ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয়পক্ষ আদায় করবে ব্যাংক ঋণ, বিনিময়ে কমিশন

মন্দ ঋণ আদায়ে নতুন আইন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৯ অক্টোবর ২০১৫

মন্দ ঋণ আদায়ে নতুন  আইন হচ্ছে

রহিম শেখ ॥ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবলোপনকৃত ও মন্দমানের খেলাপী ঋণ আদায়ে এবার ডেট রিকভারি আইন করা হচ্ছে। নতুন আইনে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে ডেট রিকভারি এজেন্ট বা তৃতীয়পক্ষ নিয়োগের বিধান থাকবে, যারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হয়ে অবলোপনকৃত ও মন্দমানের খেলাপী ঋণ আদায় করে দেবে। বিনিময়ে তারা নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন পাবে। এছাড়া আইনে ডেট রিকভারি এজেন্ট নিয়োগ, ব্যাংকের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক, তাদের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেবে। আইনটির খসড়া প্রণয়নে সম্প্রতি ১৩ সদস্যের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে ডেট রিকভারি আইনের খসড়া প্রণয়ন করে তা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য নিয়মিত মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে মন্দমানের খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৮১ কোটি টাকা। এছাড়া অবলোপনকৃত মন্দ ঋণ রয়েছে আরও ৩৭ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে ব্যাংকিং খাতে মোট অনাদায়যোগ্য খেলাপী ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭৯ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক এই পাঁচ ব্যাংকে সবচেয়ে বেশি অবলোপনকৃত ও মন্দ ঋণ রয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মন্দ ঋণ রয়েছে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। সূত্র বলছে, বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, তদবির ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এসব ঋণ বের করে নেয়া হয়েছে, যা বছরের পর বছর ঋণখেলাপীদের কাছে আটকে আছে। এক্ষেত্রে ঋণ আদায়ের প্রচলিত সব পদ্ধতি প্রয়োগ করেও তা আদায় করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় ডেট রিকভারি আইন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ১ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ ধরনের আইনের খসড়া প্রণয়নে কমিটি গঠনের অফিস আদেশ জারি করা হয়। কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একজন করে প্রতিনিধি রাখার কথা বলা হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মানিক চন্দ্র দেকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। সূত্র বলছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যারা রিকভারি এজেন্ট হবে তাদের রেগুলেটেড প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এনজিওদের ক্ষেত্রে রিকভারি এজেন্টেদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি করা হতে পারে। জানা গেছে, বিশ্বের অনেক দেশেই ডেট রিকভারি এজেন্টের মাধ্যমে এসব ঋণ আদায় করা হয়। এর জন্য নির্দিষ্ট আইন, পদ্ধতি ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে তা নেই। তবে বাংলাদেশের জন্য এ ধরনের আইডিয়া একেবারে নতুন নয়। সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে এ ধরনের এজেন্ট তৈর হয়েছে, যারা কালেকশন সার্ভিস দেয়। বিভিন্ন সময়ে সরকারী-বেসরকারি কিছু ব্যাংক নিজেদের উদ্যোগে তৃতীয়পক্ষ দিয়ে এসব ঋণ আদায়ের চেষ্টাও করেছে। কিন্তু তৃতীয়পক্ষ নিয়োগ, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে সঠিক আইনী কাঠামো না থাকায় এই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে এসব ঋণ আদায়ে এজেন্ট, ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। আবার ব্যাংক কর্তৃক এজেন্টকে কমিশন বুঝিয়ে না দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এজন্য নতুন আইনে সঠিক পদ্ধতিতে ডেট রিকভারি এজেন্ট নিয়োগ ও তাদের কমিশন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। আবার এজেন্টরা যাতে ব্যাংক গ্রাহকের সঙ্গে অসদারচরণ করতে না পারে সে দিকটিও গুরুত্ব পাবে। ফলে এটা ব্যাংক গ্রাহকদের সুরক্ষায়ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়ে কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ঋণ আদায়ের নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও আইনী কাঠামো রয়েছে। যারা এ কাজগুলো করে তাদের কোড অব এথিক্স রয়েছে। কী করা যাবে, কী করা যাবে না তার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে তা নেই। এক্ষেত্রে তৃতীয়পক্ষ কাস্টমারের সঙ্গে খারাপ আচরণও করতে পারে। কিন্তু আইন হয়ে গেলে সেটা করার সুযোগ থাকবে না। এটা কাস্টমারের জন্য পজেটিভ সাইড। তিনি জানান, বেশিরভাগ দেশে এক্ষেত্রে দুটো পদ্ধতি অবলম্বন করতে দেখা গেছে। প্রথমটি হলোÑ ব্যাংকের পক্ষে তৃতীয় কোন প্রতিষ্ঠানকে ডেট রিকভারি এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা, যারা নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে ব্যাংকের এ ধরনের ঋণ আদায় করে দেবে। অপরটি হলোÑ ডেট রিকভারি এজেন্ট প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের পাওনা ঋণগুলো কম টাকায় সমঝোতার ভিত্তিতে কিনে নেবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রথম পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। এর আলোকে খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছে।
×