ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়

সীমান্তে বিট মালিকদের কাছে জিম্মি গরু ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১১ অক্টোবর ২০১৬

সীমান্তে বিট মালিকদের কাছে জিম্মি গরু ব্যবসায়ী

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর বিভিন্ন সীমান্তে বিট (খাটাল) মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন গরু ব্যবসায়ীরা। সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন বিট মালিকরা। গরু প্রতি ৫০ টাকা আদায়ের নির্দেশনা থাকলেও আদায় করা হচ্ছে ৯০০ থেকে সাড়ে ১১০০ টাকা পর্যন্ত। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ৫০ টাকার বেশি আদায় করা হয় না বলে দাবি করেছেন রাজশাহীর চর মাজারদিয়াড় বিট মালিক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিট খাটালে গরু ঢুকলে ৫০ টাকা নেয়ার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া ওই দিন গরু চলে না গেলে নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিনের জন্য গরু প্রতি ৩০ টাকা করে আদায়ের বিধান রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী সীমান্তে অনুমোদিত বিট খাটাল রয়েছে ছয়টি। এগুলো হলো চর মাজারদিয়াড়, খানপুর, শ্যামপুর, সোনাইকান্দি, খরচাকা ও সুলতানগঞ্জ। ভারত থেকে গরু আমদানির পর প্রথমে এসব বিট খাটালে রাখা হয়। করিডরে শুল্ক পরিশোধের পর ছাড়পত্র নেয়ার পর সেখানে বিজিবি সদস্যদের উপস্থিতিতে গরুর গায়ে দেয়া হয় নম্বর। এরপর সেখান থেকে গরু হাটে নিয়ে যাওয়া হয়। গরু ব্যবসায়ীরা জানান, ছয়জনের নামে বিট খাটাল থাকলেও সবগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন আনোয়ার হোসেন নামের এক প্রভাবশালী। তার নিজ নামে রয়েছে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় বিট খাটাল চর মাজারদিয়াড়। সেখানে প্রতি সপ্তাহে ৫ থেকে ৭ হাজার গুরু আমদানি হয়ে থাকে। সামসুল, মতি, জিয়া, জোনারুল, কালু ও আসলাম বিট খাটাল মালিকদের নির্ধারিত আদায়কারী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আদায়কারী বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গরু প্রতি ২ হাজার টাকা আদায় করে তারা বিট মালিককে দেন। এরপর বিট মালিকরা করিডরের ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করে। পরে গরু হাটে পৌঁছানোর জন্য রাখালদের কাছে দেয়া হয়। হাটে গরু পৌঁচ্ছে দেয়ার জন্য রাখালরা পান ৩৫০ টাকা। আর গরুপ্রতি ফেরিঘাটের টোল দিতে হয় ১১০ টাকা ও নৌকা ভাড়া ১০০ টাকা। এই ৫৬০ টাকা রাখালদের হাতে আসে। বাকিটা বিট মালিক নেয়। যার মধ্যে ৫০০ টাকা করিডরের শুল্ক রয়েছে। গরু ব্যবসায়ী ইয়াদ আলী বলেন, গরুপ্রতি ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা করে বাধ্যতামূলক নেয়া হয়। এরমধ্যে করিডর শুল্ক ৫০০ টাকা, ফেরিঘাটের ১১০ টাকা, রাখালের ৩৫০ টাকা ও নৌকা ভাড়া ১০০ টাকা। বাকি অর্থ বিট মালিকদের পকেটে যায় বলে জানান তিনি। অপর গরু ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বলেন, তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে তারা গরু আনতে দেয় না। বিট খাটাল মালিকদের এই অরাজকতা দেখার কেউ নেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহজাহান সিরাজ বলেন, খাটালে ৫০ টাকা বিট দিয়ে একটি সিøপ নিয়ে গরুর মালিক করিডরে গিয়ে ৫০০ টাকা শুল্ক পরিষদ করে ছাড়পত্র নেবে। ওই ছাড়পত্র বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে দেখালে তারা বিট খাটালে গিয়ে গরুর গায়ে নম্বর লিখে দেবে। এরপর গরু হাটে পৌঁছানোর জন্য বিট খাটাল থেকে বের করতে পারবে, বলেন তিনি। বিজিবি কর্মকর্তা শাহজাহান সিরাজ আরও বলেন, সরকারের বেঁধে দেয়া গরুপ্রতি ৫০ টাকা বিট খাটাল মালিক নিতে পারবেন। এর বেশি আদায় করলে সেই বিট খাটাল মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও অনুমোদন বাতিল করা হবে বলে জানান তিনি।
×