ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আবারও আলোচনায় ইলিশ। ইলিশ আর ইলিশ শুধু। অন্য মাছ যে আছে, রাজধানীর মানুষ যেন সে কথা ভুলেই গিয়েছেন! এখন মাছ বলতেই রূপালী ইলিশ। জাতীয় এই মাছ কেনা ও মজা করে খাওয়ায় ব্যস্ত সবাই। যোগান এত যে, দেখে অবাক হতে হয়! ছোট-বড়-মাঝারি মাপের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে অলিগলি ও ফুটপাথে। পাড়ায় ঢুকে প্রতিদিনই হাঁকডাক দিচ্ছেন মাছ বিক্রেতারা- পদ্মার ইলিশ... বড় ইলিশ ...। বাঙালীর খুব প্রিয় আর পছন্দের মাছ। তার উপর দামে সস্তা। সচরাচর যে দাম, তার তুলনায় অনেক কম এখন। সুযোগটি দারুণ কাজে লাগাচ্ছেন রসনাবিলাসীরা। বাসার ডিপফ্রিজের অধিকাংশ জায়গা এরই মাঝে দখলে নিয়েছে ইলিশ! তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রেসিপি। ইলিশের ফ্রাই কারী যার যা ভাল লাগে, করে খাচ্ছেন। সাধারণত বৈশাখের মাঝামাঝি সময় থেকে ইলিশের মৌসুম শুরু হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ বছর আষাঢ় মাসের শেষ সময়ে এসে মৌসুম শুরু হয়। জেলেদের জালে ধরা পরে প্রচুর ইলিশ। আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহে ইলিশ ধরা পরছে ঝাঁকে ঝাঁকে। সব মিলিয়ে এবার বিপুল উৎপাদন। যোগান বেশি হওয়ায় দামও অনেক কম। কেউ কেউ তো বলছেন, এত সস্তায় ইলিশ খাওয়ার সুযোগ সাম্প্রতিক সময়ে আর আসেনি! তাই সবাই মাছটি কেনায় ব্যস্ত। তার চেয়ে বড় কথা, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ৩ নবেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ইলিশ শিকার। ২১ দিনের সরকারী নিষেধাজ্ঞা। এ সময়ের মধ্যে ইলিশ আহরণ, মজুদ ও বিপণন করা যাবে না। সঙ্গত কারণেই মাঝখানের কয়েকটি দিন ইলিশ সংগ্রহ বন্ধ থাকবে। রাজধানীর আমিষপ্রেমীরা ইলিশ কিনে ফ্রিজ ভর্তি করে ফেলছেন! পদ্মা থেকে আহরণের পর ইলিশের বড় একটি অংশ সরাসরি চলে আসে কাওরান বাজারে। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে তো চোখ ছানাবড়া! বিজিএমইএ ভবনের বিপরীতে যেসব মৎস্য আড়ৎ, সবগুলোতে ইলিশ। খুচরা বিক্রেতারা এখান থেকে কিনে ফুটপাথে পসরা সাজিয়েছেন। এফডিসি গেট থেকে হোটেল সোনারগাঁ সংলগ্ন ফুটপাথ দখলে নিয়েছেন তারা। ছড়ানো ডালায় মাছ সাজিয়ে রেখেছেন। বরফের কুঁচি গায়ে মাখা ইলিশ দেখতে বেশ তাজা। আকর্ষণীয়। মূল সড়ক দিয়ে আসা যাওয়ার সময় রূপালী রঙের ঝিলিক একদম চোখে এসে লাগে। সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের একটি আড়তের সামনে ছিল অপেক্ষাকৃত বড় ইলিশের সংগ্রহ। কথা বলতে বলতেই বিক্রেতা আব্দুস সালাম একটি মাছ হাতে নিয়ে দেখালেন। বললেন, ১ কেজি ২০০ গ্রাম। এই সাইজের ইলিশ প্রতিকেজি ১২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই কায়দায় দ্বিতীয় মাছটি তুলে নিয়ে বললেন, ওজন ১ কেজি। এই সাইজের ইলিশ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা দরে। পাশেই মাঝারি সাইজের ইলিশ। বিক্রি করছিলেন লাল মিয়া। এখানে ৬টির দাম ১৮০০ টাকা। ছোট সাইজের ইলিশ বিক্রি করছিলেন সোলেমান নামের এক বিক্রেতা। এখানে এক হালির দাম ৯০০ টাকা। অবশ্য মাছের আকার ওজন এবং দামের তারতম্যও বেশ চোখে পড়ে। লম্বা সময় ধরে চলে দামদর। এই দামদর করার ধৈর্য ও সক্ষমতার উপরও ক্রেতার লাভ ক্ষতি যথেষ্ট নির্ভর করে। তবে বাজার ঘুরে মনে হয়েছে, লাভক্ষতি নিয়ে সামান্যই ভাবিত ক্রেতা। দাম এখন কম এই বিবেচনা থেকে যে যার মতো কিনে চলেছেন। একটি সিমেন্ট কোম্পানির কর্মকর্তা আরমান জানালেন, তিনি প্রথম দফায় একহালি ইলিশ কিনেছেন। পরে আরেক বিক্রেতার মাছ দেখে পছন্দ হয়ে যায়। এবার কেনেন দেড় হালি। পকেটের নগদ অর্থ ফুরিয়ে গিয়েছিল। তিনি পাশের এটিএম বুথ থেকে টাকা সংগ্রহ করে মাছ নিয়ে গেলেন। উচ্ছ্বাস দেখা গেল রুহুল আমিন নামের এক ক্রেতার চোখে মুখে। পলিথিনের ব্যাগ ভর্তি ইলিশ। আরও কিনবেন। দাম দর করতে করতে এগোচ্ছিলেন। বললেন, ঈদের দিন থেকে টানা কোরবানির মাংস খাচ্ছি। অরুচি ধরে গেছে। তাছাড়া কয়েকদিন পর তো ইলিশের দাম বেড়ে যাবে। তাই বেশি করে কিনে রাখছি। ঈদ শেষে কর্মচাঞ্চল্য ॥ ঈদের দীর্ঘ ছুটি শেষে এখন মোটামুটি কর্মচঞ্চল ঢাকা। সরকারী বেসরকারী সব অফিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। কাজ চলছে পুরোদমে। গত কয়েকদিন মতিঝিলের অফিসপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, চিরচেনা চেহারা। শাপলা চত্বর ঘিরে কর্মব্যস্ত মানুষের আসা যাওয়া। ভিড়। যানজট। সকাল ৯টার আগে শুরু। ৫টা বাজতেই বাড়ি ফেরা। দৃশ্যগুলো ফিরে এসেছে বাণিজ্যিক এলাকায়। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের মিডটার্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এখন। বাকিরা ব্যস্ত রুটিন ক্লাসে। শাহবাগে পাবলিশার অব দ্য মান্থ ॥ শাহবাগের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে চলছে ‘পাবলিশার অব দ্য মান্থ’ শীর্ষক কর্মসূচী। মাসব্যাপী কর্মসূচীর পুরোভাগে রয়েছে এ্যাডর্ন। ১ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া কর্মসূচীর আওতায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নয় শতাধিক বই আকর্ষণীয় ছাড়ে পাঠকদের হাতে তুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগে প্রকাশিত বই প্রদর্শন করার পাশাপাশি, উদ্বোধনী আড্ডায় ৭টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এখনও প্রতিদিন চলছে মুক্ত আলোচনা। বৃহস্পতিবার ‘গ্রন্থ প্রকাশনা সমাজ-রাষ্ট্রের সৃজন ও মননশীলতার প্রকাশ’ বিষয়ে বিশেষ আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়ের উপর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের সাবেক সম্পাদক ড. হামিদা হোসেন। প্রাইভেটকারের শহর, নিয়ন্ত্রণের চিন্তা ॥ শহর ঢাকায় অসংখ্য যানবাহন। এর পরও যাতায়াত সমস্যা দূর হচ্ছে না। উল্টো যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। প্রধান কারণ, গণপরিবহনের পরিবর্তে অধিকাংশ রাস্তা দখল করে রেখেছে ব্যক্তিগত যানবাহন। এক পরিবারে একাধিক গাড়ি ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি এক ব্যক্তি ব্যবহার করছেন একাধিক গাড়ি। এ ক্ষেত্রে কোন নিয়ম নীতি মানা হচ্ছে না। জানা যায়, বর্তমানে ঢাকায় নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ১০ লাখ ২২ হাজার ৬১৯। এর এক-চতুর্থাংশই প্রাইভেটকার। প্রতিদিন গড়ে ৫৩ প্রাইভেটকার নিবন্ধন হচ্ছে ঢাকায়। এ তুলনায় নতুন নিবন্ধিত গণপরিবহনের সংখ্যা নগণ্য। প্রতিদিন গড়ে ১০ বাস ও মিনিবাস নিবন্ধিত হয়। বিআরটিএর হিসাবে রাজধানীতে নিবন্ধিত যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ১৮ হাজার ৪০৪। এর পরই প্রাইভেটকারের সংখ্যা। জিপ রয়েছে ৩১ হাজার ৩৩৭। এগুলোও ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ হিসাবে প্রাইভেটকারের সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫২। মিনিবাসের সংখ্যা ১০ হাজার ১৫৩। নিবন্ধিত বাসের সংখ্যা ২৬৫২৯। তবে এর অধিকাংশ দূরপাল্লার পথে চলাচল করে। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির হিসাবে রাজধানীতে গণপরিবহন হিসাবে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা মাত্র ৬ হাজার ৭০০। এই যখন অবস্থা তখন বৃহস্পতিবার পালিত হলো ‘বিশ্ব ব্যক্তগত গাড়িমুক্ত দিবস।’ একটু অভিনব শোনালেও, এ দিবস ব্যক্তিগত কার ব্যবহারের সমস্যাটিকে সামনে এনেছে। বড় লোকের গাড়ি বলে কথা, কে এর বিরুদ্ধে বলতে যাবেন! আর বললেইবা শুনতে যাবেন কে? তবে, ওবায়দুল কাদের বরাবরই ব্যতিক্রম। দিবসটি উপলক্ষে মানিক মিয়া এ্যাভিনিউতে সকালে আয়োজিত র‌্যালিতে যোগ দেন সড়ক পও সেতুমন্ত্রী। এ সময় কিছু আশ্বাস দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানান, ‘সড়ক পআইন’ নামে একআইন হচ্ছে। এতে ব্যক্তগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বিধান রাখা হবে। যানজট নিরসনে এক পরিবারের একাধিক গাড়ি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দেন তিনি। উল্টোপথে মন্ত্রীদের গাড়ি চলবে কিনা তা নিয়েও মৃদু বিতর্ক চলছিল। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন উল্টোপথেই গাড়ি চালাতে চান। সে কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ওবায়দুল কাদের কৌশলে জাবাব দেন তাকেও। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেন, উল্টো পথে কারও গাড়ি চলবে না। এ বিষয়ে কোন ছাড় নয়। যে যাই বলুক, আমন্ত্রী থাকলেও বল, না থাকলেও বলব। উল্টোপথে গাড়ি চলাচলে কোন ছাড় নয়।
×