ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৩৪ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সমতায় ফিরল বাংলাদেশ

জয় মাশরাফির হাতেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১০ অক্টোবর ২০১৬

জয় মাশরাফির হাতেই

মিথুন আশরাফ ॥ সিরিজ হার থেকে বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দিলেন মাশরাফি। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর দুর্দান্ত বোলিংয়েই ইংল্যান্ডকে ধরাশায়ী করা গেছে। তার সঙ্গে তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংও জয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ব্যাটিংয়ে খারাপ হলেও বোলারদের অসাধারণ বোলিংয়ের জোরেই ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। রবিবার ৩৪ রানের দুর্দান্ত জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সমতাও আনল মাশরাফিবাহিনী। এখন সিরিজে ১-১ সমতা এসেছে। চট্টগ্রামে বুধবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে যে দল জিতবে, তারাই সিরিজ মুঠোবন্ধী করবে। তামিম, সাকিব, মুশফিক- এ তিন ক্রিকেটার হচ্ছেন দলের কা-ারী অথচ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে তারাই কিনা নিষ্প্রভ। এ তিন ক্রিকেটার বড় ইনিংস করে গেলে স্কোরবোর্ডও অনেক মজবুত দেখায়। অন্য ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসও বাড়ে। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তারা কিছুই করতে পারলেন না। মাঝপথে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৭৫) ও শেষে মাশরাফি বিন মর্তুজা (৪৪) ব্যাট হাতে ঝলক না দেখালে ৮ উইকেট হারিয়ে যে ৫০ ওভারে ২৩৮ রান করেছে বাংলাদেশ, তাও হতো না। তবুও এ রানে জেতা সম্ভব? এ প্রশ্ন উঠেছিল। তবে প্রথম ওয়ানডেতে ২১ রানে হারের পর দুই পেসার মাশরাফি (৪/২৯) ও তাসকিনের (৩/৪৭) দুর্দান্ত বোলিংয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিতে গেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের শুধু অধিনায়ক জস বাটলার (৫৭) প্রতিরোধ গড়তে পেরেছেন। শেষপর্যন্ত ৪৪.৪ ওভারে ২০৪ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। টস হারার পর ম্যাচ শুরুর আগে মোশাররফ হোসেন রুবেলের পরিবর্তে নাসির হোসেনকে দলে নেয়ার কথা ধারাভাষ্যকার নাসির হুসেইনকে জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। সঙ্গে দিনটি যেন বাংলাদেশেরই হয়, সেই আশাও প্রকাশ করেন। বলেন, ‘প্রথম ওয়ানডেতে তিনটি ক্যাচ মিস আমাদের ক্ষতি করেছে। আশা করছি, আমরা এবার (দ্বিতীয় ওয়ানডেতে) ভাল কিছু করতে পারব।’ সেই ভালটা ব্যাটিংয়ে মিলল না। তবে বোলিংয়ে মিলেছে। আর তাতে জয়ও মিলেছে। প্রথম ওভারেই সাকিবের হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি। প্রথম বলেই এলবিডাব্লিউ হওয়ার সম্ভাবনা জাগে! কিন্তু হয়নি। তবে ১৪ রানেই ভিঞ্চকে (৫) মাশরাফি ও ডাকেটকে সাকিব আউট করে দেন। আর ১০ যোগ হতেই আবারও মাশরাফির রাজত্ব দেখা যায়। এবার জেসন রয়কে (১৩) সাজঘরে ফেরান মাশরাফি। ২ রান যোগ হতেই আবার প্রথম ওয়ানডের সেঞ্চুরিয়ান বেন স্টোকসকেও একই পথের পথিক বানান। ৪ উইকেট দ্রুতই ফেলে দেয়ায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতেই চলে আসে। এর মধ্যে ৩ উইকেটই নেন মাশরাফি। ইংল্যান্ড চাপে পড়ে যায়। তবে ১৫ ওভারে দুই দলের হিসেবে কিন্তু সমান-সমান অবস্থানই বলা চলে। এ সময়ে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ৫০ রান করে। আর ইংল্যান্ড একটি উইকেট বেশি হারায়। ৬৫ রান করে। সাকিব টানা ৭ ওভার ও মাশরাফি টানা ৬ ওভার বোলিং করে। কিন্তু এরপর বোলার পরিবর্তন হতেই যেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা জেঁকে বসেন। তাসকিনের করা ১৭তম ওভারে তো বাটলার তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান। বেয়ারস্টো ও বাটলার মিলে ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। ২২ ওভারেই ১০০ রানও হয়ে যায়। অবশেষে ব্রেক থ্রু এনে দেন পেসার তাসকিন। বেয়ারস্টো-বাটলার মিলে যখন পঞ্চম উইকেটে ৭৯ রানের জুটি গড়েন, দলের স্কোরবোর্ডে ১০৫ রান জমা থাকে; এমন সময়ে বেয়ারস্টোকে (৩৫) আউট করে দেন তাসকিন। আর ১৫ রান যোগ হতেই নাসিরের বলে মঈন আলীর (৪) দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন সাকিব। ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ায় ইংল্যান্ডের জয়ের সব সম্ভাবনাই যেন শেষ হয়ে যায়। ১২৩ রানের সময় যখন ৫৭ রান করা জস বাটলারকেও এলবিডাব্লিউ করে দেন তাসকিন, তখন ইংল্যান্ডের জয়ের স্বপ্নের মৃত্যুই ঘটে যায়। ‘রিভিউ’ নিয়ে এবার বাজিমাত করে বাংলাদেশ। সাজঘরে ফেরার আগে মেজাজ হারিয়ে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে খানিক তর্কেও জড়িয়ে যান বাটলার। বাংলাদেশের জয় যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ১৩২ রানের সময় ওকসকেও (৭) সাজঘরে ফেরান তাসকিন। এরপর ‘রিভিউ’য়ের মাধ্যমে আরেকটি সুযোগ নিয়েছিলেন তাসকিন। কিন্তু ব্যাট-প্যাড হওয়ায় উইলি এলবিডাব্লিউ হননি। তবে ১৫৯ রানে গিয়ে মোসাদ্দেকের বলে ঠিকই এলবিডাব্লিউ হন উইলি (৯)। হাতে থাকে আর এক উইকেট। ২০৪ রানে গিয়ে জ্যাক বলকে (২৮) আউট করে দেন মাশরাফি। তাতে অলআউটও হয়ে যায় ইংল্যান্ড। মাঝপথে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৭৫) দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন। শেষে গিয়ে মাশরাফি বিন মর্তুজা (৪৪) অসাধারণ ব্যাটিং করেন। এর সঙ্গে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ২৯ ও গতবছর নবেম্বরের পর আবার ওয়ানডে খেলার সুযোগ পাওয়া নাসির হোসেন অপরাজিত ২৭ রান করেন। এ চারজন ব্যাট হাতে জ্বলে না উঠলে বিপদই ছিল। যতই স্লো উইকেট হোক। রান করা কঠিন হোক। ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে যে দুর্বার সাফল্য পাচ্ছে দিনকে দিন, তাতে ২৩৯ রান তোলা তো কঠিন কাজ নয়। কিন্তু বাংলাদেশ বোলাররা বুঝিয়ে দিলেন, অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে ইংল্যান্ডকে। এখন তৃতীয় ওয়ানডেতে হারাতে পারলে তো সিরিজে বাংলাদেশেরই জয় হয়ে যাবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তিন নম্বর উইকেটে খেলা হয়েছে। ২০৮ রানের বেশি করা যায়নি। সেই ম্যাচেও তামিম, সাকিব, মুশফিক ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি। বাংলাদেশও হারে। আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ভুগতে ভুগতে জিতে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারায় সিরিজে সমতা আসে। সিরিজ হারের সম্ভাবনাতেই পড়ে যায়। অবশেষে তৃতীয় ওয়ানডেতে ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিংয়ে ফেরেন। বাংলাদেশও জিতে সিরিজ মুঠোবন্ধী করে। তবে ইংল্যান্ডদের আর সেই সুযোগ দেয়নি বাংলাদেশ। ইংলিশদের বিপক্ষেও তৃতীয় উইকেটে খেলা হলো। এবারও ব্যর্থ হলেন তামিম, সাকিব, মুশফিক। তবে মাহমুদুল্লাহ, মাশরাফি, মোসাদ্দেক ও নাসিরের ব্যাটিংয়ে ৩০ রান বেশি করতে পারল বাংলাদেশ। কিন্তু দলটি এবার আফগানিস্তান নয়। এবার প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ইংল্যান্ড। যে দলটির ব্যাটসম্যানরা উইকেট যেমনই হোক, উইকেট আঁকড়ে থেকে রান তোলায় পটু। তাই ভয়ও থাকে। শেষ পর্যন্ত ভয়কে জয় করে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বিশেষ করে তামিম, সাকিব, মুশফিকের মধ্যে এই ‘পটু’ ভাব কেন আসছে না, সেটিই প্রশ্ন। তামিম, সাকিব, মুশফিকÑ তিনজনই দেড় শ’ ওয়ানডের বেশি খেলা ক্রিকেটার। অভিজ্ঞতাও প্রচুর। ম্যাচের গুরুত্ব, প্রয়োজন; না বোঝার কথা নয়। সেই তুলনায় ইংলিশ দলের কোন ব্যাটসম্যানই এক শ’ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতাও নেই। তারা পারলে, বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা, বিশেষ করে তামিম, সাকিব, মুশফিক কেন পারবেন না? দলের স্কোরবোর্ডে ৩৯ রান যোগ হতেই ইমরুল (১১), তামিম (১৪), সাব্বির (৩) আউট হয়ে গেলেন। দল পড়ে গেল বিপাকে। এরপর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে মুশফিক চতুর্থ উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়লেন। কিন্তু নিজের স্কোরটি ৩০ রানের ঘরেও নিতে পারলেন না মুশফিক (২১)। আবারও ব্যর্থ হয়ে, দলকে খাদের কিনারায় ফেলে সাজঘরে ফিরলেন। সাকিব (৩) নেমেই আবার আউট! দল তখন ১১৩ রানে। দুই শ’ রান স্কোরবোর্ডে জমা করা যাবে, সেই সম্ভাবনাই তো শঙ্কায় পড়ে গেল। মাহমুদুল্লাহ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত মিলে ষষ্ঠ উইকেটে ৪৮ রানের জুটি ও নাসির হোসেন-মাশরাফি মিলে অষ্টম উইকেটে ৬৯ রানের জুটি না গড়লে তা হতোও না। দলের ১৬১ রানের সময় ৭৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে আউট হলেন মাহমুদুল্লাহ। ৮ রান যোগ হতেই মোসাদ্দেকও আউট হয়ে গেলেন। তখনও বিপদেই পড়ে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু মাশরাফি এমন ঝড়ো ইনিংসই খেলেন যে, ২৯ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৪ রান করে আউট হন। ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন। ২০০৭ সালের পর আবারও ৪০ রানের বেশি স্কোর করেন মাশরাফি। তাতে দলও ২০০ রানের বেশি করে। ২৩৮ রানে যেতে পারে। এই রানেই শেষ পর্যন্ত জয় মিলে। মাশরাফির ব্যাটিং-বোলিং ঝড়েই উড়ে যায় ইংল্যান্ড।
×