইসলাম মজনু, সাহাবুব আলী, বশির আহমেদ, আবুল কাশেম মাস্টার, আবেশ উদ্দিন, কামাল হোসেন দবির প্রমুখ। গণ-অনশন কর্মসূচী শেষে বেলা ১টার দিকে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ জাহিদ হোসেন জাফর মুক্তিযোদ্ধাদের এ দাবির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে অনশনরতদের পানি ও শরবত পান করিয়ে এ কর্মসূচী ভঙ্গ করান।
×