স্টাফ রিপোর্টার ॥ সমাজ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে মিডিয়াকে পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ। একই সঙ্গে মিডিয়া যদি দুর্নীতি কমাতে তাকে সাহায্য না করে দূরে সরে চলে যায় তাহলে তিনিও দুদক ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে তথ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সমাজ থেকে একসঙ্গে দুর্নীতি কমানো বা নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে দুর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে আনতে যা যা প্রয়োজন তাই করা হচ্ছে ও হবে। তিনি বলেন, নেতৃত্বের ধরন ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন ছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব না। দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি। আমাদের দেশে দুর্নীতি কমাতে হলে সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। আমি রাষ্ট্রপতিকে বলেছি প্রতিটি সংগঠনের সিস্টেমে পরিবর্তন আনতে হবে তাহলেই দেশে দুর্নীতির হার কমে আসবে।
চেয়ারম্যান বলেন, দুদকে এখনও দুষ্টচক্র জড়িত রয়েছে। যারা সুযোগ বুঝে দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট নানা অবৈধ কাজে জড়িত হয়ে পড়ছে। চক্রটি আমার অনুপস্থিতিতেই বিভিন্ন অনুসন্ধান কার্যক্রমও পর্যন্ত বন্ধ করে দিচ্ছে। এ চক্রকে ধরতে দুদক অতি গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ২৫ সেপ্টেম্বর চাঁদা প্রদান না করার অভিযোগে ময়মনসিংহের একটি স্কুলের নির্মাণ কার্যক্রম প্রায় দেড় মাস বন্ধ রেখেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য। এ বিষয়ে কমিশনের উপ-পরিচালক এস এম রফিকুল ইসলামকে তা অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে আমি দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় গত ১০ অক্টোবর এই অনুসন্ধান কার্যক্রমটি বন্ধ করে দেয়া হয়। আমি বিস্মিত হয়েছি যে, যেখানে আমি নিজে বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশ দিয়েছি সেখানে কীভাবে এর অনুসন্ধান কার্যক্রম আমাকে না বলে বন্ধ করে দেয়া হলো? মূলত এর পেছনে একটি দুষ্টচক্র কাজ করছে। আমরা তাদের ধরতে কাজ করছি। এরপর বিষয়টির পুনঃতদন্তের জন্য মহাপরিচালক মনির চৌধুরীকে দায়িত্ব প্রদান করেছি। তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান।
মুক্ত আলোচনায় দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, প্রতিটি পত্রিকা, টিভি চ্যানেল বা কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে প্রতিটি পদক্ষেপে কিভাবে টাকা আসে যায়, কি কাজ হয় এটা তার অনলাইনে দিতে হবে তাহলেই মিডিয়ার স্বচ্ছতা আসবে। তিনি বলেন, বিজ্ঞাপন দেয়ার কোন নীতিমালা না থাকায় সরকারী পিআরওতে যারা কাজ করে তাদের প্রতিমাসে ঘুষ দিয়ে আমাদের বিজ্ঞাপন নিতে হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান। তথ্যসচিব মরতুজা আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিআইবির মহাপরিচালক মোঃ শাহ আলমগীর, এছাড়া সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারসহ বিভিন্ন মিডিয়ার প্রধানগণ বক্তব্য রাখেন।