ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াসমিন থেকে তনু আর মিতু

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ২৬ আগস্ট ২০১৬

ইয়াসমিন থেকে তনু আর মিতু

আজ থেকে ২১ বছর আগে ১৯৯৫ সালের ২৩ আগস্ট। মাত্র ১৩ বছরের কিশোরী ইয়াসমিন ঢাকা থেকে রাতের বাসে ওঠে দিনাজপুরে যাওয়ার উদ্দেশে। ঠাকুরগাঁওগামী একটি বাসে করে সে দিনাজপুর আসলে ভোরে বাসের হেলপার ইয়াসমিনকে জেলার দশমাইল মোড়ে নামিয়ে দেয়। এর অল্পক্ষণ পর কোতোয়ালি পুলিশের টহল দেয়া পিকআপ আসে দশমাইল মোড়ে। পিকআপের পুলিশরা ইয়াসমিনকে তুলে নেয় তাকে তার জায়গামতো পৌঁছে দেবে বলে। কিন্তু পুলিশরা সেটা না করে ইয়াসমিনের ওপর সবাই মিলে পাশবিক নির্যাতন চালায়। শুধু তাই নয়, শেষ অবধি তাকে হত্যাও করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও নারীরা নিরাপদ নয় এর থেকে মর্মান্তিক আর কি হতে পারে? টানা ৪ দিন পুরো দিনাজপুরে চলে বিক্ষোভ, আন্দোলনসহ নানা প্রতিবাদমূলক কর্মসূচী। পাশাপাশি সমানে চলতে থাকে এই উত্তাল কার্যক্রমের ওপর পুলিশী নির্যাতনও। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় ৭ জন আন্দোলনকারী। আহত হয় দুই শতাধিকেরও ওপর। একসময় এই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ও আন্দোলন দিনাজপুর শহর থেকে সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে আরম্ভ করে নানা পেশাজীবী সংগঠনও এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। খালেদা জিয়া-সরকারের তখন ক্ষমতার পাঁচ বছরপূর্তির একেবারের শেষ পর্যায়ে। অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে পুরো দেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দেশবাসীর রোষানলের মুখে সরকার অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করতে বাধ্য হয়। মামলা হয়, মামলা কোর্টে ওঠে, বিচারি কার্যক্রম এক চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। রায়ে অভিযুক্তদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সালে আগস্ট মাসে অভিযুক্তদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের মেধাবী ছাত্রী ও সংস্কৃতিকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে কুমিল্লা সেনানিবাসের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। পরিতাপের বিষয়। আজও অভিযুক্তদের শনাক্ত করা যায়নি। তদন্তেরও কোন সুরাহা হয়নি। তনু হত্যার পরও সারাদেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। কুমিল্লা থেকে দেশব্যাপী এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কোন আন্দোলন বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, প্রতিরোধেও তনু হত্যার কোন কূল-কিনারা করা যায়নি। জুন মাসেও ঘটে আর এক নির্মম-নৃশংস, হৃদয়-বিদারক হত্যাকা-। পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আখতারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মিতুকে প্রকাশ্যে, দিবালোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে অমানবিকভাবে হত্যা করা হয়। সবাই আশা করেছিল দক্ষ, সহাসী, সৎ, আদর্শনিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর হত্যার বিচার কেউই রোধ করতে পারবে না। কিন্তু এখানেও একই পরিণতি। মিতু হত্যাকারীদের এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি, সুষ্ঠু তদন্ত এগোনের বদলে পিছিয়ে গেছে। বরং পুলিশ কর্মকর্তা তার নিজের অর্জন করা এই সম্মানের পেশাটি পর্যন্ত ধরে রাখতে পারলেন না। নানাবিধ মানসিক চাপের মধ্যে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। জানি না এই দুটো নৃশংস, পাশবিক হত্যাকা-ের দায় কাদের? তারা কি আদৌ কোনদিন ধরা পড়বে? কখনই কি তাদের বিচারের মুখোমুখি করা যাবে? তনু এবং মিতুর পরিবার তাদের একান্ত আপনজনের হত্যার বিচার কি কোনদিনই পাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর সময়ের ওপর ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই। আরতি নাহার
×