ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভিআইসি কার্যক্রম উদ্বোধন করলেন সড়কমন্ত্রী

যানবাহনের ফিটনেস সনদ দেয়া হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

যানবাহনের ফিটনেস সনদ দেয়া হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ম্যানুয়েল পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আসছে যানবাহনের ফিটনেস সনদ প্রদান কার্যক্রম। এ লক্ষ্যে মিরপুরে স্থাপন করা হয়েছে ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার বা ভিআইসি। বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি আনুষ্ঠানিকভাবে মিরপুর বিআরটিএ অফিস চত্বরে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস সনদ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি একটি গাড়ির ডিজিটাল ফিটনেস পরীক্ষা শেষে সনদ বিতরণ কাজ প্রত্যক্ষ করেন। পর্যায়ক্রমে এই সেবা আরও চারটি বিআরটিএ কার্যালয়ে চালু করার কথা রয়েছে। ১৬ বছর ধরে ভিআইসি সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চলতি মাসেই জনকণ্ঠে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পর পরই টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। যার ধারাবাহিকতায় পুরনো মেশিন আবারও নতুন করে মেরামত করার পর চালু করা হলো। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এতে সেবার মান বাড়বে। আন্তর্জাতিক মানদ-ে পরিবহনের ফিটনেস সনদ দেয়া সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তারা। ভিআইসি উদ্বোধনকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ একাব্বর হোসেন এমপি, ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার, সংসদ সদস্য নাজমুল ইসলাম, সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত সিওং-ডু এবং কোরিয়ার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা-কোইকা’র কান্ট্রি ডিরেক্টর জো হুনগু উপস্থিত ছিলেন। ভিআইসি উদ্বোধন শেষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, বিআরটিএ’কে ঘিরে কোন সিন্ডিকেটের কারসাজি মেনে নেয়া হবে না। তিনি বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। মন্ত্রী বলেন, ফিটনেস প্রদানে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হওয়ায় দুর্নীতি কমবে ও স্বচ্ছতা বাড়বে। পর্যায়ক্রমে দেশের বিভাগীয় শহর এবং জেলা পর্যায়ে ভিআইসি স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, ভিআইসি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারের ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং কোইকা’র অনুদান ২১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আরও চারটি ভিআইসি স্থাপনে কোরিয়া অর্থায়ন করবে বলে অনুষ্ঠানে কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত জানান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম, ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক কায়কোবাদ হোসেনসহ পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ১৯৯৯ সালে ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) নামে একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র দিয়ে ফিটনেস পরীক্ষা নেয়া শুরু করেছিল বিআরটিএ। এই যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষার সময় ৭০ শতাংশ যান্ত্রিক যানই ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। সে সময় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় বিআরটিএ মিরপুর ও ইকুরিয়াসহ পাঁচটি কার্যালয়ে ভিআইসি যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছিল। অভিযোগ আছে, যন্ত্রগুলো কয়েক মাসের মধ্যে অকেজো করে ফেলা হয়। বিআরটিএর সূত্র জানায়, প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে ৫টি যন্ত্র বসানো হয়েছিল। এরমধ্যে মিরপুর কার্যালয়ে স্থাপিত যন্ত্রটি কেনা হয়েছিল ৪০ কোটি টাকায়। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত থাকায় যন্ত্রগুলো প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। যে কারণে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও এক্সিডেন্ট বিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক শামসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, ২০০০ সালে বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ে ৪০কোটি টাকা ব্যয়ে ভিআইসি মেশিন কেনা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই মেশিন বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর থেকে আবারও চোখের দেখায় গাড়ির ফিটনেস সনদ দেয়া হয়। এভাবে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, একে একে পাঁচটি অফিসের মেশিন বন্ধ করে দেয়ার পর বছরের পর বছর এভাবেই চলে। কারও কোন জবাবদিহিতা নেই। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হলো না। অথচ বিশ্বের কোন দেশেই চোখে দেখে ফিটনেস দেয়ার প্রথা নেই। পরিবহন সেক্টরের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, পদ্ধতিগত উন্নয়ন না হলে কেবল দুনীতিই হবে ॥ কোন উন্নতি হবে না। একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, বিআরটিএ পরিবহন ফিটনেস শাখা ও ড্রাইভিং শাখা দুটোই হয়রানিমূলক, দুর্নীতিগ্রস্ত। এসব নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের কোন শেষ নেই। তাছাড়া ত্রুটিমুক্ত যানবাহন নিশ্চিত হলে সড়ক নিরাপত্তাও বাড়বে। এতে দুর্ঘটনার হার অনেকটাই কমে আসবে। এজন্য ভিআইসি চালুর কোন বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি।
×