ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ;###;১০,৭৬৭ মামলায় আটকে আছে সাড়ে ১৪শ’ কোটি টাকার রাজস্ব

সাড়ে তিন বছরেও গতি পায়নি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

সাড়ে তিন বছরেও গতি পায়নি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি

আহমেদ হুমায়ুন, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সাড়ে তিন বছরেও গতি পায়নি চট্টগ্রাম কাস্টম ভবনে চালু হওয়া বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। ২০১২ সালের জুলাই মাসে চালু হওয়ার পর এ পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও ৩৩টি মামলা। আমদানিকারকরা এগিয়ে না আসায় এ ব্যবস্থায় পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে, নিষ্পত্তি না হওয়ায় আপীল কমিশনারেট, আপীলাত ট্রাইব্যুনাল এবং হাইকোর্টে রীট ও আপীলাত ডিভিশনে এখনও ১০ হাজার ৭৬৭ মামলায় আটকে আছে ১ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব। কাস্টম হাউসের যুগ্ম-কমিশনার রেজাউল হক বলেন, বর্তমানে প্রায় ১৪ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব মামলা জটিলতায় আটকে আছে। মামলা সংক্রান্ত জটিলতা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে এডিআর ব্যবস্থা চালু করলেও আমদানিকারকরা সেভাবে এগিয়ে আসছেন না। এজন্য আমরা নিয়মিত ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলছি। আমদানিকারকরা এগিয়ে এলে এ পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির সংখ্যা বাড়বে। তাদের উদ্বুদ্ধ করছি। এ পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তিতে আমদানিকারকরা এগিয়ে আসবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, আমদানিকৃত পণ্যের শুল্কমূল্য নির্ধারণে কাস্টম কর্মকর্তাদের সঙ্গে একমত না হলে আদালতের দ্বারস্থ হন আমদানিকারকরা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে এ ধরনের মামলার সংখ্যা ১০ হাজার ৭৬৭। এসব মামলার কারণে ১ হাজার ৪৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকার রাজস্ব আহরণ করতে পারছে না চট্টগ্রাম কাস্টমস। এর মধ্যে আপীল কমিশনারেটে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ৪১টি যার বিপরীতে ২ কোটি ৬৮ লাখ রাজস্ব জড়িত রয়েছে। আপীলাত ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ১ হাজার ২৫৯টি যার বিপরীতে ১৮৭ কোটি ২৮ লাখ টাকার রাজস্ব জড়িত রয়েছে। হাইকোর্টে রীট মামলা রয়েছে ৯ হাজার ২৯৭টি যার বিপরীতে ১ হাজার ১৮১ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং হাইকোর্টের আপীলাত ডিভিশনে মামলা রয়েছে ১৭০টি যার বিপরীতে ৬৮ কোটি ৫২ লাখ টাকার রাজস্ব জড়িত রয়েছে। দিন দিন এসব মামলা বাড়তে থাকায় শুল্কসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২০১২ সালের ১ জুলাই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) চালু করা হয়। ব্যবসায়ীদের আগ্রহ না থাকায় শুরু থেকেই এডিআরের মাধ্যমে মামলার খালাস নিষ্পত্তির হার কম ছিল। গত সাড়ে তিন বছরে মাত্র ৬৬টি মামলা এডিআর এর মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তি হওয়া আবেদনগুলোতে প্রায় ৩৯ শতাংশ ছাড দিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আরও চার কোটি ৯৩ লাখ টাকার ৩৩টি আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ আবেদন চলতি অর্থবছরে নিষ্পত্তি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) মেঘনা গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, এম এস এন্টারপ্রাইজ ও রয়্যাল ইন্টারন্যাশনালসহ মোট ১৪টি মামলা এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ইস্ট ওয়েস্ট ট্রেডিং, মুসা এ্যান্ড সন্স, বিএসআরএমসহ আরও ১৭টি প্রতিষ্ঠানের মামলা। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের বেসরকারী খাতের জন্য সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) সহযোগিতায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা চালু হয়। এ ব্যবস্থায় আদালতের বাইরে আমদানিকারক এবং কাস্টম হাউসের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে একজন নিরপেক্ষ সহায়তাকারী মুখোমুখি বসে দ্রুত সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করেন। শুল্কায়নের পর কোন আমদানিকারক সংক্ষুব্ধ হলে এ ব্যবস্থায় নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য আদালতে বিচারাধীন মামলাসমূহও এ পদ্ধতিতে মিমাংসা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, আমদানিকারক আবেদন করার পর সর্বোচ্চ ৩০ দিন এবং মামলায় আটকে থাকা বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোচ্চ সময়সীমা ৬০ দিন ধার্য করা হয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২৪ জন সহায়তাকারী রয়েছেন।
×