ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ ;###;২০৩৩ সাল পর্যন্ত চলবে এই যুগ

জনসংখ্যা বোনাসের যুগে দেশ ॥ কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬

জনসংখ্যা বোনাসের যুগে দেশ ॥ কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দেশে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমছে। ফলে চলছে জনসংখ্যা বোনাসের যুগ। ২০১০ সালে যেখানে জাতীয়ভাবে নির্ভরশীলতার হার ছিল ৬৫ শতাংশ, সেটি ২০১৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৫৭ শতাংশ। ওই পাঁচ বছরে কমেছে আট শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপে উঠে এসেছে এ চিত্র। পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে নলেজ বেজ আগামী প্রজন্ম গড়ে তোলা। সে জন্য সরকার সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগাতে কারিগরি শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এক্ষেত্রে বলতে পারি আমাদের সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা ছিল মাত্র ১ শতাংশ, সেটি এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশ শতাংশে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ২০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, জাপান শুরুতে তাদের সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছিল, পরবর্তীতে শিক্ষার হার এবং শেষ সময়ে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার হার বাড়িয়েছে। ফলে তারা আজ কত উন্নত হয়েছে। আমরাও সেই পথেই হাঁটছি। জনসংখ্যার এই ডিভিডেন্ডকে কাজে লাগাতে সরকার খুবই তৎপর রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মনিটরিং দি সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) প্রকল্পের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয়ভিত্তিক নির্ভরশীলতার হার কমার পাশাপাশি পল্লী ও শহর উভয় এলাকাতেই নির্ভরশীলতার হার কমেছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, পল্লী অঞ্চলে ২০১০ সালে নির্ভরশীলতার হার ছিল ৬৯ শতাংশ, সেটি কমে ২০১৪ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশে। পাঁচ বছরে কমেছে নয় শতাংশ। অন্যদিকে শহরে ২০১০ সালে নির্ভরশীলতার হার ছিল ৫৭ শতাংশ, সেটি কমে ২০১৪ সালে হয়েছে ৫০ শতাংশ। পাঁচ বছরে কমেছে সাত শতাংশ। এ বিষয়ে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা জনকণ্ঠকে বলেন, গড় আয়ু ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতির চিত্র উঠে এসেছে এমএসভিএসবি প্রতিবেদনে। দারিদ্র্য বিমোচনসহ গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক অর্জনের ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমরা নিম্ন আয়ের থেকে এখন নিম্ন মধ্য আয়ে উন্নীত হয়েছি। এরপর মধ্য আয় এবং উন্নত দেশে যাব। এজন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সেসব কার্যক্রমের অর্জিত ফল বিবিএস এর এই প্রকল্পের মাধ্যমে উঠে আসে। এক কথায় একটি পরিবারের সামগ্রিক চিত্র তুলে আনা হয়েছে। এভাবে সঠিক চিত্র পেলে সরকারের পক্ষে সমন্বিত পরিকল্পনা করা সহজ হবে। প্রতিবেদনে বিদ্যুতের ব্যবহার, টয়লেট সুবিধা, নির্ভরশীলতার অনুপাত, শিক্ষার হার, শিশু মৃত্যুর হার, মাতৃ মৃত্যুর হার, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার এবং স্থূল প্রতিবন্ধিতা ইত্যাদি চিত্র তুলে আনা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১২ সাল থেকে জনসংখ্যা বোনাসের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ কর্মোপযোগী এবং সবচেয়ে কম নির্ভরশীল একটি জনগোষ্ঠী পেয়েছে এই জাতি। আধিক্যের মধ্যেও জনসংখ্যাকে কাজে লাগানোর সুবর্ণ সুযোগ এটি। জনসংখ্যা পরিবর্তনের এ সুযোগ যে কোন জাতি বা রাষ্ট্র একবারই পেয়ে থাকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে একে কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এর আগে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছিল। এতে বলা হয় ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ যে সময়টিতে পড়েছে তা হচ্ছে জনসংখ্যার ডিভিডেন্ড বা জনসংখ্যার বোনাস কাল। অর্থাৎ জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা থাকবে ১৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে। এ সময়ে এক থেকে ১৫ বছরের নিচে বয়সী জনসংখ্যাও কমতে থাকে এবং ৬৪ বছর বয়সের উপরেও জনসংখ্যা থাকে সবচেয়ে কম। মানে এ সময়টাতে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী সবচেয়ে কম থাকে আর সবচেয়ে বেশি থাকে কর্মক্ষম জনসংখ্যা। এই সর্বোচ্চ কর্মক্ষম জনসংখ্যার কালকেই বলে জনসংখ্যা বোনাসের কাল। বলা হয়েছে, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে জনসংখ্যা বোনাসের কাল শুরু হয়েছিল তিন দশক পূর্বে। এখন সে সময় শেষ হয়ে বার্ধক্য জনসংখ্যার হার বাড়ছে। বাংলাদেশ বোনাসের এ সময়টাকে কাজে লাগাতে পারলে রাষ্ট্র অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লম্ফন ঘটাতে পারে। এখন ৬০ বছর বয়সের উপরে জনসংখ্যা রয়েছে মাত্র সাত শতাংশ। ৬৫ বছর বয়সের উপরে মাত্র চার দশমিক ছয় শতাংশ। বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যার এ আধিক্য ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বিরাজ করবে। এই কর্মক্ষম জনসংখ্যার সুযোগের জানালা বা জনসংখ্যার বোনাস ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত কোন দেশে বিরাজমান থাকে। এরপর আবার বাড়তে থাকে নির্ভরশীল জনসংখ্যা। বর্তমানে এ সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় কোন কোন দেশে নির্ভরশীল জনসংখ্যার হার ২০ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কর্মমুখী জনসংখ্যার এই ডিভিডেন্ডকে অবশ্যই সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হবে। সরকার ইতোমধ্যেই মানব সম্পদ তৈরির বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং নিচ্ছে।
×