ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে দু’ওয়ার্ডে দেয়া হবে পরীক্ষামূলক

প্রথম স্মার্টকার্ড পাচ্ছে ছিটমহলবাসী ৩ অক্টোবর

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

প্রথম স্মার্টকার্ড পাচ্ছে ছিটমহলবাসী ৩ অক্টোবর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত বছর ৩১ জুলাইয়ের আগে যাদের কোন পরিচয় ছিল না, কাটিয়েছে বন্দী জীবন, সবার আগে এখন তারাই পাচ্ছেন জাতীয় স্মার্টকার্ড। আগামী ৩ অক্টোবর ছিটমহলবাসীদের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসি সূত্রে জানা গেছে, স্মার্টকার্ড উদ্বোধনের পর রাজধানীর পাশাপাশি কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত বছর ৩১ জুলাইয়ের পরে যারা বাংলাদেশী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সাবেক এসব ছিটমহলবাসী গত ৪ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির এক মাসের মাথায় তাদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তিসম্বলিত স্মার্টকার্ড। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ৩ অক্টোবর থেকে রাজধানীতে প্রতিটি ওয়ার্ডে স্মার্টকার্ড বিতরণের কথা থাকলেও এখন তারা সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। এখন তারা প্রাথমিকভাবে দুটি ওয়ার্ডে পরীক্ষামূলকভাবে স্মার্টকার্ড বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গেছে, সবার মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণের প্রস্তুতি এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের নেই। বিশেষ করে স্মার্টকার্ড বিতরণের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রধারীদের নতুন করে ১০ আঙ্গুলের ছাপ নেয়া ও চোখের মণির ছবি নেয়ার মতো জনবল, সরঞ্জাম ও প্রস্তুতি ইসির নেই। এ কারণে তারা প্রাথমিকভাবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি করে ওয়ার্ডে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। এক্ষেত্রে রাজধানীর ধানম-ি, গুলশান ও বনানী এলাকার একটি করে ওয়ার্ড বেছে নেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশন সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন ঢাকা মহানগরীর সব জায়গায় একসঙ্গে স্মার্টকার্ড বিতরণ সম্ভব হবে না। তাই আগে পরীক্ষামূলকভাবে দুটি এলাকায় বিতরণ শুরু করে সেই অভিজ্ঞতা পরে কাজে লাগানো হবে। যেহেতু স্মার্টকার্ড বিতরণ বিশাল কর্মযজ্ঞ। ইসির পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে এখনও বড় ধরনের প্রচার চালানো হয়নি। এ কারণে প্রাথমিকভাবে দুটি ওয়ার্ডে কার্ড বিতরণের পর এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ব্যাপক পরিসরে ঢাকাতে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে বলে তিনি জানান। তবে ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর ৩ অক্টোবর থেকে রাজধানীর ৯৭ ওয়ার্ডে আলাদা ক্যাম্প করে স্মার্টকার্ড দেয়ার কথা থাকলেও এটি নাগরিকদের হাতে তুলে দেয়ার সুষ্ঠু পরিকল্পনা যেমন নেয়া হয়নি। তেমনি এ কাজে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট সমন্বয়েরও অভাব রয়েছে। কমিশন মূলত সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত রয়েছে ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর স্মার্টকার্ড কর্মসূচীর উদ্বোধন নিয়ে। এ কারণেই মাঠ পর্যায়ে যারা এই কার্ড বিতরণ করবেন তাদের সঙ্গে এখনও সমন্বয় করা হয়নি। আর বিতরণ কর্মসূচী কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তা এখনও নির্ধারণ করতে পারেনি ইসি। এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হলেও কমিটিতে কার কি দায়িত্ব সে সম্পর্কে কমিটির কেউ কিছু জানে না। ইসি কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন ৩ অক্টোবর থেকে রাজধানীর ৯৭ ওয়ার্ডে ক্যাম্প করে স্মার্টকার্ড প্রদানের ঘোষণা আগেই জানানো হয়েছে। কার্ড বিতরণের কর্মসূচী ঘোষণা হয়েছে। অথচ স্মার্টকার্ড নেয়ার সময় শত শত মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়াবে। তখন একজন নাগরিকের ১০ আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিশের ছবি, পুরাতন কার্ড জমা নেয়া এবং নতুন কার্ড খুঁজে পেতে দীর্ঘ সময়ের বিষয়। কিভাবে এটি বিতরণ করা হবে সে বিষয়ে এখনও সমন্বয়ই করা হয়নি। অথচ কার্ড নিতে এলে নাগরিকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তখন এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির শঙ্কাও রয়েছে। এছাড়া বিতরণের জন্য পর্যাপ্ত লোকবলও লাগবে। কিন্তু ভোটার তালিকা প্রকল্পের কর্মকর্তা এসব বিষয় নিয়ে ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ও করছে না বলে তারা উল্লেখ করেন। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়ার পর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় সব নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়া হবে। এসব কার্ড তুলে দেয়ার সময় তাদের প্রত্যেকের ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবি নেয়া হবে। তবে যেহেতু সাবেক এসব ছিটমহলবাসী আগে কোন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল না তাই তাদের হাতে কোন লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্রও নেই। এ কারণে স্মার্টকার্ড নেয়ার সময় তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ফেরত দিতেও হচ্ছে না। কুড়িগ্রাম সীমান্ত থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার ভেতরে ফুলবাড়ি থানায় ১ হাজার ৬৪৩ একর আয়তনের দাসিয়ারছড়া বাংলাদেশের ভেতরে সর্ববৃহৎ ভারতীয় ছিটমহল হয়ে ছিল ছয় দশকেরও বেশি সময়। আরেক দেশের সীমানার ভেতরে বলে এসব ছিটমহলে হাসপাতাল, বিদ্যুত, স্কুল-কলেজ বা বিচার- প্রশাসন ছিল না। মূল ভূখ-ে যাতায়াত করতে হলে তাদের দেখাতে হতো এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানের দেয়া পরিচয়পত্র। গত বছরে সবেক এসব ছিটমহলবাসী বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পরিচিত হওয়ার পর থেকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের ভোটার করা ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর ১০ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ অংশে বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকার কাজ শুরু হয়। ১৭ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তদের ছবি তোলার কাজ করা হয়। তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে গত ১ আগস্ট ভোটার তালিকায় খসড়া প্রকাশ করা হয়। এরপর এ মাসের ৪ তারিখে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের ১ মাসের মাথায় এবার তাদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে উন্নতমানের স্মার্টকার্ড। ইসি সূত্রে জানা গেছে, সেখানে প্রায় সাড়ে ১০ হাজারের মতো ছিটবাসী ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। গত বছরের ১৪ জানুয়ারি দেশে ৯ কোটির বেশি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে ফ্রান্সের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ইসি। চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সব নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়ার কথা রয়েছে। ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন কার্যক্রম শুরু করে ইসি। দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। এদের মধ্যে প্রায় ৯ কোটি নাগরিকের হাতে লেমিনেটেড পরিচয়পত্র রয়েছে। এ পরিচয়পত্রের বদলে সবার কাছে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেবে ইসি। ইসির এ সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। ইসি জানিয়েছে, উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসম্বলিত এই স্মার্টকার্ডে ভোটারদের সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ফলে কারও পক্ষে টু-ডি বারকোড যুক্ত যন্ত্রে পাঠযোগ্য এই কার্ড সহজে নকল করা সম্ভব হবে না। এর মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে শুরু করে টিআইএন, পাসপোর্ট, চাকরির আবেদন, সম্পত্তি কেনাবেচা, বিয়ে রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট খোলা ও ব্যাংক ঋণ, বিও এ্যাকাউন্ট, সরকারী বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন, সরকারী কর্মচারীদের বেতন ও অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন উত্তোলন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, বিমানবন্দরে আগমন ও বহির্গমন, বীমা স্কিম, গ্যাস-বিদ্যুত সংযোগ, বিভিন্ন ধরনের ই-টিকিটিং, মোবাইল সংযোগ, হেল্থকার্ড, ই-ক্যাশসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাজে স্মার্টকার্ডের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে।
×