ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক এখন তলানিতে

প্রকাশিত: ০৮:১০, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক এখন তলানিতে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ পাকিস্তানের অসহনশীল আচরণে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক এখন তলানিতে ঠেকেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঘিরে পাকিস্তান বারবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করায় দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সঙ্কট প্রকট হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে বাংলাদেশকে আরও কৌশলী হতে হবে। ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে নতুন করে টানাপোড়েনের বিষয়ে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এমন অভিমত প্রকাশ করেন। এদিকে আগামীকাল সোমবার থেকে অনুষ্ঠিতব্য দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক একটি সম্মেলনে ঢাকায় আসছে না পাকিস্তানের প্রতিনিধি দল। পাকিস্তানের কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে ঢাকা থেকে প্রত্যহারের প্রেক্ষিতে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়। প্রত্যাহার ও পাল্টা প্রত্যহারের প্রেক্ষিতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন তলানিতে ঠেকেছে বলে মতো দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, পাকিস্তানের কূটনীতিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে, তাকে প্রত্যাহার করে নিতে বলেছিল। সে কারণে পাকিস্তান তাদের কূটনীতিককে ঢাকা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর ইসলামাবাদে বাংলাদেশের কূটনীতিককে প্রত্যাহারের পেছনে তারা কোন কারণ দেখাতে পারেনি। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনীতিক প্রত্যাহার একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে আমরা দেখতে পারছি পাকিস্তান বাংলাদেশের বিষয়ে এখন অসহনশীল আচরণ করছে। যেটা কোন কারণেই সমীচীন নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়ে আসছিল। ২০০৯ সালের পর থেকেই তারা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় এখন ঢাকা-ইসলামাবাদের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। আর এই কারণে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সঙ্কট প্রকট হচ্ছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে এখন বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক নামমাত্র রয়েছে। এই সম্পর্ক আর সহজেই উন্নতি হবে না বলে মনে হচ্ছে। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাকিস্তান সফরের পর ইসলামাবাদ এখন দিল্লীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে চেষ্টা করছে। এছাড়া পাকিস্তান দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) সদস্য দেশ। তাই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে বাংলাদেশকে এখন অনেক বিষয় চিন্তা করে কৌশলী হতে হবে বলে তিনি জানান। ঢাকায় আসছে না পাকিস্তানী প্রতিনিধি দল ॥ ঢাকা-ইসলামাবাদের সম্পর্কে টানাপোড়েনের মধ্যে ঢাকায় আয়োজিত ‘সাউথ এশিয়ান কনফারেন্স অন স্যানিটেশন’ শীর্ষক এক আঞ্চলিক সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে না পাকিস্তান। আগামীকাল সোমবার থেকে ঢাকায় এই সম্মেলন শুরু হবে। এই সম্মেলনের আয়োজকরা জানিয়েছেন, পাকিস্তান বারবার তাদের প্রতিনিধি পাল্টেছে। এছাড়া তারা সময়মতো ভিসার জন্য আসেননি। অবশ্য পাকিস্তান বলছে, ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন ১০ দিন পাসপোর্ট রাখলেও প্রতিনিধিদের কাউকে ভিসা দেয়নি। প্রতি দুই বছর অন্তর সার্কভুক্ত দেশগুলোতে পর্যায়ক্রমে পয়োনিষ্কাশন বিষয়ে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সেখানে সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ‘দক্ষিণ এশিয়ার চ্যালেঞ্জ’ স্যানিটেশন নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেন। এবারের সম্মেলনে আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। ঢাকার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ইসলামাবাদ প্রাথমিকভাবে ৬০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের তালিকা পাঠিয়েছিল। পাকিস্তান বারবার প্রতিনিধি তালিকা পাল্টানোর কারণে তারা যথাসময়ে ভিসার আবেদন করতে পারেননি। ঢাকায় এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের অনুমোদন দিয়েছিল ইসলামাবাদ। তবে তাদের কারো ভিসা ইস্যু করা হয়নি। ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন ১০ দিন তাদের পাসপোর্ট রেখেছিল বলেও জানিয়েছে পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে না বলে জানা গেছে।
×