ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশরক্ষার পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে নিরলসভাবে কাজ করছে সেনাবাহিনী

উন্নত চিকিৎসক তৈরির দ্বার উন্মোচনে আর্মি মেডিক্যাল কলেজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১১ জানুয়ারি ২০১৭

উন্নত চিকিৎসক তৈরির দ্বার উন্মোচনে আর্মি মেডিক্যাল কলেজ

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ দক্ষিণ পাশে সামনে বড় মাঠ। সুবজ ঘাসে মোড়া। ভবনের সামনে ফুটেছে নানা রঙের ফুল। পূর্ব পাশের রাস্তার দু’পাশে লাগানো নানা প্রজাতির গাছ। এমন এক সুন্দর পরিবেশে দাঁড়িয়ে আছে আর্মি মেডিক্যাল কলেজ, যশোর। সুন্দর যেমন কলেজের প্রাকৃতিক দৃশ্য। তেমনি লেখাপাড়ার পরিবেশ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ রক্ষার পাশাপাশি এভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি আর্মি মেডিক্যাল কলেজ, যশোরে গিয়ে দেখা যায় ক্লাসরুমের একপাশে স্টিলের দুটো বড় বাক্সে দুটো ক্যাটাবা (লাশ)। আরেক দিকে গামলায় থরে থরে সাজানো মানবদেহের ভিসেরাÑ কিডনি, ফুসফুস, যকৃত, হার্ট, জিহ্বা, ব্রেন ইত্যাদি। কৃত্রিম না, এ সবই সত্যি ক্যাটাবা (লাশ) আর মানব অঙ্গ। ফরমালিন বা কেমিক্যালে চুবিয়ে রাখা হয়েছে এগুলো। এসবের মধ্যেই ক্লাস চলছে শিক্ষার্থীদের। যশোর আর্মি মেডিক্যাল কলেজের ব্যবহারিক ক্লাসে এ্যানাটমির প্রভাষক ডাঃ নাজিয়া আক্তার ঊর্মি ২৫ জন শিক্ষার্থীর এক ব্যাচকে পাঠদান করছিলেন। তিনতলায় তাত্ত্বিক ক্লাসে সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ শফিকুর রহমানের পড়ানোর বিষয় ছিল কমিউনিটি মেডিসিন। এই ক্লাসটি মাল্টিমিডিয়া সমৃদ্ধ। মজার বিষয় হলো ক্লাসের ৫০ জনের তিন ভাগ অর্থাৎ ৩৬ জনই নারী শিক্ষার্থী। কর্তৃপক্ষ জানালেন, তাত্ত্বিক ক্লাসে ৫০ জনের পুরো শিক্ষার্থী দল একসঙ্গে পাঠ গ্রহণ করেন। আর ব্যবহারিক ক্লাসের একেক ব্যাচে শিক্ষার্থী থাকেন ২৫ জন করে। শুধু যশোর নয়, আরও ৪টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বগুড়া ও রংপুরেও একইভাবে চিকিৎসক তৈরির শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। দু’বছর পর দেশের নতুন এই ৫ মেডিক্যাল কলেজ থেকে আড়াইশ’ চিকিৎসক উপহার পাবে দেশ। দেশের স্বাস্থ্যসেবায় এসব চিকিৎসকরা নতুন দ্বার উন্মোচন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন এসব মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধন করেন। ২০১৪-১৫ বছরে এসব কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে চলছে তৃতীয় ব্যাচের কার্যক্রম। এ ব্যাচে সারাদেশের ২৫০টি আসনের জন্য প্রার্থী ছিলেন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। আগামী বছর থেকে ঢাকার আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে একযোগে এই ৫টি মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানের ৫০ জনের স্থলে ৬৬ জনের শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা একশ’ জনে উন্নীত করা হবে। তখন আর্মি মেডিক্যাল কলেজের মাধ্যমে দেশ প্রতিবছর ৫শ’ করে নতুন চিকিৎসকের সেবা পাবে। প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজই আবাসিক। এজন্য রাজনৈতিক কোন সহিংস কর্মসূচীর প্রভাব শিক্ষাকে ব্যাহত করতে পারে না। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে সরকার নির্ধারিত টিউশন ফি নেয়া হয় এখানে। ৫টি মেডিক্যাল কলেজের পরিচালনা পর্ষদে সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্যান্টনমেন্টের জিওসি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। যশোর আর্মি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরাও উচ্ছ্বসিত এখানে লেখাপড়া শিখতে এসে। ঢাকার আগারগাঁও থেকে যশোরে পড়ালেখা করতে এসেছেন মালিহা। বললেন, এখানকার লেখাপড়া এবং শৃঙ্খলা খুবই ভাল। খুলনার খালিশপুরের মেয়ে অদ্রিতা বলেন, কলেজের ডরমেটরি, উন্নতমানের খাবার, স্যানিটেশন অত্যন্ত ভাল মানের। এমনকি এখানে টি-ব্রেকেরও সুবিধা রয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচীর প্রভাব পড়ে না বলে নির্বিঘেœ লেখাপড়া করা যায়। যশোর শহরের পোস্টঅফিস পাড়ার ছেলে সুদীপ্ত বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকা- এবং খেলাধুলার ওপর কলেজে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এ্যানাটমি বিভাগের প্রভাষক ডাঃ নাজিয়া আক্তার ঊর্মি বলেন, এখানে যেভাবে পাঠদান করা হয়, তা একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জনে বিশেষভাবে সহায়ক। নিজেরা ভালভাবে লেখাপড়া করলে এখানকার ছেলেমেয়েরা একাডেমিক এবং পেশাগতভাবে দারুণ করবে। যশোর আর্মি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ কর্নেল মোঃ জোবায়দুর রহমান বলেন, অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজ থেকে এখানকার পরিবেশ আলাদা। শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। এটা পুরোপুরি আবাসিক। এখানে কোন রাজনীতি নেই বলে এ্যাবসেন্ট বা ক্লাস মিস করার কোন সুযোগ নেই। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তারা ইন্টার্নি করার সুযোগ পাবে। সুশৃঙ্খল মানুষ হিসেবে তাদের গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। কলেজের সুবিধা প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বলেন, এ পর্যন্ত ৩টি ব্যাচ ভর্তি করেছি। সে অর্থে এটা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে বেসিক সাবজেক্টের যে ধরনের ফ্যাসিলিটিজ থাকা দরকার তার সবটাই নিশ্চিত করেছি। ছাত্রছাত্রী এবং ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিয়ে দুর্বলতা থাকলে সেগুলো দূর করছি। ৮ একর জায়গার নিজস্ব ক্যাম্পাসে কলেজ চলে যাবে। ২০১৯ সালে এখানকার প্রথম ব্যাচের ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দেবে। সব মিলিয়ে আদর্শ ডাক্তার তৈরির জন্য যে ধরনের সুবিধা থাকা দরকার, তার পুরোটাই আমরা নিশ্চিত করেছি।
×