ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনার চরেও উন্নয়নের ছোঁয়া

নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব- উন্নত জীবনের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৪ অক্টোবর ২০১৬

নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব- উন্নত জীবনের স্বপ্ন

বাবু ইসলাম ॥ প্রমত্তা যমুনা। মাঝখানে বিশাল বিস্তীর্ণ চর। ভাগ্যবিড়ম্বিত, অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষের বসবাস এ চরে। খরা, জরা এবং বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা চরের এসব মানুষের কাছে নারী শিক্ষা, বৈদ্যতিক বাতি, টেলিভিশন, পাকা সড়ক, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, মার্কেট, ল্যাপটপ এসবই ছিল স্বপ্ন। কার্তিক মাস ছিল তাদের জন্য অভিশাপের মতো। সেই চরে উন্নয়নের বিপ্লব ঘটেছে। যমুনা নদীর দুর্গম চরে ইট, খোয়া, বালু ও সিমেন্ট দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে তিন তলাবিশিষ্ট দালান। পাকা সড়ক, সোলার, বিদ্যুত, মোবাইল, টিভি, ডিশ এন্টিনা, কিন্ডারগার্টেন, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, পুলিশ ফাঁড়ি সবই আছে। মোটরসাইকেল, রিক্সাভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা, ইঞ্জিনচালিত ভটভটি, ঘোড়ার গাড়ি রীতিমতো পাকা সড়ক দিয়ে চলাচল করে। গড়ে উঠেছে মার্কেট, যানবাহনের খুচরা যন্ত্রাংশ, শাড়ি, লুঙ্গি, জুতা, দুল, ফিতা, শার্টিং-স্যুটিং সবই পাওয়া যায় ওই সব মার্কেটে। মার্কেটের কোন কোন ব্যবসায়ী ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারে হিসাব-নিকাশ করেন। আধুনিক অনেক প্রযুক্তির সঙ্গেই এখন চরের মানুষ পরিচিত। পাটখড়ির বেড়ার কুঁড়েঘর বা ছন-কাইশার ছাপড়াঘর চোখেই পড়ে না। নিদেনপক্ষে দোচালা টিনের ঘরে বসবাস। ঢেঁকিতে ধান ছাঁটাই কম পরিবারেই হয়। ভ্রাম্যমাণ মেশিনে ছাঁটাই করা হয় ধান। বাল্যবিয়ে, অশিক্ষা দূর হয়েছে অনেক আগেই। নারী শিক্ষার হারও বেড়েছে। মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। হতদরিদ্রতা এখন শিকলে বাঁধা। শহরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চরের বেশিরভাগ মানুষ জীবনযাপন করে। উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে তর তর করে চরের মানুষ আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে। ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। এরা এখন স্বপ্ন দেখে উন্নত জীবনযাপনের। সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের দুর্গম চরাঞ্চল নাটুয়ারপাড়া সরেজমিন ঘুরে চরের মানুষের জীবনযাত্রার এমন অভাবনীয় পরিবর্তন দেখা গেছে। শুধু নাটুয়ারপাড়া নয়, কাজীপুরের চর এলাকা নিশ্চিন্তপুর, তেকানী, খাসরাজবাড়ি, চরগিরিশ, মনসুরনগর এবং মাইজবাড়ি ইউনিয়নেও অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। আর এর পেছনে অবদান রেখেছেন সিরাজগঞ্জের মাটি ও মানুষের সন্তান জাতীয় নেতা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। মাত্র পাঁচ-সাত বছর আগেও বৈদ্যতিক বাতি কী জিনিস, টেলিভিশন কেমন দেখায়, পাঁকা সড়ক, দালানকোঠা, হাসপাতালে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, মার্কেট, ল্যাপটপ এসবই ছিল চরের মানুষের কাছে স্বপ্ন। কার্তিক মাস এলেই চরের মানুষ অনাহার, অসুখ-বিসুখ এবং মৃত্যু আতঙ্কে দিন কাটাত। চরের ধু-ধু বালিয়াড়িতে ফসল ছিল না। ছিল শুধু চৈতালী ফসল। চীনা বাদাম, কাউন, তিল, ডাল, আউশ ধানের আবাদ ছাড়া কোন ফসলের মুখ দেখেনি চরের মানুষ। সেই চরে এখন নানা ফসল ফলে। যমুনার ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা হয়েছে। চরের জমি উঁচু হয়েছে। পাট, ধান (আউশ, আমন), মরিচ, কলাই, সরিষাসহ নানা ফসল উৎপাদন হয়। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কর্মমুখী হয়েছে। নারী শিক্ষার অগ্রগতি হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য নিশ্চিন্তপুর, মনসুরনগর, নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা করে ব্যয় করে তিন তলাবিশিষ্ট ১০ শয্যার মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটেছে। নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ এবং তৃণমূলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সদিচ্ছার কারণে দুর্গম চরে এমন অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের চর জীবিকায়ন প্রকল্প, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) বাড়ি উঁচুকরণ, শাকসবজির আবাদসহ হাঁস, মুরগি ও গরু-ছাগল পালন প্রকল্পে চরের মানুষের জীবনযাত্রার মান প্রাথমিক এক ধাপ এগিয়ে যায়। চরের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন নিয়ে কাজীপুর উপজেলা অওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, যমুনার ভাঙ্গনে বিপন্ন কাজীপুরের মানুষের ঠিকানা আওয়ামী লীগ, নৌকা এবং জাতীয় নেতা শহীদ এম মনসুর আলীর পরিবার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কাজীপুরবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। চরের মানুষের উন্নয়ন হয়। কাজীপুরের উন্নয়নের কথা এলেই আসে শহীদ এম মনসুর আলীর কথা। জাতীয় নেতা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং তারই সন্তান ও রাজনৈতিক উত্তরসূরি সাবেক এমপি তানভীর শাকিল জয়ের কথা। উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজীপুরের চরাঞ্চল ও সমতলভূমির মধ্যে তেমন কোন ফারাক নেই। কাজীপুরের চরের মানুষকে শুধুমাত্র প্রশাসনিক কাজে উপজেলা সদরে আাসা ছাড়া অন্য কোন কাজে আসতে হয় না।
×