ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সব ধরনের ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর

বিদায় বললেন চন্দরপল

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

বিদায় বললেন চন্দরপল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন শিবনারায়ণ চন্দরপল। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের সিদ্ধান্ত জানান আধুনিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্যতম সফল এই ক্রিকেটার। বিষয়টা অনুমিতই ছিল। কারণ ২০১৫ সালের মার্চের পর আর দলের হয়ে খেলার সুযোগ মেলেনি ৪১ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। অফ-ফর্ম, কানাঘুষা, চাপ অনেক কিছু ছিল। কিন্তু এতদিন মুখ খোলেননি তিনি। হয়তো আরও একবার গর্বের সাদা জার্সি গায়ে চড়ানোর আশায় ছিলেন। একের পর এক সিরিজে দল ভরাডুবির মুখে পড়লেও নির্বাচকরা ফিরে তাকাননি। ইতোমধ্যে বয়স চল্লিশ পেরিয়ে গেছে, তাই বাকিটা বুঝে নিলেন চন্দরপল। হয়তো মনের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট থাকবে। কারণ কখনই তিনি এভাবে মাঠের বাইরে থেকে বিদায় নিতে চাননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের (ডব্লিউআইসিবি) বরাবর পাঠানো এক ইমেল বার্তায় অবসরের বিষয়টি জানিয়ে দেন চন্দরপল। ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের হয়ে আর ক্যারিয়ার দীর্ঘ করতে চাই না’- মেইলে এমনটাই লেখেন তিনি। বিষয়টা নিশ্চিত করেছেন ডব্লিউআইসিবি প্রেসিডেন্ট ডেভ ক্যামেরন। ফিরতি মেইলে বোর্ডের পক্ষ থেকে তাকে বিদায়ী সম্ভাষণ জানানো হয়েছে। যেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘দেশের হয়ে চন্দরপলের অবদান অনস্বীকার্য। বিশ্বব্যাপী সে ক্যারিবীয় ক্রিকেটের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। আমরা তার অবসর পরবর্তী সুন্দর জীবন কামনা করছি।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান চন্দরপল। টেস্ট ক্রিকেটে ব্যক্তিগত অর্জনের খাতায় ১১ হাজারের বেশি রান। আর মাত্র ৮৭ রান করতে পারলেই ব্রায়ান লারাকে পেরিয়ে টেস্টে ক্যারিবীয়দের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক হয়ে যেতেন। কিন্তু সেই সুযোগের অপেক্ষায় আর থাকলেন না ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাটিংয়ের প্রতিমূর্ত চন্দরপল। গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা নিজের সর্বশেষ সিরিজে তিন টেস্টের ৬ ইনিংসে করেছিলেন মাত্র ৯২ রান! মার্চে ওই বাজে ফর্মের পর যে বাদ পড়েন পরে আর তাকে বিবেচনায় নেননি নির্বাচকরা। নির্বাচক কমিটির প্রধান ক্লাইভ লয়েড তো সরাসরিই বলে দিয়েছিলেন, চন্দরপলকে নিয়ে আর ভাবছেন না তারা। নতুনদের নিয়েই ভবিষ্যতের দল গড়তে চান। চন্দরপল অবশ্য তারপরও বলেছিলেন, দলে ফেরার সব চেষ্টাই করে যাবেন। এতদিনে হয়তো বুঝতে পেরেছেন, ফেরার সেই পথটা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। তাই ডব্লিউআইসিবিকে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় অবসরের কথাটি জানিয়ে দিলেন আনুষ্ঠানিকভাবে। ১৯৯৪ সালের মার্চে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া এ গায়ানিজ ব্যাটসম্যান তিন ধরনের ক্রিকেটেই ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্যতম নির্ভরতার প্রতীক। ১৬৪টি টেস্ট খেলে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩০টি সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ২০৩। ৫১.৩৭ গড়ে রান করেছেন ১১ হাজার ৮শ’ ৬৭। একই বছর রঙিন পোশাকে ওয়ানডে অভিষেক। ২৬৮ ম্যাচে ৪১.৬০ গড়ে মোট সংগ্রহ ৮ হাজার ৭শ’ ৭৮ রান, ১১টি সেঞ্চুরি। ২০০৬-২০১০ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি২০ খেলেছেন ২২টি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগস্পিন বল করতেন। ব্যাটিংয়ে সফল হওয়ায় পরে বোলিংয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। টেস্ট আর ওয়ানডে মিলিয়ে তার উইকেট সংখ্যা ২৩। অপূর্ব ব্যাটিংশৈলীর জন্য টেস্ট ক্রিকেটেই তাকে বেশিদিন মনে রাখবে। ক্যারিয়ারের ৩০ সেঞ্চুরির ২টিকে ডাবল সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়েছেন। দু’বারই অপরাজিত ছিলেন ২০৩ রানে। জর্জটাউনে ২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এবং ২০১২ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেন জীবনের সেরা দুটি ইনিংস। দেড় শ’ পেরিয়েছেন তিন বার। তবে চন্দরপলের সেরা ইনিংস বললে উঠে আসবে ১৯৯৬ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭১, ১৯৯৭তে ব্রিজটাউটে ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ১৩৭, একই ভেন্যুতে ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০০, সেন্ট জোন্সে ওই বছরই অসিদের বিপক্ষে ১০৪ এবং কিংস্টনে ২০০৮-এ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১৮; এই ইনিংসগুলো খেলেছিলেন কঠিন সব মুহূর্তে, বাঁচিয়েছিলেন দলকে।
×