
ছবি: সংগৃহীত
আমরা প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করি, কিন্তু সেই ইন্টারনেটের প্রবেশদ্বার—ওয়েব ব্রাউজার নিয়ে খুব একটা ভাবি না। অথচ এই ওয়েব ব্রাউজারই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তথ্য অনুসন্ধান, যোগাযোগ এবং নতুন কিছু শেখার প্রধান মাধ্যম।
বেশিরভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্য সেই ব্রাউজারটি হলো গুগল ক্রোম।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুগলের এই একাধিপত্য কেবল পরিকল্পিতই নয়, বরং আদালতের মতে তা বেআইনিও। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক রায় দিয়েছেন, গুগল বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানিকে বিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়ে গুগলকে স্মার্টফোন ও ব্রাউজারে ডিফল্ট করে রেখেছে—যা প্রতিযোগিতাবিরোধী কাজ।
তবে আইনগত দিক ছাড়াও, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করলে গুগলের বাইরে অন্য ব্রাউজার ব্যবহার করাই হতে পারে অধিক বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত।
‘সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখা যেমন বিপজ্জনক, ঠিক তেমনি সবকিছু গুগলের ওপর ছেড়ে দেওয়াও নিরাপদ নয়’, বলেন তথ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা মিশাল খান।
তিনি বলেন, গুগল ক্রোম, গুগল সার্চ, গুগল পাসওয়ার্ড ম্যানেজার—সবই একসাথে ব্যবহার করলে আপনি নিজের অজান্তেই গুগলকে নিজের পুরো ডিজিটাল প্রোফাইল গড়ে তুলতে দিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের তিনটি ওয়েব ব্রাউজার গুগলের বিকল্প হিসেবে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য:
১. মোজিলা ফায়ারফক্স
গুগলের বিকল্প হিসেবে সবার উপরে যেটার নাম উঠে আসে, সেটি হলো ফায়ারফক্স। এটি পরিচালনা করে অলাভজনক সংস্থা মোজিলা ফাউন্ডেশন।
মিশাল খান বলেন, ‘ফায়ারফক্স ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করে না। তাদের ডেটা হেডকোয়ার্টারে পাঠায় না। আর গুগল ঠিক সেটাই করে বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের জন্য।’
ফায়ারফক্স তুলনামূলক কম রিসোর্স ব্যবহার করে, ফলে একসাথে অনেক বেশি ট্যাব খোলা যায়, যা ক্রোমে করলে ব্রাউজার ক্র্যাশ করার আশঙ্কা থাকে।
মোবাইলের জন্য রয়েছে Firefox Focus নামের আরও একটি সংস্করণ, যা আরো বেশি প্রাইভেসি-কেন্দ্রিক। এতে রয়েছে এক ক্লিকে ইতিহাস মুছে ফেলার সুবিধা এবং ডিফল্টভাবে ট্র্যাকিং রোধ।
২. ব্রেইভ (Brave)
‘আমি ব্রেইভ ব্যবহার করি কারণ বিজ্ঞাপন আর ট্র্যাকিংয়ের অনধিকার প্রবেশ একেবারে সহ্য করতে পারছিলাম না’, বলেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জর্জ কামাইডি।
ব্রেইভ স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাড ট্র্যাকার এবং থার্ড পার্টি কুকি ব্লক করে। অর্থাৎ আপনি ওয়েবসাইটে ঢুকলেও আপনার গতিবিধি ট্র্যাক করা হয় না।
‘আমার পরিবারকেও ব্রেইভে অভ্যস্ত করেছি। তারা বলেছে, অবশেষে বিবিসি পড়তে পারছি বিজ্ঞাপনের ঝামেলা ছাড়াই’, বলেন কামাইডি।
৩. ডাকডাকগো (DuckDuckGo)
ডিজিটাল পণ্য উন্নয়ন গবেষক জিল হেইঞ্জ বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবেশের উত্তেজনার মধ্যে আমি ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনতা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করি।’ তখনই তিনি গুগল ক্রোম ছেড়ে ডাকডাকগোতে চলে যান।
ডাকডাকগো ব্রাউজার ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং ইতিহাস সংরক্ষণ করে না। এটি আপনার বর্তমান সার্চের ভিত্তিতে সাধারণ বিজ্ঞাপন দেখায়, কিন্তু ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে টার্গেটেড বিজ্ঞাপন দেখায় না।
‘আমি এখন যে কোনো বিষয় নিয়ে ভাবলেই সরাসরি ডাকডাকগোতে সার্চ করি। কারণ আমি জানি, এসব সার্চ আমাকে ভবিষ্যতে অনুসরণ করবে না’, বলেন হেইঞ্জ।
একটু অভ্যস্ত হয়ে নিলেই ব্রাউজার বদল দিতে পারে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা
নতুন ব্রাউজারে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লাগলেও, দুই সপ্তাহ ব্যবহার করলেই এর সুবিধা অনুভব করা সম্ভব।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাইক্রোসফটের সার্চ ইঞ্জিন Bing দুই সপ্তাহ ব্যবহারের পর প্রায় ২২% ব্যবহারকারী তা চালিয়ে গেছেন—বিনামূল্যে!
অর্থাৎ, আমরা নতুন কিছু চেষ্টা করার সুযোগ পেলে, অনেক সময়ই পুরনো অভ্যাস বদলে ফেলতে পারি।
সূত্র: https://www.huffpost.com/entry/google-browser-firefox-brave-duckduckgo_l_685d7899e4b0bd0253108076
রাকিব