ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবাদিকতায় স্বাধীনতা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

সাংবাদিকতায় স্বাধীনতা

বর্তমান বিশ্বে গণমাধ্যম তথা সংবাদপত্র মানুষের প্রাত্যহিক বাস্তবতার অংশে পরিণত হয়েছে। সংবাদপত্র সমাজের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে। বাংলাদেশে সংবাদপত্রের বিকাশ নিয়ে বলা যায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তী সময়ে সংবাদপত্রের যে ভূমিকা ছিল তা ঐতিহাসিক। বিশেষত পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক আমলে মুক্তিকামী বাঙালীর যেসব আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছিল, তা সব সময় আমাদের সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ এবং প্রচার করা হয়েছে। সে সময় আমাদের যেসব প্রথিতযশা সাংবাদিক ও সম্পাদক ছিলেন, তারাও বাঙালী জাতির সব আশা-আকাক্সক্ষার সঙ্গে একাত্ম ছিলেন। যুদ্ধের সময় এ দেশ থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রের সংখ্যা ব্যাপক না থাকায় আশা-আকাক্সক্ষার তেমন প্রতিফলন ঘটেনি। কারণ দখলদার পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গণমাধ্যমকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। কিন্তু মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক চিত্র সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- পরবর্তী সামরিক জান্তা শাসকরা বাঙালী জাতির ওপর চেপে বসে, তখন আবার গণমাধ্যম তার পরিপূর্ণ স্বাধীনতা হারায়। পাকিস্তান যুগের মতোই সেন্সরশিপ আরোপিত হয়। জান্তা শাসকদের ‘প্রেস এডভাইস’ ছাড়া পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ খুব দুরূহ ছিল। পত্রিকার প্রথম পাতায় মেকআপ থেকে কোন্ সংবাদ কোথায় যাবে, সেটাও ছিল নিয়ন্ত্রিত। আর এই একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে দেখা যাচ্ছে, স্বাধীন গণমাধ্যমের অবস্থা এ দেশে অনেক ভাল। এখন তথ্য কমিশনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের তথ্যসেবা পাওয়া নিশ্চিত হয়েছে। বর্তমান সংবাদপত্রবান্ধব সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে বলেই এ ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করা যাচ্ছে। আমরা আশা করব, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সবসময় নিশ্চিত করা হবে। কারণ, সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক দেশে সাধারণ মানুষ ও সরকারের মাঝে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে। অতএব, গণমাধ্যমকে স্বাধীন রাখতে হবে সরকারের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, প্রগতির স্বার্থে এবং মতপ্রকাশের স্বার্থে। আমাদের দেশের সংবাদপত্র বিশাল ঐতিহ্যের অধিকারী। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, দেশের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ সংগ্রামে তারাও অবতীর্ণ হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় স্বৈরাচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ধর্মঘটেও যেতে হয়েছে। শাসকের চোখ রাঙানো সহ্য করতে হয়েছে। তারপরও সংবাদপত্র কর্মীরা নীতিচ্যুত যেমন হয়নি, তেমনি নতজানুও। নীতির প্রশ্নে সাংবাদিকরা সবসময় অনড়। সংবাদপত্রের নীতিমালা সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের জন্য পাকিস্তান আমলে করা হয়েছিল। সেসব মোকাবেলা করা গেছে। পঁচাত্তর পরবর্তী জান্তা শাসনকালে বঙ্গবন্ধুর নাম, হরতাল শব্দও লেখা যেত না। জোর করে নীতিমালা চাপানো হলে তার ফল যে ভাল হয় না, তা অতীতে দেখা গেছে। সংবিধানে যে অধিকার ও দায়িত্ব ঘোষিত, তারই আলোকে নীতিমালা সবসময় হওয়াই সঠিক পথ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে বলেছেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার চেয়ে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা জরুরী। সাংবাদিকরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে না। তাই সাংবাদিকদের স্বাধীনতা বেশি প্রয়োজন। আমরা মনে করি, দেশে সংবাদপত্র, টেলিভিশন, বেতার এবং অনলাইন পোর্টালের সংখ্যা অনেক; ক্রমশ তা বাড়ছে। জনগণও দ্রুত তথ্য পাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছে। এই ক্ষেত্রগুলো কোনভাবেই সঙ্কুচিত হোক তা কাম্য নয়। দেশ ও জনগণের স্বার্থে সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের বিকাশের ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতাই কাম্য।
×