ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এইচ এইচ টেক্সটাইলের এমডির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৫ মে ২০১৬

এইচ এইচ টেক্সটাইলের এমডির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেষ পর্যন্ত আট কোটি ৩৫ লাখ টাকার বিদ্যুত চুরির অভিযোগে এইচ এইচ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাজুল ইসলাম ঢালীসহ পল্লী বিদ্যুত সমিতির চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় বৃহস্পতিবার মামলাটি করেন দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী। ‘বিদ্যুত চোরকে বাঁচাতে মরিয়া আরইবি ॥ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক জনকণ্ঠে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর এইচ এইচ টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাজুল ইসলাম ঢালী তার ২০ কোটি টাকার মানহানি ঘটেছে উল্লেখ করে একটি মানি স্যুট মামলা দায়ের করেন। আর্জিতে দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে বিবাদী করা হয়। মামলাটি বর্তমানে ১ম যুগ্ম জেলা জজ ঢাকার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত এইচ এইচ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ২০০৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত কম বিল দেখিয়ে সরকারের ৮ কোটি ৩৫ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৬ টাকা পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাত করা হয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিদ্যুত সংযোগ নিয়ে ২১২৫১৪৪৬ নম্বর মিটারের বিপরীতে কম বিল দেখানো হয়। ওই সময় রূপগঞ্জে কর্মরত বিদ্যুত বোর্ডের চার কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত ছিলেন। মামলায় এদের আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেনÑ কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুত সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক স্বদেশ চন্দ্র সাহা, দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১-এর সহকারী মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতির লাইন টেকনিশিয়ান নুরুল হক ও লাইনম্যান শাহরোম বেগ। দুদকের অনুসন্ধানে ওই সময় স্থানীয় পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে কর্মরত এদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী শনিবার জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘ অনুসন্ধানে তাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে। তারা সকলে বিদ্যুত চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানান তিনি। মেসার্স এইচ এইচ টেক্সটাইল মিলে স্থাপিত মিটারটি ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল সরেজমিন পরিদর্শনে যান স্থানীয় জিএমের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। তখন তারা চুরির বিষয়টি হাতেনাতে ধরেন। এ সময় মিটারের একটি বডি সিল (নিরাপত্তা সিল) পাওয়া যায়নি এবং মিটারের দুই ফেজে কোন বিদ্যুত সরবরাহ ছিল না। বিষয়টিকে মিটার টেম্পারিং বলা হয়। গ্রাহক দীর্ঘদিন ধরে মিটার টেম্পারিং করে অতিরিক্ত বিদ্যুত ব্যবহার করে আসছিলেন। এ ধরনের বড় ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুত আইন ও পবিস নির্দেশিকা ৩০০-৩০ এর ০৮ নং উপধারা মতে গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সুষ্পষ্ট বিধান থাকলেও তা করা হয়নি। কিন্তু তা না করে অন্য একটি মিটার দিয়ে গ্রাহকের বিদ্যুত লাইন সচল রাখা হয়। পরে আরইবির পরিচালক হারিসুর রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি বিদ্যুত চুরির সময়কাল এবং জরিমানা নির্ধারণ করেন। যাতে আট কোটি ৩৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা আদায়ের কথা বলা হয়। ওই বছরের ২৪ জুন আরইবির উপ-পরিচালক এসএম নাজমুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে স্থানীয় জিএমকে বকেয়া বিল আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। একই চিঠিতে বলা হয়Ñ এই চুরির ঘটনা উদ্ঘাটনকারীদের পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে স্থানীয় জিএমকে সিনিয়র জিএম হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা আরইবির পরিচালক হারিসুর রহমান এ প্রসঙ্গে ওই সময় জনকণ্ঠকে বলেন, হ্যাঁ, তারা বিদ্যুত চুরিই করেছিল। দীর্ঘ সময় ধরে এভাবে বিদ্যুত চুরির পরও পবিসের আরও আগেই বিষয়টি উদ্ঘাটন করা উচিত ছিল কিনাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, তা ছিল। এজন্য কোন কর্মকর্তাকে দায়ী করেছেন কিনাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও হয়নি; তবে প্রক্রিয়া চলছে। চাইলেই কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না, এর জন্য একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। যদিও এখন দুদক বিদ্যুত চুরির সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে তাদের সকলই কর্মরত ছিলÑ এদের বিরুদ্ধে বদলি করা ছাড়া কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল বলে জানা যায়নি।
×