ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যানজট নিরসনে স্বতন্ত্র মেট্রোপলিটন কর্তৃপক্ষ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১০ জুন ২০১৬

যানজট নিরসনে স্বতন্ত্র মেট্রোপলিটন কর্তৃপক্ষ হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরের যানজট নিরসনে একটি স্বতন্ত্র মেট্রোপলিটন যোগাযোগ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। পরিকল্পনা প্রণয়ন, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের লাইসেন্সিং পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের পরিচালনায় সমন্বয় সাধন করাই হবে এ কর্তৃপক্ষের প্রধান দায়িত্ব। যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট আইনী কাঠামো হালনাগাদকরণ করা হবে। প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে এজন্য এ খাতে বিশেষ বরাদ্দ দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া নতুন অর্থবছরের মধ্যেই এ প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর করার কথা ভাবছে সরকার। ঢাকার যানজট নিরসনে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) ডিপো নির্মাণের পূর্ত কাজ শুরু করা হয়েছে। শীঘ্রই শুরু হবে ডেডিকেটেড লেন নির্মাণের কাজ। এছাড়া স্ট্র্যাটিজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) হালনাগাদ করে এর আওতায় তিন স্তরবিশিষ্ট সার্কুলার রুট, পাঁচটি এমআরটি লাইন এবং দুটি বিআরটি লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে যানজট একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে যানজটের কারণে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন কম হচ্ছে শিল্পের। এমনকি দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও ঢাকার যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। এ বাস্তবতায় যানজট নিরসনে বাস্তবমুখী কর্মসূচী গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যানজট নিরসনে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরের যানজট নিরসনে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। গণপরিবহন ব্যবস্থায় স্বাচ্ছন্দ্য আনার লক্ষ্যে বিআরটিসি বহরে ৬০০টি বাস এবং ৫০০টি ট্রাক সংগ্রহের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ঢাকার যানজট নিরসনে ইতোমধ্যে বেশকিছু কর্মসূচীর বাস্তবায়ন হচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটিতে আউটার রিং রোড, ইউলুপ ও ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া লালখানবাজার হতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জানা গেছে, যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট আইনী কাঠামো হালনাগাদকরণ করা হয়েছে। যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনী কাঠামো হালনাগাদ করার লক্ষ্যে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) আইন-২০১৬, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৬, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৬ এবং মেট্রোরেল বিধিমালা-২০১৬ প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলছে। আইনগুলো অনুমোদনের জন্য শীঘ্রই জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। এদিকে, পূর্বাচল জলসিঁড়ি এলাকায় নবনির্মিতব্য মহানগরসহ রাজধানী ঢাকা এবং নিকটস্থ নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকার যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। মহানগরের যানজটের কারণ শুধু রাস্তা এবং উড়াল সেতুর অভাবই নয়, যানজট নিয়ন্ত্রণ ও নিরসনে পরিকল্পিত এবং সমন্বিত ব্যবস্থার দুর্বলতাও এর অন্যতম কারণ। আর এ কারণেই একটি স্বতন্ত্র মেট্রোপলিটন যোগাযোগ কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, রাজধানীতে যানজটের কারণে এক কাটি ৬০ লাখ মানুষের দৈনিক দুই কোটি ৪০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ায় দিনে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের (আইইবি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ আয়োজিত সেমিনারে এ তথ্য উপস্থাপন করেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। ওই গবেষণায় আরও বলা হয়, যানজটে পড়ে মহানগরীর ৭৩ ভাগ মানুষের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিও হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রাজধানীর সকল মানুষের দুই ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে গড়ে এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময়ই যানজটে আটকে থাকতে হয়। এছাড়া রাজধানীতে ৩০ ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলছে। সোয়া দুই লাখের স্থলে সাড়ে নয় লাখ গাড়ি চলাচলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উল্টোপথে চলা ও আইন না মানা, কার পার্কিংয়ের স্থানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, রাস্তা ও ফুটপাথ দখল অর্থাৎ আট ভাগ সড়কের মধ্যে কার্যকর রাস্তা মাত্র আড়াই ভাগ। এছাড়া সিএনজি স্টেশন, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা না থাকা ও ট্রাফিক সদস্যদের প্রশিক্ষণের অভাবেও যানজট হচ্ছে। পাশাপাশি উন্নয়ন কাজ সময়মতো না হওয়াকেও যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন সম্প্রতি এক সেমিনারে রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও মফস্বল পর্যায়ে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন।
×