ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘জাপানীরা স্তম্ভিত, তবে বাংলাদেশের প্রতি ধারণা ইতিবাচক’

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৫ জুলাই ২০১৬

‘জাপানীরা স্তম্ভিত, তবে বাংলাদেশের প্রতি ধারণা ইতিবাচক’

আনোয়ার রোজেন ॥ ভদ্রলোক জাপানী সাংবাদিক। নাম তাসুলো নাকাগাওয়া। তাঁর সম্পাদনায় জাপানী ভাষার উইকলি ম্যাগাজিন ‘শিনচো’ টোকিও থেকে প্রকাশিত হয়। তাসুলো জাপান থেকে ঢাকায় এসেছেন সোমবার সকালে। বিমানবন্দর থেকে হোটেলে চেক ইন করেই ছুটে এসেছেন গুলশানে। সঙ্গে ছিলেন জালাল আহমেদ নামে স্থানীয় এক বাঙালী দোভাষী। দুপুরে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের পুলিশ ব্যারিকেডের পাশে দাঁড়িয়ে গুলশান হামলার এক প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাতকার নিচ্ছিলেন তাসুলো। প্রত্যক্ষদর্শীর নাম আলমগীর। পেশায় গাড়িচালক। একটি বহুতল আবাসিক ভবনের তিনতলার বারান্দা থেকে হলি আর্টিজান বেকারির ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। দোভাষীর কাছ থেকে ওই ঘটনার জাপানী অনুবাদ শুনে হাতে থাকা প্যাডে নোট নিচ্ছিলেন তাসুলো। ফাঁকে ফাঁকে প্রশ্নও করছিলেন। দোভাষীর মাধ্যমে তাসুলোর সঙ্গে এ প্রতিবেদকেরও কথা হয়। গুলশানে জঙ্গী হামলার পর জাপান সরকার বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। কিন্তু জাপানের সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকরা এ ঘটনাকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তাসুলো বলেন, বাংলাদেশের প্রতি সাধারণ জাপানীদের ধারণা ইতিবাচক। এ দেশের সাধারণ মানুষের ওপর তাদের আস্থা আছে। তবে একসঙ্গে এত (সাত জাপানী) নাগরিকের নিহতের ঘটনায় তারা স্তম্ভিত। তারা এও বিশ্বাস করেন যারা এ হামলা করেছে তারা ছাড়া এ দেশের আর সব মানুষই ভাল ও অনুভূতিপ্রবণ। এ সময় পাশে থাকা আলমগীর দোভাষীকে বলেন, উনারে (জাপানী সাংবাদিক) বলেন, নিজের ভাই মারা গেলে যেমন কষ্ট হয়, এতগুলো বিদেশী মানুষ মরাতেও সে রকম কষ্ট হইতেছে। উনারা তো (বিদেশী) আমাগো মেহমান। শুক্রবার সারা রাইত ঘুমাইতে পারি নাই। অহনো ওই রাতে রেস্টুরেন্টের ভেতরের মানুষের আহাজারি আর গোলাগুলির আওয়াজ মনে হইলে রোম খাড়া হয়ে যায়। নিজের কথার সপক্ষে প্রমাণ দেয়ার জন্য তিনি জাপানী সাংবাদিককে নিজের হাত উঁচিয়েও দেখান। জঙ্গীবাদ সম্পর্কে জাপানী সাংবাদিকদের মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। এর সমাধানও সময়সাপেক্ষ। বারাক ওবামা পর্যন্ত এটা স্বীকার করেছেন। তবে কেবল অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করে জঙ্গীবাদ নির্মূল করা যাবে না। প্রয়োজন বহুমুখী সামাজিক উদ্যোগ ও সচেতনতা। পৃথিবীর বেশিরভাগ সমস্যার মূলে রয়েছে দারিদ্র্য। তাই দারিদ্র্য দূর করতে হবে। আর বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে ভালবাসা ও শান্তির বারতা বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। জঙ্গী হামলার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও গুলশানের ঘটনাস্থল ঘিরে দেশী-বিদেশী সাংবাদিকের তৎপরতায় ভাটা পড়েনি। সোমবার সকাল থেকেই গণমাধ্যমকর্মীরা এসে এখানে জড়ো হন। ভয়াবহ এ জঙ্গী হামলার পর ঢাকায় এসেছেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। এত বিদেশী সাংবাদিককে ঢাকায় এর আগে কখনও দেখা যায়নি। সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কমপক্ষে ১৬ জাপানী সাংবাদিকের আনাগোনা দেখা যায়। এর মধ্যে দ্য জাপান নিউজ এবং আশাহি শিম্বুনের একাধিক সাংবাদিক রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে দুপুর পর্যন্ত ইতালির কোন সাংবাদিককে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি। গুলশানে জঙ্গী হামলায় নয় ইতালীয় নিহত হন।
×