ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শঙ্খ-উলুধ্বনি স্তব স্তুতিতে মুখর হবে সারাদেশের ৩ হাজার মণ্ডপ

আজ রামকৃষ্ণ মিশনে সাড়ম্বরে উদ্যাপন হবে কুমারী পূজা

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৯ অক্টোবর ২০১৬

আজ রামকৃষ্ণ মিশনে সাড়ম্বরে উদ্যাপন হবে কুমারী পূজা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে অনুষ্ঠিত হবে কুমারীপূজা। দুর্গা মাতৃভাবের প্রতীক আর কুমারী নারীর প্রতীক। কুমারীর মধ্যে মাতৃভাব প্রতিষ্ঠাই এ পূজার মূল লক্ষ্য। দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিনে মহাসপ্তমীতে রাজধানীতে জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এসময় বলেন, সকল ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন বাংলাদেশে। শনিবার সারাদেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় মর্যাদায় উদযাপিত হয়েছে মহাসপ্তমী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে লালবাগের ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে এসে একথা বলেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডিএন চ্যাটার্জী, কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার পাল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, এলাকার সাংসদ হাজী সেলিম, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেনগুপ্ত বক্তব্য রাখেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সেবায়েত প্রদীপ কুমার চক্রবর্তীসহ মন্দিরে আগত ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধে এদেশের প্রতিটি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষ এক হয়ে যুদ্ধ করে এ দেশকে স্বাধীন করেছে। সকলের রক্ত একাকার হয়ে মিশে গেছে এ দেশের মাটিতে। মুসলিম, হিন্দু, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ সকলে এ দেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে। তাই সকল ধর্মের মানুষ তাদের এই দেশটাতে ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী পরে রাজধানীর টিকাটুলীর রামকৃষ্ণ মিশন পূজা ম-পও পরিদর্শন করেন। দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিনে শনিবার সারাদেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় মর্যাদায় উদযাপিত হয়েছে মহাসপ্তমী। নবপত্রিকা স্থাপনের মধ্যদিয়ে মহাশক্তি আনন্দময়ীর পূজা শুরু হয়। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে দেবীর পূজা হয়। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। সেই সঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করেন ভক্তরা। সকালে পূজা শুরু হলেও দুপুরের পর থেকে ম-পগুলোতে ঢল নামে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নন, সব ধর্মের দর্শনার্থীরাই ম-পে ম-পে প্রতিমা দেখতে ভিড় করেন। তুলনামূলকভাবে তাপমাত্রা কম থাকায় স্বস্তিতে ছিলেন দর্শনার্থীরা। কোন কোন সময় আকাশ ভিজে যাওয়ায় কিছুটা বিপত্তি ঘটলেও তা ছিল ক্ষণিকের। এদিন রমনা কালীমন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, স্বামীবাগ লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম, ধানম-ি কলাবাগান মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলো, বাংলাবাজার পূজা কমিটি, নর্থব্রুক হল রোড, প্রতিদ্বন্দ্বী পূজা ম-প, তাঁতীবাজার পূজা কমিটি, শঙ্ঘমিত্র শাঁখারীবাজার, পানিটোলা, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান কমিটি, হাজারীবাগ সুইপার কলোনি, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, আজিমপুর সার্বজনীন পূজা ম-প বনানী পূজা ম-প, গৌতম মন্দির, ভোলাগিরি আশ্রমসহ বিভিন্ন পূজা ম-পে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, সন্ধ্যা আরতিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ রবিবার মহাষ্টমী। প্রতি বছরের মতো এবারও মহাষ্টমীতে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে অনুষ্ঠিত হবে কুমারীপূজা। রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে আজ পূজা শুরু হবে সকাল সাড়ে ছয়টায়। এগারোটায় কুমারীপূজা ও রাত দশটা ৩৭ মিনিটে শুরু হবে সন্ধিপূজা। পূজা দেখার জন্য বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণায়, শঙ্খ, উলুধ্বনি আর মায়ের স্তব-স্তুতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে উৎসব অঙ্গন। দুর্গাপূজার অন্যতম বৈশিষ্ট্য কুমারী পূজা। দেবী পুরাণে কুমারী পূজার সুষ্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। কুমারী পূজা কেন করা হয়, এ প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলেছেন, সব স্ত্রীলোক ভগবতীর একেকটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশে প্রকাশ। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী জাতি হয়ে উঠবে পুত পবিত্র ও মাতৃভাবাপন্ন। প্রত্যেকে শ্রদ্ধাশীল হবে নারী জাতির প্রতি। আজকের কুমারীপূজা নিয়ে ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ বলেন, যে জগতমাতাকে (দেবী দুর্গা) আমরা আরাধনা করি তিনি সকল নারীর মধ্যে মাতৃরূপে আছেন। এ উপলব্ধি সকলের মধ্যে জাগ্রত করার জন্যই কুমারী পূজা হয়ে থাকে। দুর্গা মাতৃভাবের প্রতীক আর কুমারী নারীর প্রতীক। কুমারীর মধ্যে মাতৃভাব প্রতিষ্ঠাই এ পূজার মূল লক্ষ্য। ১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুড় মঠে নয়জন কুমারী পূজার মাধ্যমে এর পুনর্প্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে। পূজার আগ পর্যন্ত কুমারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। এছাড়াও নির্বাচিত কুমারী পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন আচার-অনুষ্ঠান করতে পারে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কেন্দ্রীয় পূজাম-পে সকাল নয়টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহাষ্টমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধিপূজা শুরু হবে সন্ধ্যা পাঁচটা ৩৯ মিনিটে। দুপুরে বিতরণ করা হবে মহাপ্রসাদ। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যমতে, সারাদেশে ২৯ হাজার ৩৯৫ পূজা ম-পে এবারের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
×