ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অনুলিখন : ওয়ালীউল্লাহ মিঠু

ফিনল্যান্ডে ব্যবহারিক পড়াশোনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

ফিনল্যান্ডে ব্যবহারিক পড়াশোনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়

ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থার সুনাম বিশ্বজুড়ে। র‌্যাংকিং-এ এর অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ের। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি, ফিনল্যান্ড এবং নরওয়েতে উচ্চশিক্ষায় টিউশন ফি নেই। যা বহু দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বড় সুযোগ বলা যায়। ফিনল্যান্ডের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং র‌্যাংকিং মান শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে। এসব সুযোগকে সামনে রেখে চলতি বছরের আগস্ট মাসে ফিনল্যান্ডে পাড়ি দিই। উদ্দেশ্য একটাই- উন্নত উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ। এখানে সব মিলে বেশ ভাল আছি। তবে বাংলাদেশকে খুব মনে পড়ে। এখানকার জীবন খুবই কর্মব্যস্তময়। ক্লাস, পরীক্ষা, এসাইনমেন্টের চাপ অনেক বেশি। এখানে নিজের কাজ নিজেকে করতে হয়। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে সবকিছু। সপ্তাহের পাঁচ দিন খুব ব্যস্ততায় কাটে। অবসর সময় খুব একটা মিলে না বললেই চলে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাড়াতাড়ি নাস্তা করে ক্লাসে যেতে হয়। বেশ কয়েকটা ক্যাম্পাসে ক্লাস হয় বলে কখনও হেঁটে কিংবা সাইকেলে যেতে হয়। ক্লাস-ল্যাব করতে করতেই দুপুর হয়ে যায়। স্টুডেন্ট ক্যাফেতে স্টুডেন্ট কার্ড দেখিয়ে স্বল্প মূল্যে বুফে খাওয়া যায়। দুপুরের পরেও আবার ক্লাস থাকে। কখনও ডিপার্টমেন্টাল ক্লাস কখনও ফিনিশ ভাষা শিক্ষার ক্লাস। মাঝে মাঝে ক্লাস থেকে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। বাসায় ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে রান্না করতে হয়। কমন কিচেনে রাতে খাবার পরে আবার এ্যাসাইনমেন্ট বা প্রেজেন্টেশন নিয়ে বসতে হয়। এখানকার বাঙালী ভাইয়েরা মাঝে মাঝে তাদের বাসায় দাওয়াত দেয়। সবাই একসঙ্গে সেদিন অনেক মজা হয়। বাংলাদেশের খেলা থাকলে সবাই একসঙ্গে হয়ে খেলা দেখি। আর আর মনে মনে দিন গুণি কবে ফিরে আসব বাংলাদেশে। ফিনল্যান্ডের গ্রীষ্মের আবহাওয়া খুবই চমৎকার। আমার বিশ্ববিদ্যালয় যে শহরে তার নাম তুরকু। ফিনল্যান্ডের এক সময়কার রাজধানী। বাল্টিক সাগরের তীরে চমৎকার ছিমছাম এক শহর। ছুটির দিনে সাইকেল চালাই, মাছ ধরি। এখানে স্টুডেন্ট ভিলেজের পাশেই আছে আউরা নদী। যার তীরে বেড়াতে খুব ভাল লাগে। সময় পেলে মুভি দেখি, দেশে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটাই। এখানকার শিক্ষক-সহপাঠী সবাই বন্ধুসুলভ। গতানুগতিক পাঠদান পদ্ধতির বিপরীতে শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যত গবেষণা এবং কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করা হয়। ২০১৪ সালে নোবেলপ্রাপ্ত জার্মান বিজ্ঞানী স্টিফেন হল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাকালে ঝঞঊউ আবিষ্কার করেন। ভারত, পাকিস্তান, ইরান, বলিভিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করতে আসে। বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে আসে। বাংলাদেশ সম্পর্কে এখানকার মানুষের ধারণা খুব ভাল। বাংলাদেশের মানুষ খুব পরিশ্রমী ও শান্তিপ্রিয়। পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে বিভিন্ন ধরনের কাজ করার সুযোগ আছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়েও ল্যাব এসিস্ট্যান্ট এবং ইন্টার্নশিপ করার পার্টটাইম সুযোগ আছে। এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে দেশের অনেক পার্থক্য। এখানে ব্যবহারিক পড়াশোনার উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। মূলত বাস্তবতার নিরিখে পড়াশোনা করানো হয়। যা পরবর্তীতে কর্মজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফিনল্যান্ডে টিউশন ফি না থাকলেও আগামী বছর থেকে এই সুযোগটি আর থাকছে না। তবে আগামী বছর থেকে তারা স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছে, যে কেউ স্কলারশিপের আবেদন করে ফিনল্যান্ডে আসতে পারেন। আমি বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে এখানে আসি। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে অ্যাবো একাডেমি ইউনিভার্সিটিতে ‘বায়োমেডিকেল ইমেজিং’ এ মাস্টার্স করছি। মোঃ রাশেদুর রহমান রাশিব, শিক্ষার্থী, অ্যাবো একাডেমি ইউনিভার্সিটি, ফিনল্যান্ড
×