ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে চীনের আগ্রহ প্রকাশ;###;প্রকল্পের কাজ শুরু হবে ২০১৮, শেষ হবে ২০২২ সালের মধ্যে ;###;টোল দিয়ে চলতে হবে ২১৭ কিলোমিটার সড়কে ;###;টোল প্লাজা হবে ১০ লেনের

সড়ক যোগাযোগে নতুন মাত্রা ॥ আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১০ নভেম্বর ২০১৬

সড়ক যোগাযোগে নতুন মাত্রা ॥ আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম

রাজন ভট্টাচার্য ॥ অর্থনীতির লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। দেশের সবচেয়ে বেশি পরিবহন চলে এ মহাসড়ক দিয়ে। তেমনি পণ্য পরিবহনেও এ সড়কের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। ঢাকা-চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ইতোমধ্যে ফোর লেন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এবার সুখবর আরেকটি। বন্দরনগরীর সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে ছয় লেন বিশিষ্ট এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরু হবে ২০১৮ সালে। শেষ হবে ২০২২ সালের মধ্যে। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করা যাবে। এখন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা সময় লাগে। যা অর্ধেকেরও কমে নেমে আসবে। কাজ শুরুর পর এই সুযোগ পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও অন্তত চার বছর। সম্প্রতি এক মতবিনিময় সভায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম বলেন, এজন্য প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের সমীক্ষা শেষ হয়েছে। ২১৭ কিমি দীর্ঘ ওই পথে যাতায়াত করতে টোল দিতে হবে। এ পথে সাতটি স্থানে যাত্রী ওঠানামা করতে পারবে। যেসব জায়গায় যানবাহন থামবে সেগুলো হচ্ছে- নারায়ণগঞ্জের মদনপুর, কুমিল্লার দাউদকান্দি, ময়নামতি ও পদুয়ারবাজার, ফেনী, চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট ও সলিমপুর। জানা গেছে, প্রকল্পটির নাম ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে। সড়কের ১৯ কিমি এলিভেটেড ও ১৯৮ কিমি এক্সপ্রেসওয়ে হবে। কাঁচপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে হবে। এ প্রকল্পের জন্য কিছু এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। কুমিল্লা জেলায় ১০০ কিমি মহাসড়ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এই এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিমি বেগে চলতে পারবে গাড়ি। এই হিসেবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা পৌঁছানো সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সওজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরো সড়কটির চট্টগ্রাম-ফেনী ও দাউদকান্দি-ঢাকা অংশে কোথাও মাটির ওপর আবার কোথাও উড়ালসড়ক তৈরি করা হবে। পুরো সড়কটি উড়াল হলে বাস্তবায়নে ৬৭ হাজার ২৫২ কোটি টাকা এবং আংশিক উড়াল ও মাটিতে হলে ২৬ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা খরচ হবে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় লাগবে চার বছর। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ সামলাতে চারলেনের পাশে ২১৭ দশমিক ৫ কিমি দৈর্ঘ্যরে নতুন সড়কটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ সড়ক নির্মাণ হলে কেউ রাস্তা পারাপার হতে পারবে না। কারণ দুদিকে বেষ্টনী থাকবে। তাই এ সড়কে ৬৪টি আন্ডারপাস (পাতাল পথ), প্রায় ১৪৫টি পদ সেতু, সাতটি ইন্টারচেঞ্জ (মূল সড়ক থেকে পার্শ্ববর্তী সড়কে যাওয়ার র‌্যাম্প) ও ১০ লেনের টোলপ্লাজা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন বাজার ও বিভিন্ন সংযোগ সড়কের অংশে যানজট এড়ানোর জন্য ১৮ কিমি উড়ালসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা আছে বলে জানানো হয়। প্রস্তাবিত এ এলাইমেন্টে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। তাছাড়া পুরো মহাসড়ককে ‘ইন্টেলিজ্যান্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের’ মধ্যে থাকবে, যাতে পুরো মহাসড়কে নজরদারি করা যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামে বন্দর থাকার কারণে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক হয়েছে। তাই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ চট্টগ্রামের সঙ্গে হয়। নতুন এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতি আসবে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন। উড়ালপথে ২২৫ কিমি দীর্ঘ প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় নেমে আসবে। বুধবার সকালে সেতু ভবনে বাংলাদেশে নিযুক্ত গণচীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং চিয়াংয়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে একথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, দেশের অবকাঠামো নির্মাণে চীনের অংশগ্রহণ দীর্ঘদিনের। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জি-টু-জি ভিত্তিতে চীনের অর্থায়নে কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটিতেও চীন অর্থায়ন করবে। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অর্থনীতির লাইফ-লাইন। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যমান ইপিজেডের পাশাপাশি আরও দুটি ইপিজেড নির্মিত হলে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে গতিশীলতা বাড়বে। এ বাস্তবতায় যানবাহনের বাড়তি চাপ মোকাবেলায় সরকার ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে চীন এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রয়োজনীয় অর্থায়নে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে। এ সময় সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পে ফান্ডের প্রস্তাব আমাদের কাছে আছে। বিওওটি করার চিন্তাভাবনা আছে। প্রাথমিকভাবে চীন থেকে একটি পজিটিভ সিগন্যাল পেয়েছি, তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এতে ১১ বিলিয়ন ডলারের মতো খরচ হবে। মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমাকে অভিনন্দন জানানোর জন্য তারা এসেছেন। এ সময় সমসাময়িক কথা হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শিং জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় যে চুক্তি ও এমওইউ হয়েছে সেসব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ প্রকল্পগুলো যাতে ত্বরান্বিত করা যায় সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রসঙ্গে কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, আমাদের সঙ্গে সম্পর্কের কোন পরিবর্তন হবে না, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে। সাক্ষাতের বিষয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং জিয়ান জানান, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের পর দলে নতুন দায়িত্ব পাওয়ায় তারা ওবায়দুল কাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের সময় যেসব চুক্তি হয়েছে সেগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় এবং বন্ধুত্ব কিভাবে আরও এগিয়ে নেয়া যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
×