ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আসন্ন। আগামী রবিবার সেই ঐতিহাসিক দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে বিরল ইতিহাস গড়েছিল বাঙালী। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় বুলেটের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিল। বরকত রফিক শফিক জব্বারদের তাজা রক্তে ভেসে গিয়েছিল ঢাকার রাজপথ। মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলা পাওয়া হয়েছিল। এখন ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত। ইউনেস্কো এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। এবারও বিশ্বের বহু দেশে উদ্যাপিত হবে ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে। মাসের প্রথম দিন থেকে ঢাকায়ও চলছে প্রস্তুতি। এরই মাঝে নতুন করে রং করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদি। একুশের মূল আয়োজন থাকবে এখানেই। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকার অন্যান্য প্রান্তেও আয়োজন করা হবে নানা অনুষ্ঠানের। তবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ নিবেদনের পর মানুষের ঢল নামবে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। ভাষা শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত মেলা নতুন করে প্রাণ পাবে। পরিপূর্ণতা লাভ করবে। দিবসটি সামনে রেখে প্রস্তুত হচ্ছে বইমেলাও। এদিন লোকসমাগম হবে সবচেয়ে বেশি। বিক্রিও হবে সর্বোচ্চ। প্রকাশকরা তাই অমর একুশের আগেই তাদের সব বই মেলায় আনতে চান। সেভাবেই চলছে কাজ। ১৮তম দিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, উপস্থিতি বেড়েছে। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সহনীয় ভিড়। বিভিন্ন স্টল ঘুরে পছন্দের বই কিনছিলেন পাঠক। এদিনও জনপ্রিয় ধারার সাহিত্যের প্রতি ঝুঁকে ছিলেন পাঠক। হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হক ও সুমন্ত আসলামদের মতো খুব পরিচিত লেখকদের বইয়ের স্টলে ভিড় করেছিলন পাঠক। একটু খুঁজে বই কেনার মতো পাঠক একেবারে ছিলেন নাÑ তা নয়। বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে যারা এসেছিলেন, অপেক্ষাকৃত মনোযোগী পাঠক মনে হয়েছে তাদের। নতুন কেনা বইয়ের দিকে তাকিয়ে এমন ধারণা হয়েছে। এর বাইরে স্টল বন্ধ বিষয়ে আলোচনা সমালোচনা অব্যাহত ছিল এদিনও। নতুন বই ॥ বৃহস্পতিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৮তম দিনে এসেছে অনেক নতুন বই। বাংলা একাডেমির তথ্য কেন্দ্রে জমা পড়েছে ৯৪টি। মেলায় সমারসেট মমের ‘রেজর্স এজ’ অনুবাদ করে প্রকাশ করেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সুবর্ণ। ভাষান্তর করেছেন ভবানী মুখোপাধ্যায়। শ্রাবণ থেকে এসেছে বাহার লেনিনের উপন্যাস ‘প্রেম ও অভ্যুত্থান’। এতে স্বৈারাচার এরশাদের শাসনামলকে প্রেক্ষাপট করা হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ করা হয়েছে ভালবাসার গল্প। নালন্দা থেকে এসেছে মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাকের বই ‘চাণক্যের কূটকৌশল’। বইটি ‘কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র’-এ বিধৃত রাষ্ট্র পরিচালনার নানারৈখিক দিক নির্দেশনার নিরিখে রচিত। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জয়তী এনেছে সুশান্ত মজুমদারের গল্পের বই ‘সন্দেহ ও নতুন কুটুম’। এতে ১৫টি গল্প। সাহিত্য কথা প্রকাশনী থেকে এসেছে রূপকথা রুবির কাব্যগ্রন্থ ‘বিভাময় অরুন্ধতী’। নিজের দেখার জগত ও অভিজ্ঞতাকে স্বতন্ত্র কাব্যভাষায় নির্মাণের চেষ্টা করেছেন এই কবি। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ বৃহস্পতিবার গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘আহসান হাবীব জন্মশতবার্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তারেক রেজা। আলোচনা করেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, অসীম সাহা, নাসির আহমেদ ও ড. অনু হোসেন। সভাপতিত্ব করেন লেখক-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ। মূল প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বলেন, কবি আহসান হাবীব জীবনকে অন্তহীন বেদনায় আচ্ছাদিত করে সীমাহীন হাহাকারে নিমজ্জিত করার পক্ষপাতী ছিলেন না। কবি অশুভ শক্তির কাছে পরাভাব স্বীকার না করে মানুষকে আত্মশক্তিতে বলিয়ান হওয়ার কথা বলেছেন এবং হতাশা ও অন্ধকার ভেদ করে মানুষের মনে আলোকিত দিনের প্রত্যাশা জাগিয়ে তোলার প্রয়াস পেয়েছেন। মানুষের জীবনকে সার্থক-স্বাস্থ্যকর উপায়ে উদ্যাপনের নানা আয়োজনে শামিল হয়ে কর্মের মধ্য দিয়ে মর্মের শক্তিকে রূপ দেয়ার প্রত্যাশার মধ্যেই পরিস্ফুট হয়েছে কবির জীবনদর্শন। আহসান হাবীবের কবিতা সেই জীবনদর্শনকেই শিল্পের সৌন্দর্য ও সংহতি দান করেছে। আলোচকরা বলেন, কবি আহসান হাবীবের জন্মশতবর্ষের সূচনা হলো এ বছর। আবহমান বাংলা কবিতার ধারাবাহিকতায় বাঙালী মুসলমানের মাঝে আধুনিকতার উদ্বোধন এবং স্বাতন্ত্র্যম-িত কাব্যচর্চাÑ উভয় ক্ষেত্রেই তিনি বিশিষ্টতার দাবিদার। তার গদ্যরচনা এবং শিশুতোষ রচনাও মনোগ্রাহী। সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদনায় সৃজনপ্রতিভার স্বাক্ষর রেখে আহসান হাবীব যেমন সাহিত্যপাতার উন্নত মানদ- নির্মাণ করেছেন এবং তরুণ কবি-লেখকদের প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রেও পালন করেছেন অগ্রবর্তী ভূমিকা। তারা বলেন, আহসান হাবীবের কবিসত্তা ও ব্যক্তিসত্তা বিশ্লেষণে আমাদের আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আহসান হাবীব কবি হিসেবে যেমন ছিলেন স্বতন্ত্র তেমনি সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে অনন্যসাধারণ। আমাদের আধুনিক কবিতার পাটাতন নির্মাণ এবং সাহিত্যরুচি গঠনে তার অবদান কখনও বিস্মৃত হওয়ার নয়। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন লতিফুর রহমান এবং লায়লা পারভীন কেয়া। সাঈদ সিদ্দিকীর রচনা ও পরিচালনায় পরিবেশিত হয় পালাগান ‘রূপচাঁন সুন্দরীর পালা’। মোঃ মোশাররফ হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন দৃষ্টি।
×