ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মার্জারেই বিনিয়োগকারীদের লোকসান

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ৫ জুন ২০১৬

মার্জারেই বিনিয়োগকারীদের লোকসান

অপূর্ব কুমার ॥ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মার্জার বা একুইজিশনের অপর নাম লোকসান। কথিত রয়েছে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) বাজারে শেয়ার বিক্রির অনুমোদন না পেয়ে মার্জার ও একুইজিশনের মতো পথ বেছে নিচ্ছে অনেক দুর্বল কোম্পানির উদ্যোক্তারা। তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে একীভূতকরণের মাধ্যমে কৌশলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে আইপিওতে ব্যর্থ কোম্পানির শেয়ার। প্রাপ্য দামের চেয়ে বেশি দামে শেয়ার বিক্রি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে, অনুমোদন না পাওয়ার আশঙ্কায় অনেক দুর্বল মৌলের কোম্পানি আইপিওর আবেদনই করছে না। তার পরিবর্তে এগুলোকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে একীভূত করে নিচ্ছে। অভিযোগে জানা গেছে, মার্জার, একুইজিশন, এ্যামালগেমেশন ও টেকওভারের কোন নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় অনেক উদ্যোক্তা নিজেদের স্বার্থে এসব সুযোগের অপব্যবহার করে এসেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও এখন বিএসইসি মার্জার নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। মার্জার হচ্ছে একটি কোম্পানির সঙ্গে অন্য এক বা একাধিক কোম্পানির একীভূত হওয়া। ধরা যাক, ‘এ’ কোম্পানির সঙ্গে ‘বি’ ও ‘সি’ কোম্পানি একীভূত হচ্ছে। একীভূত হওয়ার পর ‘বি’ ও ‘সি’ কোম্পানির মালিকরা তাদের শেয়ারের বিপরীতে ‘এ’ কোম্পানির শেয়ার পাবেন। ‘এ’ কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে সহজেই উদ্যোক্তারা তাদের শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা তুলে নিতে পারেন। সর্বশেষ মার্জার বা একুইজিশনে কেয়া কসমেটিকসের বিনিয়োগকারীরা চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন। কারণ কোম্পানিটির অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো আইপিও আবেদনে ব্যর্থ হয়ে এই মার্জারের পথ বেছে নেয়। জানা গেছে, ২০১১ সালে কেয়া কটন মিলস ও কেয়া স্পিনিং মিলস প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের আবেদন করে। উভয় কোম্পানি শেয়ারের ফেসভ্যালু ১০ টাকার সঙ্গে ৩০ টাকা প্রিমিয়ামসহ বরাদ্দ মূল্য নির্ধারণ করে ৪০ টাকা। পরে ২০১২ সালের ৭ জুন কেয়া কটন মিলস প্রিমিয়াম কমিয়ে ৩০ টাকায় বরাদ্দের আবেদন জানায়। কিন্তু উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সিআইবি রিপোর্ট ইতিবাচক না হওয়ায় উভয় কোম্পানির আইপিওর আবেদন বাতিল করে বিএসইসি। আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রিতে ব্যর্থ হয়ে মার্জারের পথ বেছে নেন কেয়া গ্রুপের উদ্যোক্তারা। তালিকাভুক্ত কোম্পানি কেয়া কসমেটিকসের সঙ্গে কেয়া কটন ও কেয়া স্পিনিং একীভূত করা হয়। এখন কেয়ার মতোই সামিট গ্রুপের কোম্পানিগুলোও মার্জারের পথে হাঁটছে। কিছুদিন আগে বস্ত্র খাতের কোম্পানি অলটেক্স মুনাফায় আসার পরে অপর সহযোগী প্রতিষ্ঠান অলটেক্স ফ্রেবিক্সের সঙ্গে মার্জার করার প্রক্রিয়া রয়েছে। এই কারণে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের মাঝেও কিছুটা আতঙ্ক রয়েছে। তবে কেয়া কসমেটিকসের শেয়ারে বিনিয়োগের পরে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক ধরনের আতঙ্কে ভুগছেন। তাদের মতে, কেয়া কসমেটিকসের শেয়ার মার্জারের আগের কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল ২৮-৩০ টাকার মধ্যে। এখন সেই কোম্পানির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১২ টাকায়। অর্থাৎ কেয়া কসমেটিকসের সাধারণ শেয়ারধারীরা চরম লোকসানে পড়েছেন। এর আগে মার্জার করা বেক্সিমকো লিমিটেড, মুন্নু সিরামিক ও সামিট এলায়েন্স পোর্টের শেয়ারের দর বিশ্লেষণ করলেই পরিস্থিতি পুরোটা বোঝা যাবে। বাংলাদেশে মার্জারের প্রথম ফর্মূলার প্রয়োগ করে বেক্সিমকো গ্রুপ। এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বেক্সটেক্স লিমিটেডের সঙ্গে ২০০৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মার্জ করে বেক্সিমকো টেক্সটাইল, বেক্সিমকো ডেনিমস ও বেক্সিমকো নিটিং। এরপরে ২০০৮ সালে ৩০ অক্টোবর বেক্সিমকো লিমিটেডের ১টি শেয়ারের সঙ্গে শাইনপুকুর হোল্ডিং এ্যান্ড ফিশারিজের শেয়ার মার্জ করে। ২০১১ সালের ১ আগস্ট বেক্সিমকো লিমিটেডে একটি সঙ্গে আনুপাতিক হারে বেক্সটেক্সের ৫টি শেয়ার মার্জার করে। ২০০৮ সালের ২০ ডিসেম্বর অলিম্পিক ইন্ড্রাস্টিজের অলিম্পিক ইন্ড্রাস্টিজের ১টি শেয়ারের সঙ্গে তৃপ্তি ইন্ড্রাস্টিজের ৫ দশমিক ৮৯টি শেয়ার একীভূত হয়। ২০১১ সালের ২৬ মে বিএসআরএম আরয়নের ১টি শেয়ারের সঙ্গে ১টি স্টিল কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারের মার্জার হয়। একই বছরের ২৩ নবেম্বর মুন্নু সিরামিকের সঙ্গে মুন্নু জুটস ইন্ড্রাস্টিজের লিমিটেড, মুন্নু প্রিন্টিং এ্যান্ড প্যাকেজিং মার্জ করে। একইভাবে ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি সামিট এলায়েন্সের পোর্টের সঙ্গে ওশান কন্টিনন্টোর লিমিটেডের শেয়ার একীভূত হয়। একমাত্র অলিম্পিক ইন্ড্রাস্টিজ ছাড়া বাকি সবকটি কোম্পানির শেয়ার দর ও মুনাফার নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়।
×