ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি ভোটে সহিংসতা রোধে সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থা নিচ্ছে ইসি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

ইউপি ভোটে সহিংসতা রোধে সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থা নিচ্ছে ইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা মোকাবেলায় উপায় খুঁজতে আজ আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইসি। বেলা সাড়ে ১১টায় ইসি সচিবালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। বৈঠক উপলক্ষে আগেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রধানদের কছে চিঠি দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধতন সদস্যরা বৈঠকে অংশ নেবেন। ইউপি নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর গত ৩ মার্চে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসে ইসি। তবে দু’দফায় ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় করণীয় ঠিক করতে পুনরায় এ বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই ধাপের ভোট শেষ হয়েছে। আরও চার ধাপের নির্বাচন এখনও বাকি রয়েছে। বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনার পাশাপাশি নির্দেশনামূলক বৈঠক হবে এটি। তারা জানান, ভাল নির্বাচন করার বিষয়ে ইসির উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা বন্ধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা বলছেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে আগামী চার ধাপের নির্বাচনে সহিংসতা রোধের কৌশলও নির্ধারণ করা হবে। ইতোমধ্যে তৃতীয় ধাপ থেকে নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য করতে ইতোমধ্যে কমিশন সবাইকে আশ্বস্ত করেছে। জানা গেছে, বৈঠকে নির্বাচন আরও সুষ্ঠু করতে দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। নির্বাচনী অপরাধ বন্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ বিষয়েও আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি আগামী দফা থেকে নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে কোন প্রকার সহিংসতার ঘটনা না ঘটে তা রোধে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। গত ১১ ফেব্রুয়রি সারাদেশে চার হাজার ২৭৫টি ইউপিতে ছয় দফায় নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। প্রথম থেকেই এ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বার বার কমিশনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলে অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রতিফলিত হয়নি। এর আগে ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৩ মার্চ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর কমিশন থেকে বলা হয়, সবকিছুই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মাঠের পরিস্থিতি ভাল। আশা করি ভালভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে। বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নির্বাচনে অনিয়ম প্রতিরোধে শেষ বুলেট পর্যন্ত লড়ার নির্দেশও দেন। কিন্তু ২২ মার্চ প্রথম দফায় নির্বাচনের পর পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। সারাদিন সুষ্ঠু নিবাচনে কমিশন থেকে ব্যাপক সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হলেও নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় তাদের অর্জন ম্লান হয়ে পড়ে। কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলতে বাধ্য হন, সহিংসতার কয়েকটি ঘটনা কমিশনের সামগ্রিক অর্জনকে ম্লান করেছে। দুষ্কৃতকারীরা কৌশল পাল্টেছে। দুই ধাপের নির্বাচনে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার পাশাপাশি খোদ সরকারী দলের পক্ষ থেকেও অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। মুখে তারা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বললেও সহিংসতায় কমিশনকে আরও কঠোর হওয়ায় পাশাপাশি সহিংতার দায় কমিশনের ওপর চাপানো হয়। অব্যাহত এসব সমালোচনার মুখে পড়ে কমিশন থেকে আগামী নির্বাচনগুলো শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। তাদের এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ কর হয়, কমিশন দৃঢ়তার সঙ্গে ভোটার ও দেশবাসীকে জানাচ্ছে যে, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটারধিকার প্রয়োগ করতে পারে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য রাজনৈতিক দল ও তাদের কর্মী, প্রার্থী, প্রার্থীর এজেন্ট সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রতিনিয়ত উচ্চমানের নির্বাচন করার জন্য সচেষ্ট হয়েছে। এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। কমিশন আশা করে, সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় পরবর্তী পর্যায়ে আরও অধিকতর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম হবে। জানা গেছে, ইউপি নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের মাঠে নামার ঘোষণায় তৃণমূলে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ধাপের নির্বাচনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছে কমিশন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে মূলত নতুন করে এ বৈঠক ডাকা হয়েছে। একই সঙ্গে যেসব জেলায় আগামীতে নির্বাচন হবে সেগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা কী হবে তা নির্ধারণ করা হবে। ইসির কর্মকর্তারা মনে করেন, এদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকেও মাঠপর্যায়ের সার্বিক পরিস্থিতির বিবরণ পাওয়া যাবে। সে আলোকেই কৌশল নির্ধারণ করা হতে পারে।
×