ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৫ আগস্ট ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আবারও এসেছে আগস্ট। শোকের কাল শুরু হয়েছে। কাঁদো বাঙালী কাঁদো। বাঙালী কাঁদছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা শহরের রাস্তায় নেমে এসেছিল একদল বেইমান। বিশ্বাসঘাতকের দল। বঙ্গবন্ধুর বুক বিদীর্ণ করে এরা হা হা হেসেছিল। সেই নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকা- থেকে রেহাই পায়নি শিশু রাসেলও। সপরিবারে নেতাকে খুন করা হয়েছিল। সেই থেকে কলঙ্ক দাগ। সেই দাগ, সেই ক্ষত এখনও বহন করে চলেছে শহর ঢাকা। শহরের মানবিক মানুষ আজও শোকগ্রস্ত। আগস্ট শুরু হয়েছে। নতুন করে ব্যথা বাজছে বুকে। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা বিষণœœ। যেদিকে চোখ যায়, মহান নেতার প্রতিকৃতি। শোকবার্তা। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। চলছে মাসব্যাপী আয়োজন। শিল্পকলা একাডেমিতে এখন চলছে ‘শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালা। এর অংশ হিসেবে জাতীয় চিত্রশালায় আয়োজন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে বিষয় করে আঁকা ছবির প্রদর্শনী। ১৪৮ শিল্পীর ১৫০ চিত্রকর্মে তুলে ধরা হয়েছে মহান নেতাকে। ছবিগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে গ্যালারি তিনে। শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেনÑ বিরেন সোম, আহমেদ সামসুদ্দোহা, শেখ আফজাল, শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, মোঃ আলপ্তগীন, মোঃ কামাল উদ্দিন, ময়াজ উদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, মাকসুদুল আহসান প্রমুখ। আর ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা শিল্পী প্রদ্যুৎ কুমার দাসের। গতবারের মতো এবারও চমৎকার একটি স্থাপনা শিল্প গড়েছেন তিনি। শিরোনাম করেছেন ‘ফ্রেম আউট’। সরল উপস্থাপনায় শিল্পী বলতে চেয়েছেন, সর্বত্রই এখন বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরার প্রয়াস। যে যার মতো করে নামটি ব্যবহার করছেন। কিন্তু মহান নেতার আদর্শ বুকে লালন করছে ক’জন? প্রশ্ন তুলেছেন শিল্পী। বুকে বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রাখার, লালন করার আহ্বান যেন তার এ স্থাপনা শিল্পে। প্রদর্শনী প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত। শাহবাগের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা বাংলা ও ইংরেজী বইয়ের বিশেষ প্রদর্শনী। ‘জাতির জনককে জানুন’ শীর্ষক মাসব্যাপী আয়োজন শুরু হয় সোমবার থেকে। প্রদর্শনী ঘুরে সত্যি মুগ্ধ হতে হয়। এখানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত তিন শতাধিক বাংলা ও ইংরেজী গ্রন্থ। আছে জীবনী গ্রন্থ, প্রবন্ধ, কবিতা, তৎকালীন সময়ের রাজনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণসহ নানা রচনা। জাতির জনককে বিষয় করে লেখা বইগুলো দিয়ে সাজানো হয়েছে একটি আলাদা কোণ। সেখান থেকে পছন্দমতো খুঁজে নেয়া যাচ্ছে জাতির জনককে। বিদেশ থেকে প্রকাশিত ইংরেজী বইগুলো যথেষ্ট দুর্লভ। অধিকাংশ লাইব্রেরি বা বইয়ের দোকানে পাওয়া যায় না। সুযোগটি করে দিয়েছে পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র। বইয়ের প্রদর্শনী ছাড়াও এখানে প্রতিদিন থাকছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক আলোচনা, কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠসহ নানা আয়োজন। আগামীকাল শনিবার ২২ শ্রাবণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৫তম প্রয়াণ দিবস। দিবসটি সামনে রেখে সরব হয়ে উঠেছে রাজধানীর সংস্কৃতি অঙ্গন। দিবস পালনের প্রস্তুতি চলছে সর্বত্র। কথা, কবিতা ও গানে এবারও স্মরণ করা হবে বিশ্বকবিকে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার প্রয়াণ দিবসের অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করা হবে বাংলা একাডেমিতে। বিকেলে শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আহমদ রফিকের লেখা ‘রবীন্দ্রজীবন’ তৃতীয় খ-ের প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হবে। গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনা করবেন অধ্যাপক শফি আহমেদ এবং অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। পরদিন রবিবার বিকেলে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে থাকবে একক বক্তৃতা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং রবীন্দ্র পুরস্কার-২০১৬ প্রদান অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রবিষয়ক একক বক্তৃতা করবেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। এ বছর রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান করা হবে অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন এবং শিল্পী তপন মাহমুদকে। জঙ্গীবাদের প্রসঙ্গ না টানলেই নয়। বৈশ্বিক এ সমস্যায় আক্রান্ত ঢাকা। অপশক্তি নির্মূলে কাজ করছে সরকার। বিভিন্ন বাহিনী সফল অভিযান পরিচালনা করছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ। ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ। গোটা শহরেই এমন প্রতিবাদ দৃশ্যমান হচ্ছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ধর্মের নামে বর্বর হত্যাকা-ের প্রতিবাদ করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন আগে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে এসেছিল। সবাই হাতে হাত ধরে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের ঘৃণার কথা জানিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন প্রতিবাদ নতুন করে আশা জাগিয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে। ঢাকাকে নাগরিক দুর্ভোগের শহর বলা হয়। কখনও কখনও মনে হয়, এ শহরের সমস্যা দেখার কেউ নেই। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটল উল্টোটি। এদিন ওয়্যার স্ট্রিটের বাসিন্দাদের মুখোমুখি হন মেয়র সাঈদ খোকন। ‘জনতার মুখোমুখি জননেতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে নাগরিকদের অভিযোগ শোনেন তিনি। সমাধান দেয়ার চেষ্টা করেন। ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিট, নারিন্দা বাজার, র‌্যানকিন স্ট্রিট, ওয়ারী স্ট্রিট, নবাব স্ট্রিটসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা মেয়রের কাছে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। কেউ গলির মুখে ময়লার স্তূপ জমে থাকার কথা জানিয়ে প্রতিকার চান। কেউ জানান মশার উপদ্রবের কথা। এভাবে নানা সমস্যার কথা উঠে আসে। এ সময় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ওয়ারী জোনের ডিসি, ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক, ওয়াসা, ডিপিডিসির কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের জরুরী ভিত্তিতে ওসব সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন মেয়র। যে কোন সমস্যায় নাগরিকদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এমন উদ্যোগের প্রশংসা করতে হয়। অব্যাহত থাকুক উদ্যোগটি। এবার ঢাকার সৌন্দর্যবর্ধন প্রসঙ্গ। একটু সচেতভাবে চাইলে এ শহর সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কেউ তেমন ভাবেন না। রং না করার কারণে বহু ভবন জঙ্গলের মতো দেখায়। দেখাচ্ছে। কিছু যেন যায় আসে না তাতে। এ যখন অবস্থা তখন রাজধানীর বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী সেবা সংস্থার প্রধানকে নিজেদের ভবন রং করার নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। গত বুধবার নগর ভবনের সম্মেলনকক্ষে ২৬টি সেবা সংস্থার প্রধানদের নিয়ে আয়োজিত সমন্বয় সভায় এ নির্দেশ দেন মেয়র সাঈদ খোকন। মেয়র বলেন, অনেক সরকারী-বেসরকারী সেবা সংস্থার ভবন শ্রীহীন, বিবর্ণ, জীর্ণ দেখায়। অথচ রং করা হলে দারুণ সুন্দর হয়ে উঠতে পারে ভবনগুলো। মেয়র সকল সেবা সংস্থায় মাসে অন্তত একদিন পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সেবা সংস্থার ভবনগুলোতে গাছ লাগানোর নির্দেশ দেন মেয়র। যেসব সেবা সংস্থা কাজগুলো করবে তারা হোল্ডিং ট্যাক্সে ১০ ভাগ ছাড় পাবে বলে ঘোষণা দেন মেয়র। এ উদ্যোগটিও চমৎকার। মেয়র এ জায়গায় শক্ত অবস্থান নিতে পারেন। নেয়া উচিত।
×