ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মূত্রথলির প্রদাহ

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১ মার্চ ২০১৬

মূত্রথলির প্রদাহ

মূত্রথলির প্রদাহকে চিকিৎসার পরিভাষায় সিস্টাইটিস বলে। যদিও মহিলাদের এটা সচরাচর বেশি হয়। পুরুষরাও এতে আক্রান্ত হন এবং সব বয়সী পুরুষই আক্রান্ত হন। সিস্টাইটিসের ধরন সিস্টাইটিস বা মূত্রথলির প্রদাহের বিভিন্ন ধরন রয়েছে= ব্যাকটেরিয়াজনিত মূত্রথলির প্রদাহ: বএটি সবচেয়ে সাধারণ ধরন। পায়ুপথ থেকে ব্যাকটেরিয়া এসে মূত্রনালী দিয়ে মূত্রথলিতে প্রবেশ করে এবং সংক্রমণ ঘটায়। ইন্টার্সটিশিয়াল সিস্টাইটিস: সাধারণত মূত্রথলিতে আঘাতের কারণে এটি হয় এবং এ ক্ষেত্রে সংক্রমণের উপস্থিতি খুব কম থাকে। এ ধরনের রোগীর রোগ নির্ণয়ে সচরাচর অনেকেই ভুল করেন। এ রোগের চিকিৎসায় এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না। রোগের কারণ অজানা। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। ইয়োসিনোফিলিক সিস্টাইটিস: এটি সিস্টাইটিসের একটি বিরল ধরন। বায়োপসির মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়। এসব ক্ষেত্রে মূত্রথলির দেয়াল অসংখ্য ইয়োসিনোফিলে পূর্ণ থাকে। যদিও এ ধরনের রোগের সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে কিছু ওষুধ এ রোগ বাড়িয়ে দেয়। রেডিয়েশন সিস্টাইটিস: যেসব রোগী ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য রেডিয়েশন নিচ্ছেন, তাদের সচরাচর এ সমস্যা দেখা দেয়। হেমোরেজিক সিস্টাইটিস: এ ধরনের মূত্রথলির প্রদাহে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়ে। রোগের কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো স্বাভাবিক জীবাণুমুক্ত নিম্ন মূত্রপথ (মূত্রনালী ও মূত্রথলি) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হলে সিস্টাইটিস হয়। এ ক্ষেত্রে নিম্ন মূত্রপথ জ্বালা করে ও প্রদাহ হয়। এটা খুবই সাধারণ। বয়স্ক লোকদের সিস্টাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। ৮৫ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে সিস্টাইটিসের কারণ হলো ই. কলাই নামক ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলীর অস্ত্রপথের নিচের অংশে দেখা যায়। যৌনসঙ্গম সিস্টাইটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কারণ যৌনসঙ্গমের সময় ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালী দিয়ে মূত্রথলিতে ঢুকতে পারে। ব্যাকটেরিয়া মূত্রথলিতে ঢুকলেও সাধারণত প্রসাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। কিন্তু তার আগেই যদি ব্যাকটেরিয়া বংশবিস্তার শুরু করে, তাহলে মূত্রথলিতে সংক্রমণ ঘটে। সিস্টাইটিসের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে মূত্রথলি অথবা মূত্রনালীতে প্রতিবন্ধকতা, মূত্রপথে কোন যন্ত্র প্রয়োগ (যেমন ক্যাথেটার বা সিস্টোস্কপ), ডায়াবেটিস, এইচআইভি এবং ব্যথানাশক খাওয়ার কারণে কিডনির ক্ষতি ইত্যাদি। বয়স্ক লোকদের সিস্টাইটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। কারণ কিছু অবস্থা যেমন প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি, প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ এবং মূত্রনালীর সঙ্কীর্ণতার জন্য মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি হতে পারে না; এর ফলে মূত্রথলিতে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। আরও কিছু অবস্থা সিস্টাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়Ñ পর্যাপ্ত তরল না খাওয়া, যত্রতত্র পায়খানা করে ফেলা অর্থাৎ পায়খানা ধরে রাখতে না পারা, হাঁটাচলা কম করা অথবা না করা এবং দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকা। উপসর্গ তলপেটে চাপ অনুভব করা, প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা কষ্ট হওয়া, ঘনঘন প্রস্রাব করা অথবা প্রস্রাবের তীব্র ইচ্ছা জাগা, রাতের বেলা প্রস্রাবের ইচ্ছা জাগা, প্রস্রাব ঘোলাটে হওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া এবং প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া। পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রস্রাবের সঙ্গে শ্বেত রক্ত কণিকা অথবা লোহিত রক্ত কণিকা যাচ্ছে কি-না তা দেখার জন্য প্রস্রাব বিশ্লেষণ। ব্যাকটেরিয়ার ধরন নিরূপণ ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সঠিক এ্যান্টিবায়োটিকের জন্য প্রস্রাবের কালচার পরীক্ষা। চিকিৎসা যেহেতু ইনফেকশন কিডনিতে ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে এবং বয়স্ক লোকদের জটিলতা হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকে, তাই সর্বদা দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। এ্যান্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত যেসব এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়Ñ নাইট্রোফুরানটয়েন, ট্রাইমেথোপ্রিম-সালফামেথোক্সাজল,অ্যামোক্সিসিলিন, সেফালোসপরিন, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন অথবা লিভোফ্লোক্সাসিন এবং ডক্সিসাইক্লিন। প্রস্রাবের কালচারের ফলাফল দেখে এ্যান্টিবায়োটিক নির্বাচন করতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী অথবা বার বার মূত্রপথের সংক্রমণের ঠিক মতো চিকিৎসা করাতে হবে, নইলে কিডনিতে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে। তীব্র উপসর্গ চলে যাওয়ার পর কখনও কখনও স্বল্পমাত্রার এ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করা হয়। সিস্টাইটিসের রোগীর প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও প্রস্রাবের তীব্র ইচ্ছে থাকলে পাইরিডিয়াম ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রস্রাবে ব্যাকটেরিয়ার ঘনত্ব কমানোর জন্য প্রস্রাবে অম্লের পরিমাণ বাড়ায় এমন বস্তু যেমন এ্যাসকরবিক এ্যাসিড অথবা ক্র্যানবেরি জুস খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া একটা পুরনো পন্থা যেমন লবণ পানির ডুশ বেশ কার্যকর। কুসুম গরম পানিতে প্রচুর লবণ মিশিয়ে গোসল করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। চিকিৎসা শেষে কিংবা চিকিৎসার মধ্যে পুনরায় চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে মূত্রথলিতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি আছে কিনা তা জানার জন্য। এক্ষেত্রে আবার প্রস্রাবের কালচার করার প্রয়োজন হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিস্টাইটিস অস্বস্তিকর, তবে চিকিৎসার পর কোন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি না করেই চলে যেতে পারে। সম্ভাব্য জটিলতা দীর্ঘস্থায়ী কিংবা বার বার মূত্রপথে সংক্রমণ, জটিল মূত্রপথের সংক্রমণ বা পাইলো নেফ্রাইটিস এবং কিডনির কার্যকারিতা লোপ পাওয়া। ডাঃ মিজানুর রহমান কল্লোল লেখক: সার্জারি ও মূত্ররোগ বিশেষজ্ঞ। মোবাইল: ০১৯২৯২০০৫৩১
×