ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যতিক্রমী প্রযোজনা ‘গহর বাদশা ও বানেছা পরী’

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

ব্যতিক্রমী প্রযোজনা  ‘গহর বাদশা ও  বানেছা পরী’

গৌতম পা-ে ॥ লোককাহিনী নির্ভর নাটকের প্রতি দর্শকের একটা দুর্বলতা আছে এটা আবারও প্রমাণ হলো ‘গহর বাদশা ও বানেছা পরী’ মঞ্চায়নে। নাগরিক নাট্যাঙ্গনের ২০তম প্রযোজনায় নাটকটির অষ্টম মঞ্চায়ন হলো শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে শনিবার সন্ধ্যায়। জানা যায়, শুরু থেকে নাটকটির প্রতিটি প্রদর্শনীতে দর্শকের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। এদিনও তার কমতি ছিল না। লোকজ গল্প নিয়ে ঢাকার মঞ্চে এর আগে আরও অনেক নাটক এলেও নাগরিক নাট্যাঙ্গনের কর্মীদের কাছে এ অভিজ্ঞতা প্রথম। গল্পটি মূল পালার মতোই। গিলামাইট বনে বিশ্বিং বাদশার শিকার করতে যাওয়া দিয়ে গল্পের শুরু। শিকারের একপর্যায়ে হরিণশাবকের দিকে তীর ছোড়েন বাদশা। মানবসন্তানের কান্নায় তিনি বুঝতে পারেন, চরম ভুল হয়ে গেছে। অভিশাপ নিয়ে রাজ্যে ফেরেন তিনি। এর মধ্যে পুত্র সন্তান ঘরে আসে তাঁর। রাজ্যজুড়ে যখন আনন্দের বন্যা, বাদশার মনে সন্তান হারানোর ভয়। মঞ্চ থেকে শোনা যায় গান ‘দিন যায় যায় যায় যায় দিন যায়/বছর ঘুরে গাছের পাতা রং যে বদলায়/রানি কাঁদে রাজা কাঁদে কাঁদে সারা বন/অন্ধকূপে বন্দী হলো গহর সনাতন।’ পুত্রকে প্রাসাদের বাইরে যেতে দেন না রাজা। কিন্তু শত আয়োজনেও বাদশাহ কি আটকে রাখতে পারে তার নিয়তি। বার বছর বয়সে বিশ্বিং যখন বড় ছেলে গহরকে রাজ্যের অধিপতি করে, তখন উজিরের চক্রান্তে গহর আবদার করে গিলামাইট বনে শিকার করতে যাবে। মায়ের আকুতি, স্ত্রী কলাবতীর মিনতি সব এড়িয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী সরাবনকে বাবা ও মায়ের দায়িত্ব দিয়ে গহর যায় শিকারে। গিলামাইট বনে গিয়ে গহর বন্দি হয় বিশ্বিং দানবের হাতে। অবশেষে বহু যুদ্ধ ও সংগ্রামের পর সে বনের বানেছা পরীকে নিয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে দেখে রাজ্য উজিরের দখলে। অবশেষে তার বুদ্ধি ও মেধা দিয়ে জয় করে তার রাজ্য। সত্যের জয় অবধারিত, তাই সকল বাধা পেরিয়ে গহর পরিশেষে জয় করে বিশ্বিংরাজ্য। জয় হয় প্রেমের, জয় হয় সত্যের, জয় হয় সুন্দরের। মৈমনসিংহ গীতিকার বিখ্যাত লোকগাঁথা ‘গহর বাদশা বানেছা পরী’ অবলম্বনে বিন্যাস্ত হয়েছে প্রযোজনাটির কাহিনী। নাটকটির পুনর্কথনের পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন হৃদি হক। নাটকটিতে বানেছা পরীর চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন তিনি। দর্শকদের কাছে সেটা প্রশংসিতও হয়েছে। লোকজধারার এ নাটকটিতে কিছুটা আধুনিকতার ছাপ ছিল, যেন দর্শক পছন্দ করেছে। প্রতিটি চরিত্রের পোষাক ছিল কালারফুল। নাচ-গানের কমতি ছিল না। নাটকটির মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন সাজু খাদেম, সঙ্গীত ও আবহ সঙ্গীতে ছিলেন কামরুজ্জামান রনি। আলো পরিকল্পনায় ঠান্ডু রায়হান, কোরিওগ্রাফি করেছেন ওয়ার্দা রিহাব, পোশাক পরিকল্পনা মাহমদুল হাসান। প্রায় ৬০ জনের একটি দল এ নাটকে কাজ করছে। নির্দেশনার ক্ষেত্রে বাংলার ঐতিহ্যবাহী নাটকের সঙ্গে ফিউশন ব্যবহার করা হয়েছে। সেট, আলোক, পোশাক ও সঙ্গীতে নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছেন নবীন এ নির্দেশক।
×