ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেঁচে গেলেন পাঁচজন ॥ তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা

ব্রাজিলের ফুটবল দল নিয়ে বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ৭৬

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

ব্রাজিলের ফুটবল দল নিয়ে বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ৭৬

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সাউথ আমেরিকান ক্লাব ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ ছিল বুধবার। কিন্তু এ্যাতলেতিকো ন্যাশনালের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচ আর খেলা হলো না ব্রাজিল শাপেকোয়েন্স রিয়েলের। মাঠে নামার আগেই বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন টিমের বেশিরভাগ খেলোয়াড়। কলম্বিয়ার মেদেলিন শহরের কাছের এক পার্বত্য এলাকায় স্থানীয় সময় সোমবার রাত ১০টার দিকে ৮১ আরোহী বহনকারী বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত হয় অন্তত ৭৬ জন। খবর এএফপি ও বিবিসির। বিবিসির খবরে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে সাতজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু এদের মধ্যে দুজন মারা গেছে। বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, ভাড়া করা বিমানে শাপেকোয়েন্স রিয়েল ফুটবল দলের সদস্যদের বহন করা হচ্ছিল। বিমানটি বলিভিয়া থেকে ভাড়া করা হয়। সাউথ আমেরিকান ক্লাব কাপের ফাইনালে কলম্বিয়ার দল এ্যাতলেতিকো ন্যাশনালের সঙ্গে খেলতে মেদেলিনে যাচ্ছিলেন তারা। ম্যাচের সংবাদ সংগ্রহের জন্য একদল সাংবাদিকও ছিলেন তাদের সঙ্গে। সাউথ আমেরিকান ক্লাব ফুটবলের এই দ্বিতীয় প্রধান প্রতিযোগিতার ফাইনাল ম্যাচ দুর্ঘটনার পর স্থগিত করা হয়েছে বলে জানায় সাউথ আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশন। মেদেইনের হোসে মারিয়া করদোভা দে রিয়োনেগ্রো বিমানবন্দরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্রিটিশ এরোস্পেস ১৪৬ মডেলের ছোট আকারের ওই উড়োজাহাজের চালক দুর্ঘটনার আগে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কথা নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে জানিয়েছিলেন। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কাজ বিঘিœত হলেও বৃষ্টির কারণে আগুন খুব বেশি ছড়াতে না পারায় যাত্রীদের অনেকের বেঁচে যাওয়ার আশা করেছিলেন উদ্ধারর্মীরা। কিন্তু ৭৬ জনকেই বিমানের ধ্বংসস্তূপে মৃত অবস্থায় পেয়েছেন তারা। এক বিবৃতিতে চাপেকোইনস ক্লাব কর্তৃপক্ষ বলেছে, “আমাদের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও তাদের সঙ্গে যারা ভ্রমণ করছিলেন, ঈশ্বর তাদের সহায় হোক।” ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট আইভান তোজো স্থানীয় স্পোরটিভিকে বলেন, ‘এমনটা যে ঘটতে পারে, তা আমরা কখনও ভাবিনি। শাপেকোইনস ছিল এই শহরের মানুষের আনন্দের সবচেয়ে বড় উৎস।’ বেঁচে গেলেন যারা ॥ পুলিশ বলছে, বিমানটির যাত্রী ও ক্রুসহ মোট ৮১ জনের মধ্যে পাঁচজন বেঁচে গেছে। ক্লাবের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় এ্যালান রাচেল প্রাণেরক্ষা পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন খবরে বলা হচ্ছে, দলের দুই গোলকিপার এবং ফিজিও বেঁচে গেছেন। বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই বিমানে আগুন ধরে যায়নি বলেই কয়েকজন প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্রাজিলে শাপেকো শহরে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ফুটবল ক্লাবটি ২০১৪ সালে ব্রাজিলের শীর্ষ ক্লাব টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। আর্জেন্টিনার সান লোরেঞ্জোকে হারিয়ে গত সপ্তাহে তারা সাউথ আমেরিকান ক্লাব ফুটবলের ফাইনালে পৌঁছে। ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট আইভান তোজো বলেন, পুরো শাপেকো শহরে শোকের মাতম চলছে। বহু মানুষ কান্নাকাটি করছে.. তারা এটা কল্পনাও করতে পারেনি। শাপেকোয়েন্স তাদের আনন্দ উল্লাসের প্রধান উৎস ছিল। কেন দুর্ঘটনা ॥ মধ্যরাতের দিকে এই বিমান দুর্ঘটনার কারণ এখনও জানা যায়নি। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, বিমানের জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়াতেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তত্ত্বও উড়িয়ে দিচ্ছে না কলম্বিয়া প্রশাসন। মেদেলিনের মেয়র মঙ্গলবার সকালে জানান, পাঁচ জনকে জীবিত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর মতে, ‘ভাগ্য ভাল যে, কোন আবাসিক এলাকায় ওই বিমানটি ভেঙ্গে পড়েনি! তা হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বহুগুণ বাড়ত।’ মেডেলিন বিমান বন্দরের রাডার থেকে বিমানটি হারিয়ে যেতেই ঘটনাস্থলের উদ্দেশে উদ্ধারকারী দল রওনা দেয়। একে তো মধ্যরাত তার ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দুয়ে মিলে উদ্ধার কাজ চূড়ান্তভাবে ব্যহত হয়। ঘটনাস্থলে হেলিকপ্টার নামিয়ে উদ্ধার কাজ চালানো হয়। ছিল পুলিশ, দমকল এবং মেডিক্যাল টিমও। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটি ব্রিটিশ এয়ারস্পেস ১৪৬ শর্ট-হলো মডেলের। একটা অংশের মতে ওই বিমানে জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়েছিল। তাই মাঝ আকাশে আচমকাই পাহাড়ের গায়ে ভেঙ্গে পড়ে বলে মনে করছে একটি পক্ষ। অন্য একটা অংশের দাবি, হঠাৎ করেই আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায়। বজ্রবিদ্যুতসহ প্রবল ঝডবৃষ্টির কারণেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে, সরকারীভাবে এখনও বিমান দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানানো হয়নি। জানা গেছে, দুর্ঘটনার মিনিট পনেরো আগে পাইলট বিমানে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণ দেখিয়ে পাবলিক এ্যাড্রেস সিস্টেমে জরুরী অবস্থার কথা ঘোষণা করেন। তার পরেই বিমানটি পাহাড়ের গায়ে ভেঙ্গে পড়ে। গোটা বিশ্বে শোকের ছায়া ॥ প্রিয় দলের খেলোয়াড়দের চূড়ান্ত পরিণতিতে শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা বিশ্বে। শাপেকোয়েন্স টিমের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায়, সাও পাওলো বিমানবন্দরে চেক ইন করছেন খেলোয়াড়রা। বিমানের ভেতরে খেলোয়াড়দের মিঠে খুনসুটির ভিডিও-ছবিও সোস্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে থাকে। প্রিয় খেলোয়াড়দের মাঠের নানা মুহূর্তের ছবি পোস্ট করতে থাকেন ফ্যানরা। যে তিন খেলোয়াড়কে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়, তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে সকলে বার্তা পাঠাতে থাকেন। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন ফুটবল ক্লাব টুইট করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। প্রতিপক্ষ এ্যাতলেতিকো ন্যাশনালের তরফেও দুঃখ প্রকাশ করে পোস্ট করা হয়েছে টুইটারে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘শাপেকোয়েন্সের খেলোয়াড়দের বিমান দুর্ঘটনার খবরে আমরা গভীরভাবে সমবেদনা এবং দুঃখ প্রকাশ করছি। সরকারী ঘোষণার অপেক্ষায় আছি।’ এদিকে, এ ঘটনায় ব্রাজিলে তিনদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। কোপা সুদামেরিকার ফাইনাল ম্যাচ এ বছরের জন্য অমীমাংসিতই থেকে গেল!
×