ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রবি-এয়ারটেল একীভূত হওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৭ মার্চ ২০১৬

রবি-এয়ারটেল একীভূত হওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু

ফিরোজ মান্না ॥ বাংলাদেশে রবি আজিয়াটা ও ভারতীয় এয়ারটেল কার্যক্রম একীভূত করার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একীভূত হওয়ার সব কাগজপত্র দুই কোম্পানি বিটিআরসির কাছে জমা দিয়েছে। বিটিআরসি ইতোমধ্যে দুই কোম্পানি একীভূত হওয়ার উপর ‘পাবলিক হেয়ারিং’ করেছে। একই সঙ্গে কনসালটেন্ট নিয়োগ করেছে। পাবলিক হেয়ারিংয়ের বিভিন্ন মন্তব্য ও কলসালটেন্টের রিপোর্ট বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। মন্ত্রণালয় আবার এসব কিছু আদালতে পাঠাবে। আদালত অনুমতি দিলেই দুই কোম্পানি একীভূত হতে পারবে। একীভূত হওয়ার পর নতুন কোম্পানির নাম হবে ‘রবি’। মোবাইল নাম্বারে কোন পরিবর্তন হবে না। রবির নাম্বারই নতুন কোম্পানির নাম্বার হবে। বাংলাদেশে বিদেশী কোম্পানি একীভূত হতে গেলে আদালতের অনুমতি নিতে হয়। এই নিয়ম বিশ্বের অনেক দেশে রয়েছে। আবার অনেক দেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থাই কাজটি করে থাকে। বিটিআরসি জানিয়েছে, একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। এই সময় পর্যন্ত দুই কোম্পানির কার্যক্রম আলাদাভাবেই চলবে। সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ব্যবসা এক করার আলোচনা শুরু করে রবি ও এয়ারটেল। পরে একমত হয়ে দুই কোম্পানি একীভূত হওয়ার অনুমতি চেয়ে এয়ারটেল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত দাস শর্মা এবং রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুপুন বীরাসিংহের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বিটিআরসিতে পাঠানো হয়। দুই কোম্পানির যৌথ চিঠিতে বলা হয়, এক হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের ৭৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ ও এনটিটি ডোকামোর কাছে। বাকি ২৫ শতাংশ শেয়ার ভারতীয় এয়ারটেলের কাছে থাকবে। রবির ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ৭০ শতাংশ শেয়ার থাকবে আজিয়াটার কাছে আর ৫ শতাংশ থাকবে ডোকোমোর কাছে। দুটি কোম্পানি একীভূত হলে গ্রাহকদের কোন ধরনের অসুবিধা হবে না বলে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এতে গ্রাহকরা আরও উন্নত সেবা পাবে। এয়ারটেলের গ্রাহকদের নম্বর (০১৬ দিয়ে শুরু) অপরিবর্তিত থাকবে। তিন বছর পর ০১৬ দিয়ে নতুন সংযোগ দেয়া হবে না। এই চিঠির পর দুই কোম্পানি এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে একটি বৈঠক করে। সেখানে দুই কোম্পানির মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি সই হয়। চুক্তি সম্পাদনের পর আবার শেয়ার মূলধনের পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এতে আজিয়াটা একীভূত সত্তার ৬৮ দশমিক ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করবে। ভারতীয় এয়ারটেল ২৫ শতাংশ এবং বাকি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বর্তমানের অপর শেয়ারহোল্ডার জাপানের এনটিটি ডকোমোর কাছে থাকবে। নতুন করে শেয়ার বিন্যাসের চিঠি দুই কোম্পানি বিটিআরসির কাছে পাঠিয়েছে। রবির একজন কর্মকর্তা বলেন, দুই কোম্পানি এক হওয়ার প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র বিটিআরসির কাছে জমা দেয়া হয়েছে। বিটিআরসি কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর এই কাগজপত্র ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় পাঠাবে। মন্ত্রণালয় আবার এই কাগজপত্রগুলো তাদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আদালতে পাঠাবে। এরপর আদালত অনুমতি দিলে বিটিআরসি দুই কোম্পানির একীভূত হওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এভাবেই দুই কোম্পানি এক কোম্পানিতে পরিণত হবে। এর আগ পর্যন্ত রবি ও এয়ারটেল আলাদাভাবেই ব্যবসা করবে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রবির গ্রাহকসংখ্যা দুই কোটি ৭৯ লাখ আর এয়ারটেলের গ্রাহক সংখ্যা ৯০ লাখ ৮০ হাজার। দুটি কোম্পানি এক হলে তিন কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক নিয়ে এটিই হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর। বর্তমানে ৫ কোটি ৩৯ লাখ গ্রাহক নিয়ে দেশে শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। আর ৩ কোটি ২৪ লাখ গ্রাহক নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলালিংক। সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত ক্রমবর্ধমান হারে এগিয়ে চলেছে এবং অল্প সময়ে গ্রাহকের দোরগোড়ায় মোবাইল সেবা পৌঁছে গেছে। প্রস্তাবিত একীভূতকরণ এই শিল্প খাতে বিদ্যমান অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা দূর করতে সহায়ক হবে। বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা সুনিশ্চিত করবে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল এর ফলে আরও মানসম্পন্ন এবং বিস্তৃত নেটওয়ার্ক নিয়ে গ্রাহকদের কাছে অধিকতর সুবিধা এবং উন্নততর ডাটা ও অন্যান্য সেবা পৌঁছে দেবে রবি। একীভূত হলে এয়ারটেল বাংলাদেশের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি ও দেনার দায়িত্ব নেবে রবি। ভারতীয় এয়ারটেলের প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন ২০১৫ অনুযায়ী, এপ্রিল ২০১৪ থেকে মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত এক বছরে এয়ারটেল বাংলাদেশ লোকসান দিয়েছে ৬৭৪ কোটি ৬০ লাখ রুপি টাকায় ৮২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এ সময়ে এয়ারটেল বাংলাদেশের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৫৮ কোটি রুপী। একইভাবে এয়ারটেলের কাছে থাকা তরঙ্গের মালিকানাও একীভূত হওয়া রবির কাছে চলে যাবে। বর্তমানে এয়ারটেলের কাছে ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ আছে, আর রবির কাছে আছে ১৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। দুটি প্রতিষ্ঠানের তরঙ্গ এক হয়ে ৩৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ হলে তা সব মোবাইল অপারেটরের মধ্যে সর্বোচ্চ হবে। বর্তমানে গ্রামীণফোনের কাছে সর্বোচ্চ ৩২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ আছে। জানা গেছে, রবি আজিয়াটা মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ ও জাপানের এনটিটি ডোকামোর যৌথ উদ্যোগ। এখানে আজিয়াটার শেয়ারের পরিমাণ ৯২ শতাংশ আর এনটিটি ডোকোমোর শেয়ার ৮ শতাংশ। ১৯৯৭ সালে একটেল নামে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে রবি। বাংলাদেশের শিল্পগোষ্ঠী এ কে খান গ্রুপ ও টেলিকম মালয়েশিয়ার যৌথ অংশীদারিত্বের কোম্পানি ছিল একটেল। ২০০৯ সালে এ কে খান গ্রুপ ও টেলিকম মালয়েশিয়া আজিয়াটার কাছে রবিরার মালিকানা বিক্রি করে দেয়। ২০১০ সালের ২৮ মার্চ ‘রবি’ নামে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে তারা। রবির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭শ’ কোটি টাকায়।
×