ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মধুবাগের ডলি হত্যায় ভাই অশোক বণিক জড়িত, খুঁজছে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১২ নভেম্বর ২০১৬

মধুবাগের ডলি হত্যায় ভাই অশোক বণিক জড়িত, খুঁজছে পুলিশ

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ভাইয়ের সঙ্গে অর্থ লেনদেনের সূত্রধরেই রাজধানীর রমনা থানাধীন মধুুবাগে ডলি রানী বণিক পরিকল্পিত হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন। হত্যাকা-ের অন্তত ৫/৬ বছর আগে ডলি কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ধার নেন অশোক বণিক। সেই টাকা লেনদেনের সূত্র ধরেই বোনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। তারই শেষ পরিণতি হিসেবে ডলি রানীকে নৃশংসভাবে হত্যাকা-ের শিকার হতে হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই অশোক বণিককে হন্যে হয়ে খুঁজছে গোয়েন্দারা। নরসিংদী জেলার মাধবদী থানাধীন ঘোড়াদিয়া গ্রামের বাসিন্দা অশোক বণিক কুখ্যাত প্রতারক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। অশোক বণিককে খুঁজে পাওয়া গেলেই ডলি হত্যার রহস্য উদঘাটিত হবে বলে ধারণা করছে নিহতের পরিবার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হত্যাকা-ের ঘটনায় এখনও কোন মামলা হয়নি। সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে আগামী রবিবার অথবা সোমবার ঢাকায় ফিরে পরিবারের তরফ থেকে মামলা দায়েরের কথা রয়েছে। গত ৮ নবেম্বর দুপুর বারোটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার কোন এক সময় রাজধানীর রমনা থানাধীন মধুবাগের উদ্দীপন গলির ১০/ই/৮ নম্বর চারতলা বাড়ির চতুর্থ তলার পূর্ব পাশের দুই কক্ষের একটি ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন ডলি রানী বণিক (৪৬)। রাত একটার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। নিহতের বড় ছেলে রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত বেসরকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র জুয়েল বণিক জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনার সময় তার মা একাই ফ্ল্যাটে ছিলেন। নটরডেম কলেজ থেকে পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্নাসে ভর্তির জন্য অপেক্ষায় থাকা ছোট ভাই দীপ্ত বণিক কলাবাগান ক্লাব মাঠে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল। একমাত্র বোন ঝুমা বণিক ভারত প্রবাসী। বাবা সজল বণিক ২০০৭ সালে মালয়েশিয়া প্রবাসী। সেখানে তিনি ভাল চাকরি করেন। যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করেন। তাদের দুই মামা। এক মামা চিকিৎসক। তিনি আমেরিকা প্রবাসী। অপর মামা অশোক বণিক এলাকায়ই থাকেন। একেক সময় একেক নাম ব্যবহার করেন। তাকে সবাই প্রতারক হিসেবে জানেন। ৫/৬ বছর আগে মার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ধার নেন তার মামা অশোক বণিক। সেই টাকা নিয়ে মামার সঙ্গে মা ও তাদের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। তবে সেই সূত্র ধরেই মা হত্যাকা-ের শিকার হতে পারেন। আবার নাও হতে পারেন। বিষয়টি পরিষ্কার নয়। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পারিবারিক অনেক বিষয়ই অবহিত করেছেন। তার মধ্যে অর্থ লেনদেনের বিষয়ও রয়েছে। আগামী রবিবার ও সোমবার নাগাদ তারা ঢাকায় ফিরবেন। এরপর মামলা দায়েরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বাড়ির একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভাইকে ধার দেয়া টাকা নিয়ে ডলি রানীর ভাইয়ের দ্বন্দ্ব চলছিল। প্রায় পনেরো দিন ধরে মোবাইল ফোনে মাঝে মধ্যে হত্যার হুমকি পাচ্ছিলেন ডলি রানী। এজন্য ছেলেরা বাইরে যাওয়ার পর ডলি রানী দরজা বন্ধ করে ঘরেই থাকতেন। তেমন বের হতে না। মোবাইল ফোনে হুমকি ধমকিও পাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি বিষয়টি খুব বেশি আমলে নেননি। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানানো বা থানায় জিডি করার প্রয়োজন মনে করেননি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যার সঙ্গে জড়িতরা নিহতের পূর্ব পরিচিত। তার দুই ছেলে যে সময় বাসায় থাকে না, ঠিক সেই সময়টিকে হত্যাকারীরা বেছে নিয়েছে। তবে হত্যাকারীরা হত্যার উদ্দেশে ডলি রানীর ফ্ল্যাটে ঢুকেনি। পূর্ব পরিচিত এক বা একাধিক ব্যক্তি ডলি রানীর ফ্ল্যাটে যায়। সেখানে অর্থ বা পারিবারিক কোন বিষয়াদি নিয়ে ঝগড়া হয়। উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে তারা ডলি রানীকে হত্যা করে। কারণ হত্যাকারীরা হত্যাকা- ঘটাতে ডলি রানীর বাসার বটি ব্যবহার করেছে। যা ভিন্ন বিষয়টি ইঙ্গিত করে। হত্যাকারীরা হত্যার উদ্দেশ্যেই সেই বাড়িতে গেলে, স্বাভাবিক কারণেই তারা সঙ্গে করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যেত। কিন্তু সেটি হয়নি। আবার এমনও হতে পারে হত্যাকারীরা হত্যার উদ্দেশে ওই বাড়িতে অস্ত্রশস্ত্রসহই গিয়েছিল। কিন্তু হত্যাকারীদের নিজেদের অস্ত্র ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়নি। আবার পেশাদার হত্যাকারীরা হত্যাকা-ের ঘটনাটি সুপরিকল্পিতভাবে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতেও বাসার বটি দিয়ে ডলি রানীকে হত্যা করতে পারে। তবে সে সম্ভবনা খুবই কম। হত্যাকারীরা নিহতের শরীরে থাকা স্বর্ণালঙ্কারও নেয়নি। যা হত্যাকারীরা নিহতের পূর্ব পরিচিত বলে ইঙ্গিত দেয়। আবার হত্যাকা-ের ধারণা ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতেও হত্যাকারীরা পরিকল্পিত এমনটা ঘটাতে পারে। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হত্যাকারীরা ডলি রানীকে বাসার বেডরুমে বটি দিয়ে জবাই করে। জবাই করার পর কাপড় দিয়ে লাশ ঢেকে রাখে। দেখে মনে হচ্ছিল তিনি চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন। তারা রাত আটটার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে বটিটিও লাশের উপর দেখতে পেয়েছেন। তবে কখন হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটেছে তা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জনকণ্ঠকে জানান, নানা বিষয়াদির পাশাপাশি ভাইয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেনের বিষয়টিও তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত হত্যাকা-ের ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। কেউ গ্রেফতারও হয়নি। বাড়ির মালিক আনোয়ারা বেগম জানান, প্রায় দুই বছর ধরে ডলি রানী মাসিক নয় হাজার টাকা ভাড়ায় চতুর্থ তলার দুইটি রুমে দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছিলেন। বাড়ি মালিকের মেয়ে রুবা জানান, বাড়িটির দুইটি গেটই রাত এগারোটা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে পুরোপুরি নয়। একজন মানুষ যাতায়াত করতে পারেন, এমন জায়গা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়। বাড়িতে কোন নিরাপত্তা প্রহরি নেই। ঘটনার দিন ছোট ছেলে দীপ্ত সন্ধ্যা সাতটার দিকে আচমকা দরজায় জোরে জোরে শব্দ করতে থাকে। দীপ্ত জানায়, তার মায়ের মোবাইল ফোন বন্ধ। দরজাও বন্ধ। এরপর ছাদের চাবি নিয়ে কার্নিশ বেয়ে ভেতরে তার মাকে বিছানার উপর শুয়ে থাকতে দেখে। আশপাশে রক্তের দাগ দেখতে পায়। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাব সেখানে উপস্থিত হয়।
×