ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের নির্দেশ

২১ জুলাইয়ের মধ্যে জঙ্গী বিরোধী কমিটি গঠন শেষ করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৩ জুলাই ২০১৬

২১ জুলাইয়ের মধ্যে জঙ্গী বিরোধী কমিটি গঠন শেষ করতে হবে

উত্তম চক্রবর্তী ॥ দেশব্যাপী জঙ্গীবিরোধী কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে তৃণমূলে চিঠি পাঠানো শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সারাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদবিরোধী ব্যাপক গণজাগরণ সৃষ্টি এবং যেখানেই জঙ্গী-সন্ত্রাসী সেখানেই সর্বাত্মক প্রতিরোধের টার্গেট রেখে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে প্রেরিত চিঠিতে। প্রতিটি এলাকার গণমাণ্য কোন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আহ্বায়ক করে ১৪ দলসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল অসাম্প্রদায়িক শ্রেণী-পেশার শক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে এই কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের ধারক-বাহক ও পৃষ্ঠপোষকরা কোনভাবেই যাতে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটিতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতেও তৃণমূল নেতাদের চিঠিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে দলটির একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দেশের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের জন্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ স্বাক্ষরিত চিঠি তৃণমূল নেতাদের কাছে পাঠানো শুরু হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে তৃণমূলে চিঠি পাঠানোর কাজ শেষ হবে। দেশের সকল জেলা ও মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের বরাবরে এই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। জেলা ও মহানগরের নেতারা চিঠির অনুলিপি তাদের অধীনে থাকা সকল উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের নেতাদের কাছে পাঠিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তৃণমূলে চিঠি পাঠানোর সত্যতা স্বীকার করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবং ১৪ দলীয় জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সারাদেশের পাড়া-মহল্লা, গ্রাম-গঞ্জ থেকে শুরু করে জেলা-মহানগরেও এই কমিটি গঠন করা হবে। তিনি জানান, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গঠিত কমিটি মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি কোন এলাকায় যাতে জঙ্গী-সন্ত্রাসীরা আশ্রয় নিতে না পারে তা দেখভালের পাশাপাশি সন্দেহজনক কিছু দেখলেই তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করবে। আর কোন জঙ্গী-সন্ত্রাসী কিংবা তাদের পৃষ্ঠপোষকরা যাতে কমিটিতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য তৃণমূল নেতাদের সতর্ক করা হয়েছে। সূত্র জানায়, মাহবুবউল আলম হানিফ স্বাক্ষরিত চিঠিতে তৃণমূল নেতাদের প্রতি নির্দেশ ও আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, গত ৩ জুলাই ১৪ দলীয় জোট নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে তার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। চিঠিতে আরও বলা হয়, এই বৈঠকে জোটনেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক দেশব্যাপী ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা এবং মহানগরে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই কমিটির অন্যতম কাজ হচ্ছে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও জঙ্গীবাদী তৎপরতাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করা এবং তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এই কমিটি ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তি, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিক, কৃষিবিদ, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, শ্রমিক, কৃষক, নারী, ছাত্র, যুবক, তরুণ সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ব্যাপকভাবে শামিল এবং সমন্বয়ে গঠন করতে হবে। চিঠিতে কমিটি গঠনের একাধিক কাঠামোর উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- দেশের সকল জেলা ও মহানগরে একজনকে সভাপতি, অনধিক ১৭ জনকে সহ-সভাপতি, একজনকে সদস্য সচিব এবং বাকিদের সদস্য করে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করতে হবে। উপজেলার ক্ষেত্রে একজন সভাপতি, একজন সদস্য সচিব, ১০ সহ-সভাপতি এবং বাকিদের সদস্য, ইউনিয়নের ক্ষেত্রে একজন সভাপতি, একজন সদস্য সচিব, ৬ জনকে সহ-সভাপতি, বাকিদের সদস্য এবং ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে একজন সভাপতি, একজন সদস্য সচিব, ৩ জন সহ-সভাপতি ও বাকিদের সদস্য করে কমিটি গঠন করতে হবে। আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে কমিটি গঠন সম্পন্ন করতে তৃণমূল নেতাদের চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আপনারা জানেন যে, বিএনপি-জামায়াত জোট বিভিন্ন ছদ্মাবরণে সাম্প্রতিক সময়ে হত্যা, গুপ্তহত্যা, টার্গেট কিলিং, বিদেশী নাগরিকদের হত্যা, ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে আক্রমণ এবং বোমা হামলার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হেয় করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্মের নামে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসকে উস্কে দিচ্ছে, নিরীহ-নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে হত্যা করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাচ্ছে। এই অপশক্তি দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকেও ব্যাহত করে দেশে সন্ত্রাসবাদ কায়েম করতে চাচ্ছে। আসলে এরা পবিত্র ধর্ম ইসলাম ও মানবতার শত্রু, দেশের গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার শত্রু। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই এদের মোকাবেলা করতে হবে। এদিকে গত ৮ জুলাই শুক্রবার বিকেলে ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের যৌথসভায় আগামী ১২ জুলাই থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে সারাদেশের পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি করে কেন্দ্রকে অবহিত করার জন্য তৃণমূল নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। সেদিন নানক তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা বা থানা থেকে জেলা-মহানগরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। আপনারা সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময়ের কমিটি গঠন করে তা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করবেন। আর কমিটি করার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখবেন- এটা যেন আমাদের (আওয়ামী লীগ) মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে। এতে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষক ব্যতীত সকল শিক্ষক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, ইমাম, পুরোহিত, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি থেকে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করবেন। এদিকে সোমবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ১৪ দলের বিশাল সমাবেশ থেকে কেন্দ্রীয় মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও সারাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি বলেন, ১২-২১ জুলাই পর্যন্ত ১৪ দলের নেতৃত্বে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে সারাদেশে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবিরোধী নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে থাকবে শিক্ষক, চিকিৎসক, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিতসহ সমাজের বিশিষ্টজনরা। এ কমিটি খেয়াল রাখবে এলাকায় নতুন কেউ এসেছে কিনা, তার গতিবিধি সন্দেহজনক হলে থানায় জানাবে। এছাড়া কেউ নিখোঁজ থাকলে তাও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাবে। প্রতিটি এলাকায় কারা সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের সঙ্গে যুক্ত তাও খুঁজে বের করবে এই কমিটি।
×