ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রেকর্ড অর্থে বিপিএলের স্বত্ব কিনলো এসজিএস

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১২ জুন ২০১৬

রেকর্ড অর্থে বিপিএলের স্বত্ব কিনলো এসজিএস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দেশের শীর্ষস্থানীয় পেশাদার ফুটবল লীগ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগকে (বিপিএল) সাফল্যম-িত করতে এবার এগিয়ে এসেছে সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টস লিমিটেড। আগামী পাঁচ বছরের জন্য বিপিএল সফলভাবে আয়োজন করতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টস লিমিটেড (এসজিএস)। তারা আশা করছে বিপিএল বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার বেশি আকর্ষণীয় ও জাঁকজমকপূর্ণ হবে। এই প্রথমবার বিপিএল (এবার অনুষ্ঠিত হবে এর নবম আসর) শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক না হয়ে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে হোম এ্যান্ড এ্যাওয়ে পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার বাফুফের সঙ্গে এসজিএসের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার র‌্যাডিসন হোটেলে। এতে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, বাফুফের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সহ-সভাপতি বাদল রায়, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, বিপিএলের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর এবং সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম এবং স্পন্সরকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মোঃ রুহুল আমিন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিপিএল-এ অংশগ্রহণকারী ১২ দলের কর্মকর্তা, জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন (ডিএফএ) এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার (ডিএসএ) কর্মকর্তারা। বাংলাদেশে বর্তমানে যে ফুটবল লীগ হয়, সেটা তেমন আকর্ষণীয় হয় না। দর্শকরাও ঠিকমতো মাঠে আসে না। কিন্তু এএসজিএস এই প্রথা ভাঙতে চায়। লীগটা শুধু ঢাকায় না রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে চায় তারা। সেই লক্ষ্যে আগামী ৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) স্বত্ব কিনে নিয়েছে তারা। বার্ষিক ৪ কোটি টাকায় প্রতিষ্ঠানটি এ স্বত্ব কিনে নিয়েছে। নতুন চুক্তি অনুযায়ী ঢাকাসহ সারাদেশের ৬টি ভেন্যুতে প্রিমিয়ার লীগের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আর বিপিএলের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ স্পন্সরশিপ মানি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে মাঠে গড়াবে ২০১৫-১৬ মৌসুমের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল। গত বছর ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই আসরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল ফ্যাশন হাউস মান্যবর। এবার লীগের পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা বদল হচ্ছে। দৃশ্যপটে এসেছে এসজিএস। তবে এক বছরের জন্য নয়, টানা পাঁচ বছর লীগ চালাবে এই প্রতিষ্ঠানটি। তবে ঈদ ও অন্যান্য কারণে লীগ শুরু হতে ৩-৪ দিন দেরির সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়ে বাফুফে। বিপিএল শুরুর তারিখ ছিল আগামী ১৫ জুলাই। লীগের টিকেট বিক্রি থেকে সাইফ পাওয়ারটেক লভ্যাংশ পাবে ৭৫ এবং বাফুফে, জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা পাবে ২৫ শতাংশ। লীগের মিডিয়া পার্টনারও থাকবে। লীগের সিংহভাগ খেলাই হবে ঢাকার বাইরে (১১০টি), যার সবগুলোই বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে। খেলা হবে ২২ রাউন্ডের। সপ্তাহে কমপক্ষে ৬ দিনই খেলা হবে। বাফুফে লীগের স্বত্ব বিক্রি করলেও টেকনিক্যাল সাপোর্ট, ম্যাচ কমিশনারসহ ম্যাচ সংক্রান্ত সবকিছুর স্বত্ব থাকছে বাফুফের হাতেই। এবারের লীগের খেলা হবে একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে। এক ভেন্যুতে এক রাউন্ডের খেলা হবে। তারপর খেলা শেষ হলে তারা অন্য ভেন্যুতে চলে যাবে। এভাবে প্রতিটি ভেন্যুতেই পর্যায়ক্রমে মোট ১৩২টি খেলা হবে। একটি ভেন্যুতে কমপক্ষে ৪টি দল অবস্থান করবে, তাদের আবাসন, যাতায়াত, খাওয়া, অনুশীলন ও নিরাপত্তা... সবকিছুরই ব্যবস্থা করা হবে। গত মৌসুমে মান্যবর প্রিমিয়ার লীগের স্পন্সরশিপ বাবদ বাফুফেকে দিয়েছিল এক কোটি টাকা। এক্ষেত্রে সাইফ পাওয়ারটেক বাফুফেকে দেবে চার কোটি টাকা। পাঁচ বছরে চার কোটি টাকা হারে মোট বিশ কোটিতে লীগের স্বত্ব কিনেছে তারা। প্রথম মৌসুমে লীগ আয়োজনের জন্য বাফুফে চার কোটি পেলেও আসলে এটা অর্থের বেশিরভাগ ব্যয় হবে ব্র্যান্ডিংয়ের কাজে (বাফুফে সূত্রে জানা গেছে আসন্ন মৌসুমের লীগ আয়োজনে আসলে খরচ হবে কমপক্ষে ৮ কোটি টাকা)। বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন বলেন, ‘আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। বাফুফে তাদের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লীগের বিপণন স্বত্ব বিক্রি করেছে। এটা এই প্রমাণ করে যে, দেশের ফুটবল একটা পর্যায়ে এসেছে এবং আরেকটা পর্যায়ে যাবে। এটা একটা নিউ ডায়মেনশন, স্বাধীনতার পর লীগ ঢাকার বাইরেও অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য ক্লাবগুলোকে আন্তরিক ধন্যবাদ এই প্রক্রিয়ায় রাজি হওয়ার জন্য।’ বিপিএলের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর মমতাজ বেগম বলেন, ‘খুবই খুশি বিপিএলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে। বাংলাদেশে ফুটবল এখনও ভীষণ জনপ্রিয়। আমার নিজের এলাকা সিঙ্গারেই তো একটা ফুটবল ম্যাচ দেখতে ২০-৩০ হাজার দর্শক সমাগম হয়। আশা করি সবার সম্মিলিত চেষ্টাতে এদেশের ফুটবল অনেক উন্নতি করবে।’ প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে চেয়েছিল আগামী বছর থেকে লীগের সঙ্গে যুক্ত হতে। কিন্তু চলতি বছরের শেষদিকে বাংলাদেশ সুপার লীগ (বিএসএল) থাকায় (যদিও ভেন্যু সমস্যার কারণে এটি স্থগিত হয়ে গেছে) আগেভাগেই বাফুফের সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহী হয় তারা। কারণ সুপার লীগের প্রধান পৃষ্ঠপোষকও তারাই। বাফুফে জানিয়েছে, এবারের লীগ হবে ৬টি ভেন্যুতে। যদিও মোট সাতটি ভেন্যুকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। পরে একটি ভেন্যুকে বাদ দেয়া হবে। ভেন্যুগুলো হলো : ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম, সিলেট জেলা স্টেডিয়াম, রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়াম, বরিশাল জেলা স্টেডিয়াম, ময়মনসিংহের জেলা স্টেডিয়াম এবং গোপালগঞ্জের শেখ মনি ফজলুল হক স্টেডিয়াম। প্রথম চারটি স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট আছে। রাজশাহীরটায় ফ্লাডলাইট থাকলেও এর সংস্কার কাজ করবে এসজিএস। এখন দেখার বিষয়, নতুন রূপে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে কতটা সফল হয় ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ২০১৫’-১৬ মৌসুম।
×