ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফর স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফর স্থগিত

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফর অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে এ সফরটি হতে পারে। ঢাকা ও দিল্লীর একাধিক কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দিন দিল্লী সফরের প্রস্তুতি নিয়েছিল ঢাকা ও দিল্লী। তবে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর আপাতত পিছিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে অনুরোধ করা হয়। উভয়পক্ষের সম্মতিতে এ সফর বৃহস্পতিবার স্থগিত করা হয়েছে। তবে উভয়পক্ষ খুব শীঘ্রই আবার আলোচনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর চূড়ান্ত করবে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরে ঢাকার পক্ষ থেকে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছিল। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পর তিস্তা চুক্তিকেই প্রাধান্য দিয়েছিল ঢাকা। আর ভারতের পক্ষ থেকে সামরিক-নিরাপত্তা সহযোগিতা ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে জোর দেয়া হয়েছিল। ঢাকায় ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরের সফরে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে ভারত। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর গত ৩০ নবেম্বর দুদিন ঢাকা সফর করেন। ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান। সে সময় ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রত্যাশা করছেন, তিনি (শেখ হাসিনা) যেন ভারত সফর করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক গত ৮-১০ নবেম্বর দিল্লী সফর করেন। সেখানে তিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরকালে কী কী চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে, সে বিষয়েও আলোচনা করেন দুই পররাষ্ট্র সচিব। তিস্তা চুক্তিতে ঢাকার বিশেষ আগ্রহের জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফর সামনে রেখে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নে উদ্যোগী বলে জানিয়েছিল ভারত। সকল পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছিল দেশটি। এছাড়া তিস্তা চুক্তির বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকেও বিশেষ বার্তা দেয় দিল্লী। ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সঞ্জীব কুমার বালিয়ান গত ২ ডিসেম্বর লোকসভায় একটি বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, ‘তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে ভারত সরকার উদ্যোগী। সব পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান সূত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে মমতাকে মোদি সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ বার্তা দেয়া হয়। কেননা সন্ত্রাস ও জঙ্গী প্রতিরোধ ইস্যুতে ঢাকাকে পাশে চায় দিল্লী। সে কারণে দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চান নরেন্দ্র মোদি। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সে কারণে কেন্দ্রীয় সরকার চেয়েছিল শেখ হাসিনার আসার আগেই তিস্তা চুক্তির একটি রফা করতে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ভারতের নোট বাতিলের প্রেক্ষিতে মোদির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তবে দিল্লী চাইছে মমতাকে সঙ্গে নিয়েই তিস্তা সমস্যার সমাধান করতে। সে কারণে মমতাকে পাশে চান মোদি। তিস্তা চুক্তি সম্পন্নের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে দিল্লী। এ অবস্থার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর স্থগিত হয়ে যায়। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, কোন রকম শর্ত ছাড়াই তিনি দিল্লী সফরে আগ্রহী। চলতি বছরের ১৬ অক্টোবর ভারতের গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলনে যোগদানের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটি সফরের জন্য শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছরের ৬-৭ জুন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। সে অনুযায়ী উভয় দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রস্তুতি নিয়েছিল। মোদি সরকার ক্ষমতায় বসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরের আয়োজন করা হয়েছিল। যদিও ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর স্ত্রীর মৃত্যুর সময়ে শেখ হাসিনা সংক্ষিপ্ত সফরে দিল্লী গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে সন্ত্রাস প্রতিরোধে দুই দেশ পরস্পরকে সমর্থন করছে। রাজধানীর গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর মোদি এক বার্তায় শেখ হাসিনার পাশে থাকবেন বলে অঙ্গীকার করেন।
×