ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জরিমানার টাকা মাতবরের পকেটে ॥ ছাত্রীর স্কুল বন্ধ, বাবা নিখোঁজ

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৭ এপ্রিল ২০১৬

জরিমানার টাকা মাতবরের পকেটে ॥ ছাত্রীর স্কুল বন্ধ, বাবা নিখোঁজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ৬ এপ্রিল ॥ মান্দায় সংখ্যালঘু পরিবারের এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা মাটিচাপা দিতে গ্রাম্য সালিশে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ৩ বখাটেকে ছেড়ে দিয়েছে মাতবররা। ঘটনার পর থেকে ওই পরিবারের দিন কাটছে চরম আতঙ্কে। তিন দিন ধরে স্কুলে যেতে পারছে না ওই ছাত্রী। বুধবার সকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তার বাবাকেও। এ অবস্থায় মা-মেয়ের দিন কাটছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। ভিকটিম স্কুলছাত্রীর মা জানান, তার মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। সোমবার সকাল ৯টার দিকে গ্রামের পেছনের রাস্তা দিয়ে স্কুলের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। পথে গোলাবাড়ী আমবাগানে পৌঁছলে আগে থেকেই অবস্থান নেয়া বখাটে শরিফ, আসাদুল ও ফরিদ মেয়েটিকে আটকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে বখাটেরা মাঠের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, বিষয়টি স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তির জন্য সোমবার সন্ধ্যায় পাকুড়িয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সালিশের আহ্বান করেন ভারশোঁ ইউনিয়নের মেম্বার সাব্বর আলী ও স্থানীয় মাতবর আব্দুস সামাদ সরদার। সেখানে উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে বখাটেদের আত্মীয়-স্বজনের বাগ্বিত-া ও হাতাহাতির ঘটনায় সালিশ বৈঠকটি ভ-ুল হয়ে যায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কালীসফা গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে কালীসফা খামারবাড়িতে আবারও সালিশের আয়োজন করা হয়। তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সালিশে ভারশোঁ ইউনিয়নের সদস্য সাব্বর আলী, পাকুড়িয়া ভটভটি সমিতির সভাপতি ইসাহাক আলী, চেইন মাস্টার মমতাজ হোসেন, আব্দুস সামাদ সরদারসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ৩ বখাটের নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন মাতবররা। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে জুতাপেটা করা হয়। জরিমানার টাকা ভিকটিম পরিবারকে না দিয়ে পকেটস্থ করেন মাতবররা। এদিকে বুধবার সকাল থেকে ওই স্কুলছাত্রীর বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার স্ত্রী জানান, সকালে কোন কিছু না খেয়েই তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ রয়েছে। ঘটনার পর থেকে তাদের হুমকির মুখে রাখা হয়েছে। সালিশের সভাপতি তারেক রহমান জানান, বখাটেদের জুতাপেটা ও জরিমানা করে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ৫০ হাজার নয়, বখাটেদের নিকট থেকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সেই টাকা এখনও তার পকেটে রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
×