ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাসের অগ্রিম টিকেট

ভোর থেকে ভিড়, দুপুরে ফাঁকা কাউন্টার

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৪ আগস্ট ২০১৬

ভোর থেকে ভিড়, দুপুরে ফাঁকা কাউন্টার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে রাজধানী থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাত্রীদের জন্য অগ্রিম বাসের টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা টিকেট বিক্রি কার্যক্রম চলে। সেপ্টেম্বরের ৫ থেকে ১১ তারিখের টিকেটের জন্য গাবতলী, শ্যামলী ও কল্যাণপুর বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে ভোর থেকে জমে মানুষের ভিড়। তবে দুপুরের পর অধিকাংশ কাউন্টার ছিল যাত্রীশূন্য। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে নামী-দামী পরিবহনগুলোর ৮ সেপ্টেম্বরের টিকেট বিক্রি শেষ হয়েছে দুপুরের আগেই। প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়তি ভাড়া, টিকেট না পাওয়া, ভোগান্তিসহ নানা অভিযোগ ছিল সাধারণ যাত্রীদের। এসি টিকেটের চাহিদা বেশি থাকায় খালি হাতে বাসায় ফিরেছেন অনেকেই। এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারও সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাসের অগ্রিম কোন টিকেট দেয়া হচ্ছে না। মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, ঈদের সময় যাত্রীরা সরাসরি টিকেট কেটে বাসে উঠতে পারবেন। তবে এই দুই টার্মিনাল থেকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলা বাসের টিকেট বিক্রির প্রস্তুতি থাকলেও প্রথম দিনে কাউন্টার ছিল যাত্রীশূন্য্য। এদিকে ঈদ উপলক্ষে বিআরটিসি বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রির তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি। ২৯ আগস্ট থেকে বিক্রি হবে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট। প্রথম দিনে বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক তালুকদার সোহেল জনকণ্ঠ’কে বলেন, প্রথমদিনে যাত্রীর চাপ কম। সকাল থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হলেও বিভিন্ন কাউন্টার যাত্রীশূন্য বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, রোজার ঈদের থেকে কোরবানির ঈদে যাত্রীদের চাপ তুলনামূলক কম থাকে। তবে ৮ সেপ্টেম্বরের বাসের টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানান তিনি। গাবতলীর মাজার রোডে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে সকাল ৮টায় টিকেট প্রত্যাশীদের ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। মঙ্গলবার ভোর ৬টায় কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে দু’ঘণ্টায়ও টিকেট পাননি নাভানা সিএনজির কর্মী মশিউর রহমান। তিনি বললেন, গাইবান্ধা যাব, ৯ তারিখের টিকেটের জন্য এসেছি। কিন্তু যে ভিড় টিকেট পাব কি না জানি না। মিরপুর বড় বাজারের ব্যবসায়ী পনির জানান, ভোর ৫টায় এসেও টিকেট পাননি তিনি। বলেন, আমি রংপুর যাব। কিন্তু ৮, ৯ ও ১০ তারিখের টিকেট মিলছে না। দিনাজপুরের যাত্রী পান্না জানান, ৮ তারিখ রাতের টিকেট সংগ্রহ করতে এসেছিলাম। কিন্তু মিলল না। এবার অন্য কাউন্টারে গিয়ে খোঁজ করে দেখি। গাইবান্ধার টিকেট হাতে পেয়ে আনন্দের শেষ ছিল না ফিরোজ আনোয়ারের। তিনি জানান, সোমবার ভোরে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট পাই। ৮ তারিখ পরিবারকে পাঠিয়ে দেব। আমি যাব ১০ তারিখে। দুই দিনের টিকেটই পেয়েছি। কিন্তু রাতের টিকেট পাইনি, সকালেরটা দিয়েছে। প্রত্যাশিত টিকেট পেয়ে স্বস্তির কথা জানালেন পাবনার যাত্রী আনোয়ার। তিনি জানান, ৮ তারিখ সকালের টিকেট চেয়েছিলাম, পেয়েছি। সামনের সিটের টিকেট পাইনি, তাতেও সমস্যা নেই। বাড়িতে তো যেতে পারব। চাহিদা বেশি থাকায় ৮ তারিখের টিকেট দ্রুত শেষ হওয়ার কথা জানালেন শ্যামলী পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক পারভেজ মাহমুদ। তিনি বলেন, আমরা টিকেট বিক্রি শুরু করেছি ভোর সাড়ে ৬টায়। প্রথম দুই ঘণ্টায়ই ৮ তারিখের রাতের বেশিরভাগ টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। তবে অন্যান্য দিনের টিকেট এখনও আছে। কল্যাণপুরের এসবি পরিবহনের কোন কাউন্টার থেকেই প্রত্যাশিত টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। কুষ্টিয়ার টিকেট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাভারের ব্যবসায়ী খোকন। তিনি জানান, একটি কাউন্টার থেকেও টিকেট আছে এমন কথা বলছে না। তার প্রশ্ন তাহলে টিকেট কোথায় গেল? ডিপজল পরিবহনে টিকেটের দাম বেশি নেয়ার অভিযোগ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, বগুড়ার ননএসি গাড়ির ভাড়া ৩৫০ টাকা। কিন্তু আজ ৫০০ টাকা করে নিচ্ছে। তবে কাউন্টারের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম অতিরিক্ত দাম নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমরা সরকারী নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছি। কোন বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে না। আমাদের এখানে এখনও পর্যাপ্ত টিকেট আছে। কেউ খালি হাত ফিরবে না। তবে এই পরিবহনের টিকেট নিতে আসা আরও কয়েকজন যাত্রী বাড়তি ভাড়া রাখার অভিযোগ করেছেন। সরেজমিন মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল, গাবতলীসহ আশপাশের এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি দূরপাল্লার বাস কাউন্টারে সকালের দিকে যাত্রীদের ভীড় ছিল সবচেয়ে বেশি। ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বরের টিকেটের সন্ধানে সবাই। যারা নির্ধারিত তারিখের টিকেট পাননি অনেকেই, খালি হাতে ফিরে গেছেন। নারীদের লাইন দীর্ঘ হলেও কোন কোন কাউন্টারে মাত্র একজন লোক থাকায় ভোগান্তি হয়েছে অনেক বেশি। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হয়েছে। এদিকে মহাখালী বাস টার্মিনালের সভাপতি আবুল কালাম জানিয়েছেন, আমাদের টার্মিনাল থেকে সবচেয়ে বেশি বৃহত্তর ময়মনসিংহের গাড়ি চলে। এসব রুটে কখনই অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয় না। তবে বগুড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুর, চট্টগ্রামসহ দূরপাল্লার অন্তত ১০টি রুটে চলা বাসের অগ্রিম টিকেট দেয়া হবে। মঙ্গলবার অীগ্রম টিকেট নেয়া যাত্রীদের ভীড় ছিল একেবারেই সামান্য। সায়েদাবাদ টার্মিনালে পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ বৃহত্তর সিলেটের কোন বাসের অগ্রিম টিকেট দেয়া হচ্ছে না। নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনীসহ বিভিন্ন রুটের বাসগুলো অগ্রিম টিকেট ছাড়েনি। তবে চট্টগ্রাম রুটে চলা কিছু বাস কোম্পানী অগ্রিম টিকেট বিক্রি করেছে।
×