ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাহরাইনকে হারিয়ে শিরোপা নেপালের

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

বাহরাইনকে হারিয়ে শিরোপা নেপালের

রুমেল খান ॥ ১৭ বছর পর ফাইনালে খেলা এবং ২৩ বছর পর শিরোপা জয়ের হাতছানি দিচ্ছিল যে দলটিকে, ‘গুর্খালিস’ খ্যাত সেই নেপালই শেষ পর্যন্ত ফেবারিট দল হিসেবে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’-এ। শুক্রবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাহরাইন অনুর্ধ-২৩ দলকে ৩-০ গোলে হারায় নেপাল জাতীয় ফুটবল দল। বিজয়ী দল খেলার প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল ১-০ গোলে। ম্যাচ শেষে বিজয়ী ও বিজিত দলের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চ্যাম্পিয়ন দল নেপাল প্রাইজমানি হিসেবে ৫০ হাজার এবং রানার্সআপ দল হিসেবে বাহরাইন দল লাভ করে ২৫ হাজার ডলার। ম্যাচে নিরঙ্কুশ প্রাধান্য বিস্তার করে খেলে নেপালই। তাদের বাড়তি পাওনা ছিল স্টেডিয়ামে আগত বাংলাদেশী ও নেপালী দর্শকদের (সবমিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার) অকুণ্ঠ সমর্থন। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, নেপালের সাফল্য-ব্যর্থতার সঙ্গে কোন না কোনভাবে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নামটি! ২০০৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ‘এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ’-এর সেমিতে উঠেছিল নেপাল, ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের মাটিতেই সাফ ফুটবলের শিরোপা জিতেছিল তারা। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এসএ গেমস ফুটবলে তৃতীয় হয়েছিল নেপাল। এছাড়া ১৯৯৯ সালে নিজেদের মাটিতে সাফ ফুটবলের ফাইনালে বাংলাদেশের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল নেপাল, ওই বছরই ঢাকায় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে অংশ নিয়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল ‘গুর্খালিস’রা। এবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের শিরোপা জিতে সেই অপ্রাপ্তি ঘোচাল তারা। এই টুর্নামেন্টে ‘এ’ গ্রুপে নেপাল তাদের প্রথম ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে মালয়েশিয়া একাদশের সঙ্গে। দ্বিতীয় ম্যাচে ১-০ গোলে হারায় শ্রীলঙ্কাকে। তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গে ড্র করে ০-০ স্কোরে। ৩ ম্যাচে ১ জয়, ২ ড্রতে তাদের সংগ্রহ ৫ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট হয় বাংলাদেশেরও। তবে গোল পার্থক্যে পিছিয়ে পড়ায় নেপাল গ্রুপ রানার্সআপ হয় (অপরাজিত) এবং শেষ চারে উন্নীত হয়। সেখানে তারা ৪-১ গোলে হারায় মালদ্বীপকে। পক্ষান্তরে ‘বি’ গ্রুপে বাহরাইন যুব দল নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করে বাংলাদেশ অলিম্পিক দলের সঙ্গে। দ্বিতীয় ম্যাচে ১-০ গোলে হারায় কম্বোডিয়াকে। শেষ গ্রুপ ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করে মালদ্বীপের সঙ্গে। ৩ খেলায় ১ জয়, ২ ড্রতে ৫ পয়েন্ট নিয়ে তারা হয় অপরাজিত গ্রুপ রানার্সআপ। সেমিতে তারা ১-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ জাতীয় দলকে। ম্যাচের ৫ মিনিটেই এগিয়ে যায় নেপাল। অধিনায়ক বিরাজ মহার্জনের ক্রসে হেড করেন অঞ্জন বিস্তা। গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিস্ট করলে ফিরতি বলে বিমলগাত্রি মাগার চমৎকার শটে বল পাঠান জালে (১-০)। ৬ মিনিটে নেপালের ডিফেন্ডার অদিত্য চৌধুরীর দৃঢ়তায় গোল পায়নি বাহরাইন। ২১ মিনিটে মোহাম্মদ আলনারের লব ফিস্ট করেন নেপালের গোলরক্ষক। ২৮ মিনিটে আলনারের গোল প্রচেষ্টা রুখে দেন ডিফেন্ডার অদিত্য। ৩৩ মিনিটে বাঁ প্রান্তে অঞ্জন বিস্তাকে ফাউল করেন বাহরাইনের এক ডিফেন্ডার। ফ্রি কিক পায় নেপাল। তবে মিডফিল্ডার হিমেন গৌরাঙ্গ বল বাইরে মেরে সুযোগ নষ্ট করেন। ৫৩ মিনিটে ফরোয়ার্ড নাওইয়াগ শ্রেষ্ঠর শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন বাহরাইন গোলরক্ষক মাহবুব। ৫৫ মিনিটে বল নিয়ে নেপালের বক্সে ঢোকেন মিডফিল্ডার জসিম আলসায়িখ। কিন্তু প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের বাধার মুখে তার গোল প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়। ৬২ মিনিটে বক্সের বাঁ কোণা থেকে হিমান গৌরাঙ্গের শট ডান পোস্ট ঘেঁষে মাঠের বাইরে চলে যায়। ৭০ মিনিটে দশজনের দলে পরিণত হয় উভয় দলই। মাঠের মধ্যে রীতিমতো হাতাহাতি করেন বাহরাইনের আহমেদ এবং নেপালের বিক্রম লামা। বাহরাইনের আহমেদ আলতুয়ানী এবং নেপালের সুমন লামাকে লাল কার্ড দেখান ভারতীয় রেফারি। ৮৭ মিনিটে প্রতিপক্ষ এক ডিফেন্ডারের পা থেকে বল নিয়ে বক্সের মধ্যে কাটব্যাক করেন অঞ্জন বিস্তা। দৌড়ে এসে দুর্দান্ত শটে বল জালে পাঠান বিশাল রায় (২-০)। ম্যাচের অন্তিম সময়ে নাওইয়াগ আরেকটি গোল করলে ব্যবধান আরও বাড়ে নেপালের পক্ষে। বিমল গাত্রির ক্রসে অসাধারণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন এই ফরোয়ার্ড (৩-০)। আর এই সময়েই নেপালের মান বাহাদুরকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ থেকে বহিষ্কৃত হন বাহরাইন অধিনায়ক আব্দুল আজিজ আল শেখ। রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে শিরোপা জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হয় হিমালয় পুত্ররা।
×