ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

একটি সেন্টার থেকে সব ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে

বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ৫ অক্টোবর ২০১৬

বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ সরকারী সেবা পেতে বিনিয়োগকারীদের জন্য এবার ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এই আইনের আওতায় একটি সেন্টার থেকেই উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সেবা-সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। একজন উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করতে গেলে প্রাথমিক পর্যায়ে ১২ ধরনের সেবার প্রয়োজন হয়। যদিও সরকারী সেবা পেতে প্রতিটি ধাপে হয়রানির মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। উদ্যোক্তাদের মতে, দেশে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না হওয়ার মূলে প্রধান সমস্যা হচ্ছে চাহিদা মতো সেবা না পাওয়া। তবে ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইনে এই সেবাগুলো নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে আইনটি চূড়ান্ত করেছে সরকার। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাণিজ্য বিষয়ক আরও তিন আইন যথা-কোম্পানি আইন, বাণিজ্য সংগঠন আইন এবং সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। দ্রুত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই আইনের খসড়া প্রণয়নের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব এবং বেপজার চেয়ারম্যানের অংশগ্রহণে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের ধারণাপত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে ১২ ধরনের বিনিয়োগ সেবা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ক্লিয়ারেন্স, সার্টিফিকেট, সার্টিফিকেট অব অরিজিন, ক্যাপিটাল ও ডিভিডেন্স রিপ্যাট্রিয়েশনের পারমিট, বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স, অনুমতিপত্র, ওয়ার্কপারমিট, পরিবেশগত ছাড়পত্র, নিবাসী ও অনিবাসী ভিসা প্রক্রিয়াকরণ, আর্থিক সুবিধা, ট্যাক্স ও ফি থেকে অব্যাহতি, ইউটিলিটি সার্ভিস ও প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ আইন ও বিধি-বিধানের আলোকে ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কারণে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রায় বিলম্ব ঘটছে। এ প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগ ও শিল্প স্থাপনসহ পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সেবাগুলো নির্ধারিত সময়ে নিশ্চিত করার বিধান সংবলিত একটি আইন করা উচিত বলে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত কমিটির একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ওয়ানস্টপ সার্ভিসের বিষয়টি দেশে নতুন নয়। বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই সরকারী সেবা পেতে ওয়ানস্টপ সার্ভিসের কথা বলে আসছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য দেশে এ সংক্রান্ত কোন আইন এতদিন করা হয়নি। যা হয়েছে তা সবই মুখে মুখে। এজন্য এবার বিনিয়োগ আকর্ষণে ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্যই আইনটি করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে-এই আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। তিনি বলেন, অর্থ ও বাণিজ্য সংক্রান্ত আরও তিনটি আইন নিয়ে কাজ করছে সরকার। এই আইনগুলো চূড়ান্ত করে তা এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এদিকে, বাংলাদেশ ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইনে-বেজা এবং বেপজা হাইটেক পার্ক, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সরকারের বিবেচনায় প্রয়োজন-এমন অন্যান্য কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন ওয়ানস্টপ সার্ভিস দ্বারা সেবা প্রদান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এই আইন প্রয়োগ হতে পারে। ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের এক বা একাধিক সেন্টার থাকতে পারে। যার মাধ্যমে সব আবেদন গ্রহণ, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পাঠানো এবং ওই ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত অনুমতি-চাহিদা-সিদ্ধান্ত আবেদনকারীদের অবহিত করা যেতে পারে। এছাড়া ওয়ানস্টপ সার্ভিস থেকে প্রাপ্ত আবেদনগুলো নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সেবাপ্রদানকারী কর্তৃপক্ষ দ্বারা মনোনীত বা সরকার কর্তৃক প্রেষণে নিয়োজিত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে সেবাসংক্রান্ত আবেদন নিষ্পত্তির নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রদান করা হতে পারে। জানা গেছে, সরকারী প্রতিষ্ঠান বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিনিয়োগে চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা করতে পারে না। উপরন্তু নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বিনিয়োগ বাড়াতে স্বচ্ছ এবং সহায়ক আইনী পরিবেশ তৈরি করা অপরিহার্য্য হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি বিদেশী বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশের আইনী পরিবেশ শীর্ষক এক সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সরকার বিনিয়োগ চায়। এ জন্য অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। বিনিয়োগে বিদ্যমান সঙ্কট দূর করতে নতুন আইন করছে সরকার। বিনিয়োগ বোর্ড এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে একীভূত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত এ প্রতিষ্ঠানে ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে বিনিয়োগের আইনী সমস্যা সমাধান দেয়া হবে। শুধু তাই নয়, আইনী পরিবেশ সুরক্ষায় কোম্পানি আইনও সংশোধন করা হচ্ছে। এ আইনটিও মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, শীঘ্রই নতুন কাস্টমস এ্যাক্ট করা হবে। এ সংক্রান্ত অন্যান্য আইনেরও প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। জানা গেছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কোম্পানি আইন, বাণিজ্য সংগঠন আইন, সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট প্রণয়ন করা হচ্ছে। কোম্পানি আইনকে নতুন করে সংস্কারের জন্য বাণিজ্য সচিবকে প্রধান করে গত ২০১১ সালে ১২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রধান ছিলেন তখনকার বাণিজ্য সচিব গোলাম হোসেন। সেই সময় তিনটি আইনে জনগণের মতামত গ্রহণের জন্য ওয়েব সাইটে উন্মুক্ত করা হয়। ইতোমধ্যে কোম্পানি আইন সংশোধন ও প্রণয়নের জন্য আইনজীবীদের মতামত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া কো-অপারেটিভ সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংগঠন পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনতে সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট প্রণয়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ খসড়ার ওপর জনমতও নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ আইনটি ১৮৬০ সালের। সমাজসেবার নাম ভাঙ্গিয়ে অন্য কিছু করার পথ বন্ধ করতে এই আইনটি বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর বাণিজ্য সংগঠন আইন-২০১১ এর খসড়া প্রায় চূড়ান্ত অবস্থায় রয়েছে। ওই খসড়া আইনে আরও কিছু সংশোধনী আনা হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ দেশে বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আইনী কাঠামোতে সমস্যার কারণে তা হচ্ছে না। ব্যবসাবাণিজ্য সংক্রান্ত বিদ্যমান কিছু আইন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এ বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
×