ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অস্তিত্ব বিপন্ন ময়ূর নদীর

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

অস্তিত্ব বিপন্ন ময়ূর নদীর

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা মহানগরীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত ময়ূর নদী। একদা এ নদীটি খরস্রোতা ছিল। এখন এ নদীতে পানি প্রবাহ নেই। আবর্জনায় ভরপুর এ নদীটি এখন মৃত। দখলে সঙ্কুচিত হচ্ছে। পানি দূষণে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নদীটিকে রক্ষায় নানা পদক্ষেপের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তেমন কিছু হয়নি। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়ূর ও হাতিয়া নদী খনন করা হলেও কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায়নি। দখল ও দূষণে ময়ূর নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। খুলনা মহানগরী এলাকার কোল ঘেঁষে বেশ কয়েকটি নদী প্রবাহিত। এর মধ্যে ভৈরব নদ ও রূপসা নদীতে স্রোতধারা থাকলেও ময়ূূর ও হাতিয়া নদীতে পানি প্রবাহ নেই। ময়ূর নদী বদ্ধ জলাশয়। এই নদীর বুকে এখন শহরের ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমেছে। জন্মেছে কচুরিপানা। নদীর দুই পাশ চলে যাচ্ছে ভূমিদস্যুদের কবলে। দুই তীরের বিভিন্ন স্থান প্রভাবশালী জমি খেকোরা অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে। এতে নদীটি ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন নদীতে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সাতটি ড্রেনের মুখ ময়ূর ও হাতিয়া এই দুই নদীর সঙ্গে মিলিত। নিষ্কাশন ব্যবস্থা সুষ্ঠু না হওয়ায় দীর্ঘকাল যাবত সামান্য বৃষ্টিতে খুলনা শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এই জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে ভরাট হয়ে যাওয়া ময়ূর ও হাতিয়া নদী খননের সিদ্ধান্ত নেয় খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)। সে অনুযায়ী ২০১৪ ও ২০১৫ সালে নগর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ময়ূর ও হাতিয়া নদীর প্রায় ১২ কিলোমিটার খনন করা হয়। এডিবির অর্থায়নে এ খনন কাজের ব্যয় হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা। যদিও খনন কাজের সময় নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অবশ্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয় কাজ সন্তোষজনক হয়েছে। সূত্র জানায়, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক খুলনা সিটির মেয়র থাকাকালে জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর বিভিন্ন খাল, ড্রেন, ময়ূর নদী খনন ও অবৈধ দখল উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেন। এ কার্যক্রমে কিছুটা সফলতাও লাভ করে। পরবর্তীতে মেয়র পরিবর্তন হওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান আর তেমন গতি পায়নি। ড্রেন নির্মাণ, খাল ও নদীর খনন কাজের তদারকিও যথাযথভাবে হয়নি। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত দুই বছরে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হলেও কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায়নি। নদীতে প্রতিনিয়ত ড্রেন থেকে নির্গত আবর্জনা পচে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পরিবশ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত রূপসা, ভৈরবসহ সকল নদীই দূষণের কবলে রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে ময়ূর নদী। নদীর পানিতে প্রতি লিটারে ৪ মিলিগ্রামের বেশি অক্সিজেন থাকার কথা। কিন্তু এ নদীর পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা এতই কম যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। তাছাড়া ক্ষতিকারক সিসার পরিমাণও আশঙ্কাজনকহারে বেড়েই চলছে। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি নাগরিক নেতা শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, ময়ূর নদীর বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। এ নদীর নাব্য অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। নদীর দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা এবং দুই মুখের বাঁধের কারণে নদীর প্রকৃতি অবলুপ্ত প্রায়। গত দুই বছরে যে খনন কাজ করা হয়েছে তা কাজে আসেনি। তিনি বলেন, নগরীর বিভিন্ন ড্রেনের ময়লা-অবর্জনা এই নদীতে গিয়ে পড়ছে। এছাড়া নদীর পাশ দখল হয়ে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করা না গেলে ময়ূর নদীকে রক্ষার কোন উদ্যোগই সফল হবে না।
×