ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দ্রাটিকি গ্রামে চলছে মাতম, হত্যার প্রধান হোতা আলীসহ দু’জন রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সুন্দ্রাটিকি গ্রামে চলছে মাতম, হত্যার প্রধান হোতা আলীসহ দু’জন রিমান্ডে

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, হবিগঞ্জ থেকে ॥ প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের প্রতিশোধস্পৃহায় অপহৃত হবিগঞ্জ সুন্দ্রাটিকি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনজনসহ এক মাদ্রাসাছাত্রের নির্মম হত্যাকা-ের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকার বাড়িঘরে চলছে শোকের মাতম। নিহত এই কোমলমতি শিশুদের বাবা-মায়ের আর্তনাদ আর বার বার মূর্ছা যাওয়ায় গ্রামের মানুষসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সাধারণ মানুষের হৃদয়কে দিচ্ছে বেশ ঝাঁকুনি। অনেকেই ধরে রাখতে পারছেন না চোখের জল। হবিগঞ্জ শহরসহ গোটা জেলা এখন শোকে হতবিহ্বল। সর্বত্র বইছে আলোচনার ঝড়। এদিকে কড়া পুলিশী প্রহরায় জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিপুলসংখ্যক মুসল্লির অংশগ্রহণে বুধবার মধ্যরাতে জানাজা শেষে নিহত চার স্কুলছাত্র শুভ, তাজেল, মনির ও ইসমাঈলের দাফন সংশ্লিষ্ট গ্রামেই সম্পন্ন হয়েছে। তার আগে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গ থেকে ময়নাতদন্ত শেষে ওই শিশুদের লাশ সড়কপথে সুন্দ্রাটিকি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। পুলিশ তন্মধ্যে স্ব স্ব পরিবারের হাতে ওই শিশুদের লাশ হস্তান্তর করে। এ সময় জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার এবং পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসপি জয়দেব কুমার ভদ্র ৫০ হাজার টাকা করে প্রত্যেক পরিবারের হাতে নগদ তুলে দেন। এদিকে এই হত্যাযজ্ঞে জড়িত থাকার অভিযোগে একই দিন রাতে প্রধান হোতা একাধিক স্পর্শকাতর মামলার আসামি আব্দুল আলী ও তার বখাটে পুত্র জুয়েলকে সংশ্লিষ্ট উপজেলার রশিদপুর এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। হতভাগ্য শিশুদের বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনসহ আবেগাপ্লুত অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এদিকে সুন্দ্রাটিকি গ্রাম পরিদর্শন করেন সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ড. আক্কাছ উদ্দিন ভূঁইয়া। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জেলা এবং পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ। এদিকে আব্দুল আলী ও তার পুত্র জুয়েলকে চার শিশু হত্যাকা-ে জড়িত দেখিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর মোক্তাদির হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউছার আলমের আদালতে হাজির করলে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। একই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে রুবেল ও হাবিবুর রহমান আরজু নামে আরও দু’জনকে আটক করে পুলিশ। এ নিয়ে শিশু হত্যাকা-ের ঘটনায় চারজনকে আটক করল পুলিশ। তবে এই দু’জনকে আদালতে সোপদ করে রিমান্ড চাওয়া হবে কি-না তা নিশ্চিত করেনি পুলিশ। এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারী কলেজসংলগ্ন সড়কে এক মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে তারুণ্য সোসাইটি নামে একটি সংগঠন। রাজিব আহম্মেদ রিংকনের সভাপতিত্বে এবং সংস্কৃতিকর্মী শেখ ওসমান গনি রুমির সঞ্চালনায় এই কর্মসূচী চলাকালে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ অধ্যাপক আব্দুল হাকিম, অধ্যাপক আব্দুল হামিদ, সহকারী অধ্যাপক জালাল আহমেদ, ওয়ার্ড কাউন্সিলার জুনায়েদ আহমেদ, ছাত্রদল নেতা রুবেল আহমদ চৌধুরী, ছাত্রলীগ নেতা আফরোজ আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেতা শফিকুল ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়র নেতা আব্দুল হাকিম, ছাত্র সমন্বয় পরিষদের নেতা সুলতান মাহমুদ, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকর্তা জাকারিয়া রুবেল, ছাত্রলীগ নেতা মামুন, সরোয়ার, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা স্মরিন নওশিন দীনা, সংস্কৃতিকর্মী দীপ্তি দিবা দাশ, সেফটি ইউনিটির শাহরিয়া শুভ, ফারজানা দিয়া, রাজ আহমেদ, রিয়াদ, সৌরভ, রায়হান, মুর্শেদ, ইতি, নিশাত, রাকিব, সায়েম, টুটুল, রাকিব, মাহবুব, জাকারিয়া শাহিন ও মাহবুব হাসান। এই কর্মসূচী থেকে বক্তারা আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সকল আসামির গ্রেফতার করে বিচার সুনিশ্চিতের জন্য পুলিশকে আল্টিমেটাম দেন। অন্যথায় বড় ধরনের কর্মসূচীরও হুমকি দেয়া হয়। এদিকে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্রের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ওই নির্মম হত্যাযজ্ঞের নেপথ্য প্রকৃত বা আরও একাধিক কারণ রয়েছে কি-না এবং আসামি গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেলে ওই গ্রাম থেকে চার স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পরে বালিচাপা দিয়ে এই শিশুদের লাশ গুম করা হয়।
×