ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে বিচ কার্ণিভাল নিয়ে লুকোচুরি

প্রকাশিত: ০০:০৮, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬

কক্সবাজারে বিচ কার্ণিভাল নিয়ে লুকোচুরি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ বর্ষ বিদায় ও নববর্ষ বরণকে ঘিরে পর্যটন কর্পোরেশন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কার্ণিভাল ইভেন্ট এর যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজারে তিন দিনব্যাপী বীচ কার্ণিভাল আয়োজন নিয়ে কয়েকদিন ধরে চলেছে লুকোচুরি খেলা। গানের কণসার্ট ছাড়া আর তেমন কোন আয়োজন চোখে পড়েনি এ পর্যন্ত। এমনকি বিচ কার্ণিভাল আয়োজনে সমন্বয় নেই জেলা প্রশাসন, পর্যটন কর্পোরেশন ও আয়োজক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। জানা যায়, পর্যটকদের আকর্ষণ এবং পর্যটনকে তুলে ধরতে বিচ কার্ণিভালের আয়োজন করা হলেও তেমনটা প্রচার-প্রচারণাও হয়নি। সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন সাটানো ছাড়া কার্ণিভালের তেমন কোন প্রচার-প্রচারণাও করেনি আয়োজক কর্তৃপক্ষ। এমনকি কার্ণিভাল কখন ও কোথায় অনুষ্ঠিত হবে এবং আয়োজন সম্পর্কেও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জানেন না স্থানীয় লোকজন ও সাংবাদিকরা। এছাড়া প্রচার-প্রচারণা ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ততা না থাকায় পর্যটকদের অধিকাংশও জানেন না কক্সবাজারে বীচ কার্ণিভালের মতো বিশাল আয়োজন নিয়ে। এদিকে কার্ণিভাল অর্থে ব্যাপক আয়োজনের কথা থাকলেও এবার তিন দিনব্যাপী গানের কণসার্ট ছাড়া আর কোন অনুষ্ঠানসূচী নেই। বিভিন্ন দেশে পর্যটক আনাগোনা কম এমন সময়ে কার্ণিভাল আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও কক্সবাজারের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখো গেছে, বিচ কার্ণিভাল আয়োজনের জন্য সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গানের কণসার্টের জন্য সুরম্য বিশাল মঞ্চ তৈরী করা হচ্ছে। এছাড়া কার্ণিভালের মতো বিশাল আয়োজনে অন্য কোন ধরণের অনুষ্ঠানমালার ইভেন্ট চোখে পড়েনি। ফলে বিচ কার্ণিভাল আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট নানা মহলে। তিন দিনব্যাপী বীচ কার্ণিভাল-২০১৬ শুক্রবার বিকেলে সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে উদ্বোধন হয়েছে। চলবে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও বেসরকারি প্রতিষ্টান ‘কার্ণিভাল ইভেন্ট’ যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের বিচ কার্ণিভাল। আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কার্ণিভালে ৩ দিনব্যাপী গানের কণসার্ট ছাড়া অন্য কোন ধরণের অনুষ্ঠানমালা থাকছে না। বিচ কার্ণিভাল আয়োজনের ব্যাপারে বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে কয়েকটি প্রচার সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন দেখা গেছে। অন্যবার বিচ কার্ণিভালের মাসখানেক আগে থেকে পর্যটন সংশ্লিষ্টসহ ব্যক্তিবর্গ সহ সাংবাদিকদের সঙ্গে অয়োজনের নানা বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করা হতো। কিন্তু এবারে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আয়োজক কর্তৃপক্ষের এ ধরণের কোন তৎপরতা নেই। পর্যটকদের আকর্ষণ ও পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য ‘বিচ কার্ণিভালের’ মতো অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হলেও কোন ধরণের দৃশ্যমান প্রচারণা ছাড়া কেন এমন তৎপরতা, তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন অনেকে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিচ কার্ণিভাল আয়োজন করা হয় মূলত: পর্যটকদের আকর্ষণ এবং পর্যটন শিল্প তুলে ধরার লক্ষ্যে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও আয়োজনে নানাভাবে সম্পৃক্ত থাকে। কিন্তু এবার বিচ কার্ণিভাল আয়োজনের ক্ষেত্রে হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টদের কোন ধরণের অংশগ্রহণ নেই। এ ক্ষেত্রে গত বছর মেগা বিচ কার্ণিভাল আয়োজনে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের নানাভাবে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেন তিনি। সাখাওয়াত আরও বলেন, গত বছর মেগা বিচ কার্ণিভাল আয়োজনের সঙ্গে হোটেল-মোটলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য নানা আয়োজন রেখেছিল। কিন্তু এবার কার্ণিভাল আয়োজনের সঙ্গে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ত করা তো দূরের কথা, আমাদের অবহিতও করা হয়নি। তিনি বলেন, গত বছর মেগা কার্ণিভালের সময় পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বর্ণাঢ্য সাজ-সজ্জা, আগত পর্যটকদের ফুল দিয়ে বরণ, উপহারের ব্যবস্থা, হোটেল-মোটেল কক্ষে ছাড়সহ বৈচিত্র আয়োজন রেখেছিল। এসব আয়োজনকে ঘিরে বলতে গেলে, সেই সময় কার্ণিভালকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আগমনের কারণে কক্সবাজার আনন্দের নগরীতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু কক্সবাজারে বিচ কার্ণিভাল আয়োজন নিয়ে তেমন কোন প্রচারণা না থাকায় এবং পর্যটন সংশ্লিষ্টদের আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না করায় আয়োজকদের আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন দেখো দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন সাখাওয়াত। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজি আবদুর রহমান বলেন, কার্ণিভাল আয়োজনের বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের কোন পরিষ্কার ধারণা নেই। অনুষ্ঠানের আয়োজক পর্যটন কর্পোরেশেন। তারা কয়েকদিন আগে বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। এরপরও কার্ণিভাল আয়োজনে নিরাপত্তা সহ সার্বিক বিষয়ে প্রশাসন সহযোগিতার প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনি বলেন, কার্ণিভাল আয়োজনের শেষের সময়ের দিকে অবহিত করায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কোন ধরণের উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়নি। যদি আগে থেকে অবহিত করা হতো, তাহলে গত বছরের মতো বর্ণাঢ্য বিচ কার্ণিভাল আয়োজন করা সম্ভব হতো। তারপরও পর্যটনের স্বার্থে জেলা প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করতে আন্তরিক। পর্যটন কর্পোরেশন কক্সবাজারের ব্যবস্থাপক ও মোটল শৈবালের ম্যানেজার সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, গত ২ সপ্তাহ আগে বিচ কার্ণিভাল আয়োজনের ব্যাপারে চিঠি পেয়েছি। কার্ণিভাল আয়োজন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ‘কার্ণিভাল ইভেন্ট’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। মূলত: তারাই কার্ণিভাল আয়োজনের ব্যাপারে সার্বিক বিষয়াদি প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করছেন।
×