ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফ্রান্সের পরাজয়ে হতাশ কোচ দেশম

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১২ জুলাই ২০১৬

ফ্রান্সের পরাজয়ে হতাশ কোচ দেশম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ খেলোয়াড় হিসেবে পেরেছিলেন, কোচ হিসেবে স্বপ্নটা অধরাই থেকে গেল। দিদিয়ের দেশম তিনবার অধিনায়ক হিসেবে ফ্রান্সকে চ্যাম্পিয়ন করার গৌরব দেখিয়েছিলেন। এবার সুযোগ ছিল কোচ হিসেবেও দেশকে বড় কোন আন্তর্জাতিক আসরে চ্যাম্পিয়ন করার। কিন্তু এবার আর ভাগ্যদেবী তার সহায় হননি। পর্তুগালের কাছে ১-০ গোলে হেরে এবারের ইউরো ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের রানার্সআপ হয়েছে ফরাসীরা। এরপর দারুণ হতাশায় মুষড়ে পড়েছেন ফরাসী কোচ দেশম। তিনি মনে করেন মোক্ষম সুযোগটা চলে যেতে দিয়েছে ফ্রান্স নিজে থেকেই। সে কারণেই তিনি এ পরাজয়কে তীব্র হতাশার বলে মনে করেন। রবিবার রাতে সেইন্ট ডেনিসের স্টেড ডি ফ্রান্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ইউরো ফাইনালে হারের পর এক প্রতিক্রিয়ায় এসব জানান দেশম। ১৯৮৪ সালে ইউরোতে খেলোয়াড় হিসেবে এবং ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে ফ্রান্সকে ঘরের মাটিতে জিতিয়েছিলেন দেশম। আর ২০০০ সালে অধিনায়ক হিসেবে ফরাসীদের দ্বিতীয়বারের মতো ইউরো চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালের পর ১৬ বছর বিরতি দিয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়ন। এবারও ১৬ বছর বিরতি, প্রতিপক্ষ পর্তুগাল এবং নিজেদের মাটি। ইতিহাস ও পরিসংখ্যানও যেন ফ্রান্সের পক্ষেই কথা বলছিল। কিন্তু হলো না। মানুষ যেমনটা ভাবে, বিধাতার ইচ্ছাটা অন্যরকম! সে কারণেই এবার ভাগ্যদেবী সহায় হলো না দেশমের। খেলোয়াড় হিসেবে তিনটি বড় টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, কোচ হিসেবে এখন পর্যন্ত পারলেন না। ২০১৪ বিশ্বকাপে তার অধীনে ফ্রান্স কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নেয়। আর ইউরো জয়ের একেবারে কাছাকাছি এসে তা ছুঁতে ব্যর্থ হলেন দেশম। এ বিষয়ে দেশম বলেন, ‘হতাশা সবখানে এবং সেটা তীব্রতর। আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বড় একটি সুযোগ চলে যেতে দিলাম।’ দেশমের সঙ্গে ফ্রান্সের চুক্তি ২০১৮ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। তিনি নতুন এক রেকর্ড ছোঁয়ার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছিলেন এবার। জার্মানির বার্টি ভোটস খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে ইউরো জিতে রেকর্ড গড়েছিলেন। সেটা আর কেউ পারেননি। এ বিষয়ে দেশম বলেন, ‘আসলে এখনকার অনুভূতি প্রকাশ করার কোন ভাষাই নেই। এটা হজম করার জন্য সময় দরকার। আমরা একসঙ্গে সবাই ভুগছি এখন। আমরা একসঙ্গে জিতেছি এবং একসঙ্গেই আমরা সবাই হারলাম। এটা মেনে নেয়া কঠিন। এটা দারুণ চমৎকার বিষয় হতো যদি আমাদের ভক্তদের ঘরের মাটিতে ট্রফি উপহার দিতে পারতাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হলো না।’ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো প্রথমার্ধের ২৫ মিনিটের সময়ই হাঁটুর ইনজুরি নিয়ে মাঠ ত্যাগ করেন। আর খেলা হয়নি সি আর সেভেনের। কিন্তু অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় এবং অধিনায়ককে ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পর্তুগাল। যদিও রোনাল্ডো মাঠের বাইরে যাওয়ার পর দেশমের মুখে যেমন উজ্জ্বলতার ছটা দীপ্তি ছড়িয়েছিল, তেমনি ফরাসী খেলোয়াড়রাও বাড়তি উদ্দীপনা পেয়েছিল। কিন্তু সেসব আনন্দে ছাই ঢেলে দেন বদলি ফরোয়ার্ড এডার অতিরিক্ত সময়ে গোল করে। এই ২৮ বছর বয়সী এডার ফরাসী ক্লাব লিলের হয়েই খেলেন। অনেক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারাটাকেও দুষেছেন দেশম। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু মাথা ঠা-া রেখে যথেষ্ট সুযোগসন্ধানী হতে পারিনি আমরা। হয় তো আমাদের মধ্যে যথেষ্ট উদ্দীপনার ঘাটতি ছিল। কিন্তু আমার খেলোয়াড়রা আমাকে তাদের সবকিছুই দিয়েছে। তবে যা করা প্রয়োজন ছিল সেটা আমরা পারিনি।’ ঘরের মাটিতে বেশি প্রত্যাশার চাপটাও কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে ফ্রান্সের জন্য। এ বিষয়ে দেশম বলেন, ‘আমি মনে করি না বাড়তি কোন চাপ ছিল আমাদের। আমরা কখনও এসব চিন্তা করে খেলি না। পর্তুগাল প্রতিপক্ষকে ঠিকভাবে খেলতে দেয়নি এবং তারা দলগতভাবে দারুণ রক্ষণ করেছে। এটা কঠিন নিষ্ঠুরতা এ রকম একটি ফাইনালে পরাজিত হওয়া। কিন্তু এটা মেনে নিতেই হবে এবং আমি পর্তুগালকে অভিনন্দন জানাই। তারা নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আর সেটা হওয়ার জন্য যেভাবে খেলা প্রয়োজন সেটা করতে পেরেছে তারা।’
×