ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

৩৫ হাজার বাড়তি নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ

দুর্গোৎসবে সারাদেশে নজিরবিহীন নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৬ অক্টোবর ২০১৬

দুর্গোৎসবে সারাদেশে নজিরবিহীন নিরাপত্তা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসবে সারাদেশে থাকছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা। পূজা উপলক্ষে কোন ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিজয়া দশমীর দিন রাত নয়টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে। দশমীর শোভাযাত্রায় বাইর থেকে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের মন্দির থেকে যোগ দিতে হবে। পূজায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ৩৫ হাজার বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শারদীয় দুর্গোৎসবে যে কোন ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সারাদেশের বিভাগ, জেলা ও মহানগর পর্যায়ে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এমন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে র‌্যাবের তরফ থেকেও। এবার সারাদেশে প্রায় সাড়ে ২৯ হাজার ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যা বিগত যে কোন বছরের তুলনায় বেশি। গুরুত্বপূর্ণ ম-পের প্রবেশদ্বারে বসানো হচ্ছে একাধিক আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর ও গোপন মুভি ক্যামেরা। ম-পগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লোডশেডিং রোধে প্রস্তুত রাখা হয়েছে শক্তিশালী জেনারেটর। যানজট নিরসনে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে বুধবার ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, এবার পূজায় কোন ধরনের জঙ্গী হামলার আশঙ্কা বা হুমকি নেই। গত বছর হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তিদের ওপর জঙ্গী হামলার প্রেক্ষাপটে এবার পূজার সময় সরকারের তরফ থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর ২২৬টি ম-পকে আলাদা আলাদা শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। নিরাপত্তার দিক থেকে ঢাকেশ্বরী, রামকৃষ্ণ, ধানম-ি ও বনানী ম-পকে এ ক্যাটগরিতে, কালীমন্দির, সিদ্ধেশ্বরী ও উত্তরার ম-পকে বি ক্যাটাগরিতে, ৮৮টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ৮৩টি তুলনামূলক কমগুরুত্বপূর্ণ এবং ৪৮টি ম-পকে সাধারণ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। কমিশনার বলেন, প্রত্যেক ম-পে সিসি-ক্যামেরা, প্রবেশ পথে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। পূজা ম-পের ভেতরে ব্যাগ, ছুরি, কাঁচি বা দাহ্য কিছু নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাজধানীর পূজা ম-পগুলোর সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রমনা ও ঢাকেশ্বরীতে দুটি অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হবে। ম-পসহ পুরো এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। এছাড়া প্রতিটি ম-পে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে নিরাপত্তা কমিটি করা হয়েছে। দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রায় বাইরে থেকে কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। মূল শোভাযাত্রার সঙ্গে বিসর্জন দিতে হলে আগেই ঢাকেশ্বরীসহ নির্দিষ্ট ম-প থেকে যুক্ত হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে ব্লগার, লেখক, প্রকাশক হত্যা, গুলশানের হলি আর্টিজানে দুই পুলিশ কর্মকর্তা, ১৭ বিদেশী ও তিন বাংলাদেশীকে জঙ্গী কর্তৃক হত্যা এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতে জঙ্গী হামলায় দুই পুলিশ নিহত হওয়ার জের ধরে এবার পূজায় সর্বকালের নজিরবিহীন নিরাপত্তা থাকছে। পূজা ম-পে যে কোন ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা ও মহানগরে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। সর্বস্তরের নাগরিকদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে তথ্য সরবরাহ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য ছাড়াও গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিট। ম-পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি কাজ করছেন। প্রতিটি ম-পের আশপাশে থাকা সুউচ্চ ভবনগুলোতে বসেছে ওয়াচ টাওয়ার। সেখানে অতি শক্তিশালী বাইন্যুকুলার নিয়ে পুরো এলাকার ওপর নজরদারি করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চৌকস সদস্যরা। সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা জিনিসপত্র নজরে আসামাত্রই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তার তথ্য উদঘাটনে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করছেন। বসানো হয়েছে পর্যাপ্ত আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর। প্রতিটি পূজা ম-পে ও তার আশপাশে অতিরিক্ত গোয়েন্দারা নজরদারি করছেন। রামকৃষ্ণ মিশনে নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা। রামকৃষ্ণ মিশন ছাড়াও ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ গুরুত্বপূর্ণ ম-পগুলোতে বসছে একাধিক আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর। গোপন মুভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে মন্দির ও তার আশপাশের এলাকায়। প্রায় প্রতিটি মানুষের ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। বেশিরভাগ পূজা ম-পে ডগ স্কোয়াডের পাশাপাশি বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট তল্লাশি চালাচ্ছে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি উপ-পুলিশ কমিশনারকে নিজ নিজ এলাকার পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে সভা করে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইতোমধ্যেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। লালবাগ ও ওয়ারী বিভাগে নৌ-টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিজয়া দশমীর দিন প্রস্তুত থাকবে ডুবুরি দল। মেয়েদের উত্ত্যক্ত (ইভটিজিং) রোধে সাদা পোশাকে পুরুষ ও মহিলা পুলিশ বিভিন্ন পূজা ম-পে টহল দিচ্ছেন। ছিনতাই রোধে কমিউনিটি পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা উপলক্ষে আগ থেকেই কাজ করছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। পাশাপাশি থাকছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা। বিজয়া শোভাযাত্রাটি যেন ক্রসিং পয়েন্টগুলো দিয়ে নির্বিঘেœ যেতে পারে, এজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা থাকছে। পূজা চলাকালে ও বিসর্জনের দিন মাত্রাতিরিক্ত আনন্দ উৎসব যাতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। বিসর্জনের সময় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে। পূজায় জঙ্গী বা সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার বিষয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল বলেছেন, তারা আতঙ্কিত না হলেও শঙ্কামুক্ত নন।
×