ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দাবার উন্নয়ন চান তিন গ্র্যান্ডমাস্টার

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১০ মে ২০১৬

দাবার উন্নয়ন চান তিন গ্র্যান্ডমাস্টার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কদিন আগেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন নিয়ে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। কাদা ছোড়াছুড়ি, আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ, হুমকি ... বাদ ছিল না কিছুই। ঠিক একই অবস্থা এখন দাবা ফেডারেশনের আসন্ন নির্বাচন (আগামী ৩১ মে) নিয়েও। ইতোমধ্যেই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু গত ৪ মে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা অনুযায়ী খসড়া ভোটার তালিকায় কাউন্সিলর নিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করেছে বিরোধী প্যানেলের, যাদের অধিকাংশ সদস্যই আবার বর্তমান কমিটির লোক! এই অনিয়মগুলো জরুরী ভিত্তিতে সংযোজন, পরিবর্তন ও সংশোধন করার দাবি জানিয়েছে তারা। এছাড়া ফেডারেশনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচিত কমিটির মেয়াদকালে ন্যূনতম একটি সাধারণ সভার আয়োজন করে বিগত চার বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন না করে নির্বাচনমুখী হওয়া, এমনকি ফেডারেশনের হিসাব-নিকাশ অনিয়ম ও তার ফয়সালা না করে নানা হুমকি-ধামকি আর ভয়ভীতির মাধ্যমে ফেডারেশনের গুটিকয়েক সুবিধাবাদী দুর্নীতিবাজ দাবা কর্মকর্তারা তড়িঘড়ি করে একক প্যানেলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তারা। সোমবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের একটি রেস্টুরেন্টে এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন বিরোধীপক্ষ। আসন্ন নির্বাচনে বিরোধী প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয় মুজিবুর রহমান হাওলাদারের নাম। সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী দাবা দলের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমান মোহন বলেন, ‘ফেডারেশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এ পর্যন্ত ৩২ লাখ টাকার দুর্নীতি করেছেন। এ নিয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্টও হিমাগারে আছে। এসব অনিয়মের দালিলিক প্রমাণ আমাদের হাতে আছে।’ নরওয়েতে অনুষ্ঠিত অলিম্পিয়াড দাবায় বাংলাদেশ দাবা দলের সঙ্গে ১৭ কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণকে ‘রেকর্ড’ বলে সমালোচনা করেন মোহন। তিনি আরও জানান, সিঙ্গাপুর থেকে ফিদে থেকে ৫৮০টি ঘড়ি (দাবা খেলার বিশেষ ঘড়ি) আনে দাবা ফেডারেশন। সেই ঘড়ি কাস্টমসে পড়ে থাকে ছয় মাস। ফলে ওয়েটিং চার্জ জমে যায় ৫০ হাজার টাকার মতো! পরে সরকারের সাহায্যে ৩২৪টি ঘড়ি ছাড়িয়ে আনেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গাজী সাইফুল তারেক। সেগুলো তিনি ফেডারেশনে জমা না দিয়ে নিজের বাসায় নিয়ে রাখেন। মোহন সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ করেন নৌবাহিনীর একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে না পারা প্রসঙ্গে, ‘২০১৫ এশিয়ান ক্লাব কাপ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে (শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত) খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দাবা দল। তাদের ওই টুর্নামেন্টে খেলার আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেডারেশনে চিঠি আসে। কিন্তু দাবা ফেডারেশন সেই আমন্ত্রণের বিষয়টি জানায়নি নৌবাহিনী দাবা দলকে। ব্যাপারটা চেপে যায় বেমালুম! এছাড়া নির্বাচনে দাবাড়ুদের ভোটার হওয়ার নিয়ম নিয়ে দাবা ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের গঠনতন্ত্রের নিয়মের সাংঘর্ষিক হওয়ার ব্যাপারটিও উঠে এসেছে সংবাদ সম্মেলনে। যদিও সভায় উপস্থিত তিন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান, আবদুল্লাহ আল রাকিব এবং এনামুল হোসেন রাজীব এ নিয়ে কোন আগ্রহ দেখাননি। তারা দাবি করেন, তারা কোন প্যানেলের নন। বরং অপর প্যানেল যদি নির্বাচনী সভায় তাদের ডাকে, তারা অবশ্যই সেখানে যাবেন। জিয়া বলেন, ‘আমরা চাই নির্বাচন উপলক্ষে যেন কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হয়। সব সময়ই দুই প্যানেলের যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে আমাদের দাবাড়ুদেরই পড়তে হয়।’ রাকিব বলেন, ‘বিগত কমিটি আমাদের সঙ্গে কখনই সুসম্পর্ক রাখেনি, যোগাযোগও করেনি। এটা দুঃখজনক।’ রাজীব বলেন, ‘দাবাড়ুদের কাউন্সিলর হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। দাবা একটা বোরিং খেলা। এখানে খারাপ চালটা এড়িয়ে গিয়ে অন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ চাল দিতে হয়। নির্বাচনেও তাই। জানি কি করলে এখানে খারাপ হবে, তাই সেটা এড়াতে চাই। হয় নিশ্চিত হার, নয়তো সুযোগ নেয়া, দুটোর একটা করতে হবে। আসলে দাবা এখন মৃতপ্রায় খেলা। আমি চাই দাবার নতুন কমিটিতে এমন সব লোকেরা আসুক, যারা দাবা নিয়ে সত্যিকারভাবেই কিছু করতে চান। নির্বাচনের খাতিরে শুধুই নির্বাচন না করে দাবাকে বাঁচানোর জন্য নির্বাচন করা উচিত।’
×