ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

উদ্বিগ্ন কেরির ফোন, খুনীদের বিচার হবেই ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

উদ্বিগ্ন কেরির ফোন, খুনীদের বিচার হবেই ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাজধানীর কলাবাগানে সাম্প্রতিক জোড়া হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। ওই ঘটনায় নিহত জুলহাস তাদের সহকর্মী ছিলেন জানিয়ে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধও জানিয়েছেন জন কেরি। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু ক্লু পাওয়া গেছে জানিয়ে অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হবে বলে আশ্বস্ত করেন তাকে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে এই উদ্বেগের কথা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি। রাত ৯টা ৪ মিনিট থেকে ৯টা ২০ পর্যন্ত ১৬ মিনিট জন কেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রধানমন্ত্রী ও জন কেরির টেলিফোনালাপের বিষয়ে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি জানান, কুশল বিনিময়ের পর জন কেরি কলাবাগান হত্যাকা-ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘জুলহাস ছিলেন আমাদের সহকর্মী।’ জন কেরি ঘাতকদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলাবাগানের ওই দুর্ভাগ্যজনক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাকে ফোন করে উ™ে^গ প্রকাশ করার জন্য জন কেরিকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত দৃঢ়। এক্ষেত্রে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। আমাদের আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কঠোর পরিশ্রম করছে। কিছু ক্লু পাওয়া গেছে। আমরা আশাকরি অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে পারব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোন ধরনের হত্যাকাণ্ডকে আমরা ঘৃণা করি। কলাবাগানে যে দুজনকে হত্যা করা হয়েছে তাদের একজন আমার সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট আত্মীয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার পরিবারের সকল সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার। আজ শেখ জামালের জন্মদিন। আমার এই ছোট্ট ভাইকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর দুইজন হত্যাকারী এখনও যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন।’ তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে জন কেরির প্রতি অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাউন্টার টেরোরিজম বিষয়ে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। এ সহযোগিতার আওতায় ইতোপূর্বে এফবিআই বাংলাদেশে এসেছে। আমি আশা করি কাউন্টার টেরোরিজম বিষয়ক সহযোগিতার ক্ষেত্র অব্যাহত থাকবে। কোনও তথ্য পেলে তা শেয়ার করা হবে। জন কেরি বলেন, কাউন্টার টেরোরিজম সংক্রান্ত সহযোগিতা আরও এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেসাই বিসওয়ালকে তিনি বাংলাদেশে পাঠাবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে যারা প্রকাশ্যে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তারাই এই হত্যাকারীদের মদদ যোগাচ্ছে। হত্যাকারীরা হত্যার ক্ষেত্রে সফট-টার্গেটে আগাচ্ছে। তারা ইমাম, পুরোহিত, পাদ্রিদের টার্গেট করছে। এসবই ঠাণ্ডামাথার হত্যাকাণ্ড। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে একই পরিবারের আট জনকে হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানান। এছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়ায় বাংলাদেশী দম্প্রতির হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জন্য জন কেরির প্রতি অনুরোধে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার রাজধানীর কলাবাগানে ইউএইস এইড কর্মকর্তা ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল সহকারী জুলহাস ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় নৃশংসভাবে খুন হন। এ ঘটনার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর, ইরোপীয় ইউনিয়ন, ডেনমার্ক এবং বৃটিশ মন্ত্রী হুগো সয়ার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। মার্কিন গোয়েন্দা এফবিআইও এ হত্যাকা-ের ঘটনার তদন্ত করার আগ্রহ দেখিয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাত করেন ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সা বার্নিকাট। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনার তদন্তে সহযোগিতা করতে চায়। বাংলাদেশ তাদের শক্তিশালী অংশীদার।
×