ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা-বরিশাল রুটে নৌযান জোয়ারের ওপর নির্ভরশীল ॥ নাব্য সঙ্কট

লঞ্চের সিডিউল বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৭ অক্টোবর ২০১৫

লঞ্চের সিডিউল বিপর্যয়

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ শুকনো মৌসুম আসতে না আসতেই ঢাকা-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ১২টি নৌরুটে নাব্য সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি পয়েন্ট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নৌযানগুলোও তাদের নির্ধারিত সিডিউল রক্ষা করতে পারছে না। ফলে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে নৌযানগুলোকে। নাব্য সঙ্কট দূর করতে নামেমাত্র ড্রেজিং করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নাব্য সঙ্কটের কারণে বরিশাল নদী বন্দর থেকে রবিবার রাতে ঢাকাগামী ৫টি লঞ্চ ৮ হাজার যাত্রী নিয়ে আটকা পড়েছিল। ওইদিন রাত নয়টার মধ্যে সব লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও একটি লঞ্চও রাত দশটা পর্যন্ত ছেড়ে যেতে পারেনি। নির্ধারিত সময়ের আগে পন্টুন এলাকায় পানি কমে যায়। যাত্রী বোঝাই লঞ্চগুলো আটকে পড়ায় সঠিক সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে পারেনি। নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ আবুল বাশার মজুমদার বলেন, নদীতে জোয়ারের পানি বাড়ার পর রাত সাড়ে দশটার দিকে লঞ্চগুলো ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে কয়েকদিন পূর্বেও পন্টুন ও ডুবোচরের এলাকায় ড্রেজিং করা হয়েছে। নামেমাত্র ড্রেজিংয়ের ফলে কয়েকদিনের ব্যবধানেই লঞ্চগুলো আটকা পড়েছে। সুরভী লঞ্চের পরিচালক রেজিন-উল কবির বলেন, শনিবার রাতে তাদের এবং সুন্দরবন নেভিগেশনের দুটি লঞ্চ মিয়ারচরে এক ঘণ্টা আটকে ছিল। তিনিও ড্রেজিং নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, শীত মৌসুমে কুয়াশার চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠবে নদীর ডুবোচরগুলো। এতে করে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এমভি বাগেরহাট-২ লঞ্চের মাস্টার সোহরাব হোসেন জানান, সম্প্রতি গলাচিপা থেকে সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা তাদের লঞ্চটি বিকেলে পটুয়াখালী শহর সংলগ্ন লোহালিয়া নদীর (জৈনকাঠি এলাকার) মোড়ে নাব্য সঙ্কটের কারণে আটকে যায়। ওইদিন রাত একটার দিকে নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর লঞ্চটি ছাড়া পায়। ঢাকা-পটুয়াখালী রুটের কুয়াকাটা-১ লঞ্চের মাস্টার মোঃ ইব্রাহিম জানান, এ রুটের বিভিন্ন পয়েন্টে নাব্য সঙ্কট আর ডুবোচর থাকলেও পটুয়াখালীর অংশে তা মারাত্মকভাবে লঞ্চ চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করছে। তিনি আরও জানান, পটুয়াখালী লঞ্চ ঘাটের আশপাশ, লোহালিয়া ও লাউকাঠী নদীর একাধিক স্থান, বগার আগে পালেরডাঙ্গা, ঝিলনা, কবাই, তাপালকাঠী, শশীর মোড় এলাকায় নাব্য সঙ্কট চরম আকার ধারন করছে। এসব স্থানে মাঝে মধ্যে দুই থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত পানি থাকে। এ সময় লঞ্চ চলাচলে মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। একই অভিযোগ সুন্দরবন-৫ ও ৬ লঞ্চের মাস্টার নজরুল ও মজিবুর রহমানের। অপরদিকে ডুবোচর আর নাব্য সঙ্কটের কারণে শুধু লঞ্চ চলাচলই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। একই সঙ্গে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের লেবুখালী ফেরিঘাটে চলাচলরত ফেরিগুলো। ফেরির ইজারাদার সুমন মিয়া বলেন, লেবুখালী ফেরিঘাটের উত্তরপাড়ের একাধিকস্থানে ডুবোচর আর নাব্য সঙ্কটের কারণে প্রায়ই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এটা এখন নিয়মিত রুটিনে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করে তিনি আরও বলেন, এখানকার ফেরি চলাচল নির্ভর করে জোয়ারের ওপর। কারণ ভাটার স্রোতে পানি কমে যাওয়ায় ফেরি চলাচল করতে না পারায় স্বাভাবিক কারণেই ফেরি বন্ধ রাখতে হয়। পটুয়াখালীর নৌবন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, জেলার অভ্যন্তরীণ ১২টি রুটের ১২টি পয়েন্টে সাত হাজার আট শ’ মিটার ড্রেজিং অতি জরুরী ভিত্তিতে করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই ড্রেজিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে এসব রুটে নিয়মিত চলাচলকারী লঞ্চগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
×