ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ আফ্রিকা পরাজিত ৪ উইকেটে; আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই নারাইনের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং (৬/২৭)

নারাইন-পোলার্ড নৈপুণ্যে জয় ক্যারিবীয়দের

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ৫ জুন ২০১৬

নারাইন-পোলার্ড নৈপুণ্যে জয় ক্যারিবীয়দের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ত্রিদেশীয় সিরিজে দারুণ শুরু করেছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুক্রবার রাতে গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪ উইকেটে পরাজিত করেছে। লো-স্কোরিং ম্যাচে যে উত্তেজনা ও স্নায়ুচাপের সৃষ্টি হয়েছিল সেটার মূলে ছিলেন ক্যারিবীয় অফস্পিনার সুনিল নারাইন। তিনি ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে মাত্র ২৭ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ধসিয়ে দেন প্রোটিয়া ইনিংস। আগে ব্যাট করে ৪৬.৫ ওভারে মাত্র ১৮৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে সেটা নিয়েই দারুণ লড়েছে প্রোটিয়া বোলাররা। কিন্তু বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান কাইরন পোলার্ড ক্যারিবীয়দের চাপমুক্ত করেছেন দারুণ এক হার না মানা অপরাজিত অর্ধশতকের ইনিংস উপহার দিয়ে। ৪৮.১ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯১ রান তুলে জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এদিন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের শততম ছক্কার মালিক হয়েছেন পোলার্ড। পরাজয়ের কারণ হিসেবে প্রোটিয়া অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স শেষদিকের ওভারে ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওপেনিং জুটি হিসেবে ৫০তম বার ব্যাট হাতে নামেন কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলা। শুরুটাও ভাল করেছিলেন তারা। ৯.৫ ওভারে ৫২ রানের জুটি গড়ার পর সেখানে প্রথম আঘাত হানেন কার্লোস ব্রেথওয়েট। সরাসরি বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন কককে (৩৪ বলে ৩০; ৬টি চার)। পরের ওভারেই দারুণ খেলতে থাকা আমলাকে (২৬ বলে ২০) সাজঘরে ফেরান নারাইন। গত বছর নবেম্বরে সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সি গায়ে খেলার পর এটিই ছিল তার প্রথম ম্যাচ। আর সে ম্যাচেই পেয়ে যান আমলার উইকেট। এরপর উইকেটে এসে ধীরস্থির ভঙ্গিতে ব্যাটিং করতে থাকেন ভিলিয়ার্স ও রাইলি রুশো। অথচ এ দু’জন বিশ্ব ক্রিকেটে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হিসেবেই পরিচিত। তারা তৃতীয় উইকেটে ৭৮ রানের জুটি গড়েন ২০ ওভার খেলে। তবে শুরুর ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠেছিল প্রোটিয়ারা। কিন্তু এরপরই যেন বিপর্যয় নেমে আসে। ভিলিয়ার্সকে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ লুফে ফিরিয়ে দিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন জেরেমি টেইলর। ৪৯ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলার পথে কোন বাউন্ডারিই হাঁকাননি ভিলিয়ার্স। এর আগেই রুশোও ক্যাচ দিয়েছিলেন টেইলরের বলে ২৭তম ওভারে, কিন্তু সেটা হাতছাড়া করেন ফিল্ডার। ৩৭ রানে ব্যাট করছিলেন তখন রুশো। সেই রুশো-জেপি ডুমিনির সঙ্গে ভালই খেলছিলেন। কিন্তু ৮৩ বলে ২ চারে ৬১ রান করা রুশোকে ফিরিয়ে দেন নারাইন। এরপর রীতিমতো মড়ক লেগে যায় নারাইনের বিধ্বংসী ঘূর্ণি ছোবলে। সর্বশেষ ২৮ রাানে ৭ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ পর্যন্ত গুটিয়ে যায় ১৮৮ রানে। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে ২৭ রানে ৬ উইকেট নেয়া নারাইন দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করেন এ ম্যাচ দিয়ে। এর আগে তার ক্যারিয়ার সেরা ছিল ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৭ রানে ৫ উইকেট; সেটি আবার ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের ইতিহাসে কোন স্পিনারের সেরা বোলিং নৈপুণ্য। স্বল্প টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে অবশ্য শুরুটা তেমন সুবিধা মতো হয়নি ক্যারিবীয়দের। প্রোটিয়া পেসারদের দাপটে রান তুলতে হিমশিম খাচ্ছিলেন জনসন চার্লস ও আন্দ্রে ফ্লেচার। গুগলি বোলার ইমরান তাহির বোলিংয়ে এসেই ফিরিয়ে দেন ফ্লেচারকে (১১)। চার্লসকেও (৫২ বলে ৩১) শিকার করেন তিনি। এক পর্যায়ে ৭৬ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু পোলার্ড ক্রিজে আসার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ড্যারেন ব্রাভোর সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৭৪ রানের জুটি গড়েন তিনি মাত্র ৭৭ বলে। ব্রাভো (৬৯ বলে ৩০) ফিরে যাওয়ার পরও থামেনি পোলার্ড, তুলে নেন ক্যারিয়ারের অষ্টম অর্ধশতক। তিনি দুই প্রোটিয়া স্পিনার তাহির ও এ্যারন ফাঙ্গিসোর ভয়ানক ঘূর্ণির মুখে দলকে বিজয়ী করেই মাঠ ছাড়েন। ৬৭ বলে ২ চার ও ৬ ছক্কায় ৬৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ১১ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটে ১৯১ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় ক্যারিবীয়রা। পরাজয়ের পর শেষদিকের ১০/১২ ওভারে ব্যাটিং বিপর্যয়কেই দোষেন ভিলিয়ার্স। তিনি বলেন, ‘হতাশাজনক হার এটি। আসলে শেষ ১০/১২ ওভারে আমরা যেমন ব্যাটিং করেছি সেখানেই হেরে গেছি।’
×